Advertisement
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Bishnupur

ঐতিহ্যের টিলায় কোদালের কোপ

বছর খানেক আগে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে ওই টিলা কাটা হচ্ছিল। সে সময় টিলার তলায় প্রাচীন ইটের কোনও নির্মাণের একাংশ বেরিয়ে আসে। সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায়।

Bishnupur

কালাচাঁদ মন্দিরের কাছে টিলা কাটা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০২
Share: Save:

এক দিকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সংরক্ষিত মন্দিরের কাছে তৈরি করা ‘অবৈধ’ লজ ভাঙছে বিষ্ণুপুর পুরসভা। তখন শহরেরই অন্য প্রান্তে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সংরক্ষিত কালাচাঁদ মন্দিরের কাছে প্রাচীন টিলা কাটা চলছে অবাধে। একই সঙ্গে শনিবার দুই ভিন্ন ছবি ধরা পড়ল মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরে। এ ভাবে প্রকাশ্যে বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী টিলাগুলি একের পর এক উধাও হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। তবে এ দিন প্রশাসনিক মহল সক্রিয় হওয়ায় শেষ পর্যন্ত টিলা কাটা বন্ধ করা হয়। এ দিন চেষ্টা করেও ওই টিলার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে ওই টিলা কাটা হচ্ছিল। সে সময় টিলার তলায় প্রাচীন ইটের কোনও নির্মাণের একাংশ বেরিয়ে আসে। সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায়। খবর পেয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা মাটি কাটা বন্ধ করে দেন। সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল ওই টিলা। তবে টিলার তলায় থাকা প্রাচীন নির্মাণ নিয়ে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান হয়নি। শুক্রবার সেই টিলাতেই কোপ পড়তে শুরু করে কোদালের। শনিবার বিষ্ণুপুর কালাচাঁদ মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কোদাল, গাঁইতি দিয়ে টিলা কেটে মোরাম নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, ‘‘কাটতে বলেছে, তাই কাটছি।’’ কে কাটতে বলেছে, জানতে চাওয়ায় সদুত্তর মেলেনি।

স্থানীয়েরা জানান, ইতিহাসের শহর বিষ্ণুপুরের সঙ্গে টিলাগুলি জড়িয়ে রয়েছে। পর্যটকদের কাছে এর আকর্ষণ রয়েছে। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে গবেষকদের কাছে। কিন্তু মাটি মাফিয়ারা টিলা কেটে মোরাম চড়া দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তারপরে সেই ফাঁকা জায়গায় ঘরবাড়ি গজিয়ে উঠছে। এতে বিষ্ণুপুরের সৌন্দর্য হারাচ্ছে। অথচ অধিকাংশ সময়ে টিলা বাঁচাতে প্রশাসনের উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

এর সঙ্গে অসাধু চক্র জড়িত থাকার আশঙ্কায় শুক্রবার থেকে টিলা কাটা চলছে দেখেও স্থানীয়দের অনেকে চুপ করে ছিলেন। কেউ কেউ দাবি করেন, থানায় জানিয়েছেন, মহকুমা প্রশাসকের দফতরেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত এ দিন বলেন, “খবর পেয়েই ওই টিলা কাটা বন্ধ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে ভূমি দফতরকে। সেই রিপোর্ট পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণে পাঠানো হবে। তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

বিষ্ণুপুরের মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “কর্মীদের সেখানে পাঠিয়ে প্রাথমিক ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে টিলাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। তবে সেই টিলার এক পাশে ইটের প্রাচীন কোনও নিদর্শন থাকায়, মাটি কাটা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তা অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”

একই সঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও ব্লক ভূমি দফতরের অনুমতি ছাড়া টিলা কাটা যায় না। তাতে জমির চরিত্রের বদল হয়। আর বিষ্ণুপুরের টিলাগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকায় এ ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE