Advertisement
E-Paper

সফিনাকে ঘরে ফেরালেন দাস দম্পতি

মাঝের বছর সাতেক কোথায় ছিলেন, কী ভাবে কাটিয়েছেন মনে করতে পারেন না সফিনা। বছর পাঁচেক আগে তাঁকে কীর্ণাহারের বাজার-বাসস্ট্যান্ডে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন এলাকাবাসী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:০০
 ফেরা: ছেলেদের সঙ্গে ঘরে ফিরে যাওয়ার আগে দাস দম্পতির সঙ্গে সফিনা। নিজস্ব চিত্র

ফেরা: ছেলেদের সঙ্গে ঘরে ফিরে যাওয়ার আগে দাস দম্পতির সঙ্গে সফিনা। নিজস্ব চিত্র

সম্পর্ক জাত দেখে না।

এক-দু’দিন নয়, টানা পাঁচ বছর একই ছাদের তলায় মানসিক বিকারগ্রস্ত সফিনা বিবিকে পরিবারের এক জন করে রেখে দিয়েছিলেন বীরভূমের কীর্ণাহারের দাস দম্পতি। তাঁদেরই ছেলের উদ্যোগে মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে সফিনাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন আত্মীয়েরা। যাওয়ার আগে সফিনা বললেন, ‘‘বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরছি।’’

পরিবার জানাচ্ছে, বসিরহাটের চণ্ডীগড়ি গ্রামের বাসিন্দা সফিনার স্বামী লিয়াকত গাজি ইটভাটায় কাজ করতেন। এখন শয্যাশায়ী। বাড়িতে চার ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছিলেন বছর পঞ্চাশের সফিনা। আগেও অনেকবার বাড়ি ছেড়েছেন। তবে দু’চার দিনে ফিরেও এসেছেন। বারো বছর আগে অবশ্য তা হয়নি। সেই থেকে অনেক খুঁজেও সফিনার সন্ধান পাননি আত্মীয়েরা।

মাঝের বছর সাতেক কোথায় ছিলেন, কী ভাবে কাটিয়েছেন মনে করতে পারেন না সফিনা। বছর পাঁচেক আগে তাঁকে কীর্ণাহারের বাজার-বাসস্ট্যান্ডে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন এলাকাবাসী। কেউ হয়তো কখনও তাঁকে খুচরো আট আনা-এক টাকা দিয়েছেন, কেউ দিয়েছেন মুড়ি-রুটি। সে ভাবেই কাটছিল দিন।

দিন বদলাল পূর্বপট্টিতে এসে। দাসবাড়ির সামনের বাঁধানো পুকুরের ঘাটে অশক্ত অবস্থায় সফিনাকে শুয়ে থাকতে দেখে দু’বেলা খাবার দিতে শুরু করেন অপর্ণা দাস। স্ত্রী-র সহমর্মিতা দেখে দিন পাঁচেকের মাথায় সফিনাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন পেশায় গৃহশিক্ষক স্বামী দেবু দাস। সে সময় কোনও মতে নিজের নামটুকু বলেছিলেন সফিনা। ভিন‌্-ধর্ম জেনেও অস্বস্তিতে পড়েননি দাসেরা। বরং বাড়ির লোকের মতোই রেখেছিলেন সফিনাকে। আশ্রয় পাওয়ার মাস তিনেক পর থেকে দেবুবাবুকে ‘দাদা’, অপর্ণাদেবীকে ‘বোন’ বলে ডাকতে শুরু করেন সফিনা। আর নিজে বাকিদের কাছে হয়ে ওঠেন ‘মাসি’।

দাস দম্পতি জানাচ্ছেন, হাতে-হাতে টুকটাক বাড়ির কাজ সেরে এলাকায় ঘুরতে বেরোতেন তাঁদের ‘বোন’। গন্তব্য— মসজিদ, বাজার বা মাঠ। সন্ধ্যা হতেই অবশ্য বাড়িতে।

মাস তিনেক আগে স্মৃতি ফেরে সফিনার। জানান, স্বামীর নাম-ধাম-পরিবারের কথা। অপর্ণাদেবী-দেবুবাবুর ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং-পড়ুয়া শঙ্খচূড় ‘মাসি’র ছবি-সহ যোগাযোগ করেন বসিরহাট থানার সঙ্গে। সেখান থেকে খবর পেয়ে এ দিন দেবুবাবুর বাড়িতে আসেন সফিনার দুই দাদা— মিয়ারাজ ও শাহিদুল মণ্ডল এবং দুই ছেলে— আয়ুব আর ইউসুফ গাজি।

শাহিদুল, মিয়ারাজেরা বলেন, ‘‘দেবুবাবুরা বোনের মতো যত্নেই রেখেছিলেন বোনকে।’’ ইউসুফ আর আয়ুব জু়ড়ছেন, ‘‘মা-কে ফিরে পেলাম দেবুমামাদের জন্য।’’ মুখে হাসি, চোখ ভেজা। দাস দম্পতি বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে, আপনার জন দূরে চলে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে নিশ্চয়ই ভাল থাকবে বোন।’’ আর সফিনা? গাড়িতে ওঠার আগে বলে গেলেন, ‘‘দাদা-বৌদিকে বলেছি, ‘বিজয়ার পরে আমার বাড়িতে এসো কিন্তু’।’’

Humanity Hindu Muslim Mentally Disbalance বীরভূম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy