কড়ি ফেললেই! নলহাটি পুরসভার কাছে তোলা নিজস্ব চিত্র।
চিত্র ১: শহরের অদূরে গ্রামের পানের গুমটিই হোক বা বন্ধ কোনও দোকান। দোকানের আশপাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। পরনে যা-ই থাকুক না কেন, লোকটির ঘাড়ে অবশ্যই থাকবে একটি গামছা। সামান্য ইশারাতেই তিনি দেখিয়ে দেবেন তার হাতযশ।
চিত্র ২: শহরের কোনও দোকান খোলা নেই। অনেকেই যোগাযোগ করছেন রিকশা চালকদের একাংশের সঙ্গে। তিনি-ই তখন যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে তাঁদের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে, এ ভাবেই এলাকায় এলাকায় তত বাড়ছে বেআইনি মদের বিক্রি। শহরে, গ্রামের আনাচে কানাচে বেআইনি ভাবে বিক্রি হচ্ছে চোলাই, দেশি থেকে বিলিতি মদ। সবই পাওয়া যাবে, শুধু মুখ খুললেই হল। অথচ দু’দিন আগেই পূর্ব মেদিনীপুরে ফের বিষাক্ত চোলাই খেয়ে ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর পরেও পুলিশ-প্রশাসনের যে বিন্দু মাত্র টনক নড়েনি, নলহাটি ও রামপুরহাট থানা এলাকার বিভিন্ন প্রান্তেই তার নমুনা দেখতে পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ দিকে, সমস্যা হল, কম টাকায় নেশার এই বেআইনি উৎসের রমরমা যত বাড়ছে, গ্রাম, মফস্সলের যুব সমাজ ক্রমেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এলাকায় বাড়ছে ঝামেলা, সংসারে লাগছে অশান্তি। এই মদের জন্যই পাড়ায় ছোট ছোট বিষয় নিয়ে লাগছে গণ্ডগোলও। এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের গাছাড়া মনোভাব দেখে সম্প্রতি নলহাটি থানার শিমলান্দি গ্রামের এবং রামপুরহাট থানার বৈধড়া গ্রামের মহিলারা নিজেরাই এগিয়ে এসে এলাকার চোলাই তৈরির ভাটি ভেঙে দিয়েছিলেন। কিন্তু, তার পরেও ওই এলাকায় চোলাই তৈরি হচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও তারাপীঠে বিষমদ খেয়ে মারা গিয়েছিলেন সাত জন। সেখান থেকে শিক্ষা নেয়নি প্রশাসন। চোলাই ভাটি ভাঙার অভিযানে সামিল দুই মহিলার মতে, ‘‘আসলে যারা আইন ভাঙছে আর যারা আইনের রক্ষক, দুই পক্ষের মধ্যেই রয়েছে অর্থনৈতিক সমঝোতা। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওরা একে অপরকে রক্ষা করার কাজ করেন। তা না হলে দিনের পর দিন কোথাও বেআইনি মদের ব্যবসা চলতে পারে না বলেই আমরা মনে করি।’’
যে কারণেই হোক না কেন, পুলিশ-প্রশাসন যে এ ক্ষেত্রে শিক্ষা নেয় না, তার প্রমাণ অতীতেই রয়েছে। ফলে বাসিন্দাদের পাশাপাশি ওই বেআইনি কারবার রুখতে এগিয়ে আসতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদেরও। সম্প্রতি নলহাটি থানার কুরুমগ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ওই কারবার রোখার দাবিতে জেলা আবগারি দফতর এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। সংস্থার পক্ষ থেকে সঞ্জীব সিংহ, সত্যব্রত মিত্র মজুমদার এবং পার্থ সিংহদের অভিযোগ, নলহাটি থানার তেজহাটি থেকে সরধা পর্যন্ত অসংখ্য ছোট বড় দেকানে বেআইনি ভাবে চেলাই থেকে সব রকম মদ পাওয়া যাচ্ছে। একই ভাবে নলহাটি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা পুরসভার পাশে বিক্রি হয় দেশি মদ। প্রতি দিন সকাল থেকে দুপুর, আবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সে সব বিক্রি চলে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নলহাটি বিডিও অফিসের পুরনো বাজার বসার জায়গায় হরেক রকমের মদের বোতল পড়ে থাকে। একই ভাবে নলহাটি পুরনো আউটডোরের (স্বাস্থ্যকেন্দ্র) সামনে পড়ে আছে দেশি মদের বোতল। দু’টি জায়গাতেই চলে বেআইনি মদের কারবার বলে বাসিন্দাদের দাবি। এমনকী, নলহাটি ও রামপুরহাট স্টেশন চত্বরের ছোট ছোট দু’-একটি খাবারের দোকানেও পেগ হিসেবে মদ বিক্রি হয় বলে অভিযোগ। সঞ্জীববাবুদের ক্ষোভ, ‘‘কখনও কখনও পুলিশ ধরে। কিন্তু, ছাড়া পেতেই ওরা একই কাজে লেগে যায়। আবার আবগারি বিভাগ থেকে ধরতে এলে আগাম খবর পেয়ে যায়। জিনিসপত্র লুকিয়ে ফেলে চম্পট দেয় মদ বিক্রেতারা।’’
কী করছে দফতর?
দফতরের জেলা আধিকারিক তপনকুমার রায় বলেন, ‘‘লাইসেন্সপ্রপ্ত দোকানের বাইরে কেউ মদ বিক্রি করতে পারেন না। গোটাটাই দণ্ডনীয় অপরাধ। তা রুখতে আমরা মাঝে মাঝেই এলাকায় এলাকায় রেড করি।’’ একই দাবি করেছেন দফতরের নলহাটি বিভাগের অধিকারিক অশোক দাসও। এ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy