ভাত, ডাল, আলুভাজা, ঢ্যাঁড়স ভাজা, লাউ-বড়ির তরকারি, মুরগির মাংস, আমের চাটনি, শেষ পাতে মিষ্টি দই ও রসগোল্লা। এ ভাবেই বছরের প্রথম দিন মধ্যাহ্ন ভোজ সারলেন ওঁরা। রোজ এই মেনু না থাকলেও পেট ভরে দুঃস্থদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ঝালদার একটি সংস্থা।
সেখান থেকে শনিবার বাড়ি ফেরার পথে ঝালদার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বুধি ধীবর কপালে হাত ছুঁইয়ে স্বগতোক্তি করলেন— ‘‘বেঁচে থাক বাবা। ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুন।’’ স্বামী উদ্ধব ধীবর চোখে দেখতে পান না। গোবর কুড়িয়ে ঘুঁটে তৈরি করে তা বেচেই কোনওরকমে দিন চলে তাঁদের। দু’বেলার খাবার ভাল করে জুটত না। নিখরচায় খাবারের এই হেঁশেলে বুধিদেবী প্রতিদিন স্বামীকে হাত ধরে নিয়ে আসেন। তাঁর মতো অনেকেই আছেন, যাঁদের দুপুরের খাবারের চিন্তার মুশকিল আসান হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন ঝালদার এই হেঁশেল চালানো সংস্থার লোকজন।
গত প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন থেকে ঝালদার অসহায় নিরন্ন মানুষজনদের জন্য শুরু হয়েছে দুপুরের এই হেঁশেল। ৫০ জনের বেশি বাসিন্দার জন্য প্রতিদিন দুপুরে ঝালদার এই সংস্থাটির উদ্যোগে এই হেঁশেলে চলছে রান্না। সংস্থার পক্ষে মহেন্দ্রকুমার রুংটা বলেন, ‘‘এলাকার প্রতিবন্ধী, হতদরিদ্র, নিঃসন্তান, বিধবা— যাঁদের এখন আর কাজ করে খাবার জোগাড় করার শক্তি নেই। এমনকী বাড়ি থেকেও অবহেলিত। এমন লোকজনদের জন্যই আমরা প্রতিদিন দুপুরে খাবার ব্যবস্থা করেছি।’’ মহেন্দ্রবাবু জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি ও চাটনি থাকেই। কোনওদিন মিষ্টি বা পায়েসও থাকে। রবিবার মাছ না হয় মাংস, কখনও ডিমের ঝোলও থাকে। আর অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় লুচি, তরকারি, বোঁদে।
কী ভাবে চলছে এই হেঁশেলের খরচ? উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, তাঁদের এই কর্মকাণ্ডের কথা জেনে অনেকে প্রতিমাসে কিছু কিছু করে অর্থ সাহায্য করছেন। আবার এমনও লোকজন আছেন, যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনের জন্মদিন বা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে বা বাড়ির অন্য কোনও উৎসব উপলক্ষ্যে হেঁশেলের একদিনের খরচ দিয়ে দেন। মহেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘পয়লা বৈশাখ আমাদেরই এক কর্মী সোমনাথ পোদ্দারের ছেলের জন্মদিন। তিনিই এ দিনের খাবারের খরচ দিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের সংস্থার প্রত্যেক কর্মীর অবদানও রয়েছে প্রতিদিনের এই আয়োজনে।’’ ঝালদার বাইরের মানুষও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ঝালদা ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লক্ষ্মী কান্দুর স্বামী গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। নিঃসন্তান এই প্রৌঢ়ার দিন চলে ভিক্ষা করে। টুলি বাগদির স্বামী ফণি বাগদি রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন পা ভেঙে প্রতিবন্ধী। তাঁদের দেখারও কেউ নেই। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের লতা চালক অনেকদিনই স্বামীকে হারিয়ে এখন অসহায়। দিল চালানোর সম্বল বলতে ভিক্ষে। তাঁদের মতো মানুষজন রোজ আসেন এখানে। তাঁদের কথায়, ‘‘এখানে দুপুরের খাবারটুকু রোজ জুটে যায়। বড্ড সুবিধা হয়েছে।’’
খাবার পরিবেশন করার মাঝে তপতী রুংটা, সোমনাথ পোদ্দার বলেন, ‘‘এই মানুষগুলো যখন তৃপ্তি করে খান, আমাদেরও তৃপ্তি লাগে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy