Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Birbhum

পাকা বাড়ি মেলেনি, দুর্যোগের রাতে ছাড়তে হয় ঘর

স্থানীয় বাসিন্দা  সোমনাথ হাজরা, মিলন হাজরা, মোহন হাজরা, মহাদেব রুইদাস, গৌতম রুইদাসদের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের মতো গরিব মানুষ যদি সরকারি আবাস যোজনার সুযোগ না পান তাহলে কাদের জন্য এই প্রকল্প?’’

ভগ্নদশা: এমনই অবস্থা মাটির বাড়ির। নিজস্ব চিত্র

ভগ্নদশা: এমনই অবস্থা মাটির বাড়ির। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৭
Share: Save:

পাকা বাড়ি নেই। সরকারি আবাস যোজনার সুবিধাও মেলেনি। বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি আগেই ভেঙেছে। যে কটি মাটির বাড়ি জীর্ণ অবস্থায় টিকে রয়েছে, চলতি বর্ষায় সেখানে রাত কাটানো দুশ্চিন্তার। এই বুঝি ধসে পড়ল! এমনই অভিযোগ দুবরাজপুরের পদুমা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কল্যাণপুর গ্রামের হাজরা পাড়া, দাসপাড়ার কম বেশি ৩৫টি পরিবারের সদস্যদের।
স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ হাজরা, মিলন হাজরা, মোহন হাজরা, মহাদেব রুইদাস, গৌতম রুইদাসদের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের মতো গরিব মানুষ যদি সরকারি আবাস যোজনার সুযোগ না পান তাহলে কাদের জন্য এই প্রকল্প?’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পদুমা গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই পাড়ায় বেশ কিছু তফশিলি জাতিভুক্ত পরিবারের বাস। অধিকাংশই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। ওই পরিবারগুলির কিছু বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি পেলেও কমপক্ষে ৩০-৪০টি পরিবার করুণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় দুচারটি ত্রিপল মিললেও সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি অর্থবর্ষে বরাদ্দ বাড়ি তৈরি হলেই কাগজে কলমে একটিও কাঁচা বাড়ি থাকার কথা নয়। বাস্তব অবশ্য তার সঙ্গে মেলে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এমন কিছু পরিবার রয়েছে যাদের বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় হয় পরিবারের সদস্যরা কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে, গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বারান্দায় বা পাড়ার ক্লাবে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। দিনের বেলায় রাস্তায় জল বাড়িতে ঢোকে। রাতে বৃষ্টি হলে আতঙ্কে ছাতা মাথায় রাত কাটে। কিন্তু প্রশাসনকে বলেও অবস্থা বদলায়নি। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকারি আবাস যোজনায় এক লক্ষেরও বেশি বাড়ি তৈরি হচ্ছে জেলায়। আগের বারও প্রচুর বাড়ি এসেছে বলে শুনেছিলাম। কিছু মানুষ বাড়ি পেয়েছেন। কিন্তু বাড়ি প্রাপকদের তালিকায় নাম আছে অনেকে তাও জানেন না। না থাকলেও কেন নেই সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে আর্থ সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষা অনুয়ায়ী যে সকল পরিবারের পাকা বাড়ি নেই সেগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কেন্দ্র ও রাজ্যের অংশীদারিত্বে বাংলা আবাস যোজনা নামক এই প্রকল্প রূপায়ণে প্রতি বছর গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর সংখ্যক বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলা ব্লক, ও পঞ্চায়েত ভিত্তিক কোটা অনুযায়ী প্রায়োরিটি বেসিসে তালিকা তৈরি করে বাড়ি তৈরি হয়। ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত বিশিষ্ট দুবরাজপুর ব্লকে চলতি অর্থবর্ষে মোট ৪০৬৬টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন এসেছে। পদুমা গ্রাম পঞ্চায়েতে বরাদ্দ ৩৬১।
বিডিও অনিরুদ্ধ রায় বলছেন, ‘‘ওই তালিকায় ওই পরিবারগুলির নাম নেই। হতে পারে সমীক্ষার সময় কোনও ভাবে ওই পরিবারগুলি বাদ গিয়েছিলেন। অথবা পরবর্তীতে মূল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন করে পরিবার বেড়েছে। ঠিক কী হয়েছে বিশদে খোঁজ নিতে হবে। গীতাঞ্জলি প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে ওই প্রকল্পে কোনও বাড়ির অনুমোদন নেই। আপাতত ত্রিপল দিয়েই কাজ চালাতে হবে।’’ পদুমা পঞ্চায়েতের প্রধান গীতারানি ডোম বলছেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় গত কয়েক বছরে ১৪০০ নতুন বাড়ি তৈরি হয়েছে সরকারি আবাস যোজনায়। তবে এটাও ঠিক তালিকায় নাম না থাকায় গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় বেশ কিছু গরিব পরিবার বাদ থেকে গিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum Dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE