চলছে বিকিকিনি। তারাপীঠে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা থেকে আনা হবে প্রায় আড়াই লক্ষ! তারাপীঠের আশেপাশের গ্রাম থেকে আসা আরও দু’লক্ষ তো রয়েছেই। বিচ্ছিন্ন ভাবে রয়েছে আরও হাজার পঞ্চাশেক! আজ, কৌশিকী অমাবস্যায় অন্তত পাঁচ লক্ষ রক্তজবার চাহিদা রয়েছে বলে জানালেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
আর দাম?
অন্য দিনগুলোয় ১০৮টি ফুলের মালা বিক্রি হয় চল্লিশ থেকে ষাট টাকায়। কৌশিকী অমাস্যায় সেই দাম কিছুটা বাড়ে। মঙ্গলবার আশি থেকে একশো টাকায় ওই মালা বিক্রি হয়েছে। আজ, চাহিদার কারণে দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে মত ব্যবসায়ীদের।
জবা ফুলের সঙ্গে দেবীর যোগ বহু পুরনো। পুরাণ থেকে নানা শাস্ত্রে রক্তজবা সহকারে পুজোর প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। রামপ্রসাদ থেকে কমলাকান্ত— নানা শাক্ত-সঙ্গীতেও বারে বারে ফিরে ফিরে এসেছে জবার আখ্যান। তারাপীঠে প্রতিদিন অন্তত আড়াই লক্ষ জবাফুলের চাহিদা থাকে। কৌশিকী অমাবস্যার সময় সেটা প্রায় দ্বিগুণ হয়।
তারাপীঠে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে জবা ফুল সরবরাহ করছেন ময়ূরেশ্বর থানার সন্ধিগড়া বাজার এলাকার নিখিল হাজরা। জানালেন, প্রথম প্রথম এলাকা ঘুরে ঘুরে জবা ফুল সংগ্রহ করে মন্দিরে জোগান দিতেন। পরে নিজের পাঁচ বিঘে জমিতে জবার চাষ শুরু করেন। চাহিদা ক্রমশ বাড়তে থাকায় কলকাতা থেকে জবা ফুল আমদানি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘কৌশিকী অমাবস্যার দিনে প্রায় এক লক্ষ জবা ফুল কলকাতা থেকে নিয়ে আসব।’’ বেশ কিছু ফুল আনার বরাত রয়েছে বরশালের মাধাই প্রামাণিক-সহ অনেকেরই।
ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তারাপীঠ সংলগ্ন গ্রাম কড়কড়িয়া, দেখুড়িয়া, বিলাসপুর, উদয়পুর, বড়শাল, গোপালপুর, খরুণ, স্বর্গপুর, মহেশপুর, ঘোষগ্রাম, রামভদ্রপুর, বীরভূম লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলার শীতলগ্রাম এলাকায় জবা ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। ওই সমস্ত গ্রাম থেকেই বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দু’লক্ষ জবা ফুল তারাপীঠে আমদানি হয়। ব্যবসায়ীরা জানালেন, সে কারণেই এখন কিছুটা হলেও কলকাতা থেকে কম জবা আনতে হয়।
এ দিকে, কৌশিকী অমাবস্যার জন্যে কলকাতার বাজারেও জবা ফুলের দাম বেশি। অন্য সময়ে ২৫০ টাকায় মেলে এক হাজার জবা ফুল। এখন দাম কিছুটা বেড়েছে। শাল পাতায় মুড়ে চট জড়িয়ে তাতে বরফ দিয়ে আনতে হয় সেই ফুল। কাকভারে রামপুরহাট স্টেশন থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে বর্ধমান পৌছে ট্রেন পাল্টে হাওড়া পৌঁছতে হয়। ফেরার সময় ভরসা শহিদ এক্সপ্রেস।
তখন রাত সাড়ে ন’টা। কৌশিকী অমাবস্যায় উপলক্ষে থিকথিকে ভিড় রামপুরহাট স্টেশন চত্বরে।— সব্যসাচী ইসলাম।
নিখিল, মাধাইরা লক্ষ লক্ষ ফুল তারাপীঠে আমদানি করলেও ময়ূরেশ্বর থানার ঘোষগ্রাম এলাকায় খুব কম করেও পঞ্চাশ ঘরে জবা ফুল চাষ হয়। সেখান থেকে তারাপীঠে রোজ প্রায় দু’হাজার ফুল আসেন নিয়ে আসেন মৃণাল মণ্ডল। ওই একই থানার রামভদ্রপুর এলাকার একাদশ শ্রেণির ছাত্র অমৃতলাল ফুলমালি, রামপুরহাট থানার কড়কড়িয়া গ্রামের নিমাই মণ্ডল প্রায় তিন দশক ধরে জবার জোগান দিয়ে আসছেন।
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছে তারাপীঠে। বেড়েছে মালার চাহিদাও। খুচরো ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বছরের অন্য দিন ১০ টাকা দামের মালার চাহিদা থাকলেও কৌশিকী অমাবস্যায় ১০৮টি জবা ফুলের মালার চাহিদা বেশি। ফুলের মানের উপরে নির্ভর করে সেই মালা ৫০ থেকে ১০০ টাকায় ঘোরাফেরা করে।
হুগলির কোন্নগর থেকে প্রতি অমাবস্যায় তারাপীঠে আসেন পেশায় ঠিকাদার বিজন ভট্টাচার্য। তিনি বললেন, ‘‘এই সময় একটু মালার দাম বেশি। তবে অন্য জায়গার চাইতে মালার দাম এখানে কম।’’
এ দিকে, তারাপীঠে ফুল বিক্রেতাদের নিজস্ব কোনও স্টল নেই। তাঁদেরকে ব্যবসার জন্যে পুজোর অন্য সামগ্রী যাঁরা বিক্রি করেন, তাঁদের উপরে নির্ভর করতে হয়। তবুও তারাপীঠে কেবল মাত্র জবা ফুল বিক্রি করেই সংসার চলে শঙ্কর, নিমাই, বিভাস, অশোকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy