Advertisement
০৬ মে ২০২৪
কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে পথে বাম নেতা

মিছিলে হেঁটে ‘জোট’ বার্তা নেতৃত্বকে

বাম-কংগ্রেস সমঝোতার লক্ষ্য ছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া। বীরভূমে তারই পথে অন্তরায় ছিল দু’টি আসন। এ বার সেই আসনেই কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে পথে নেমে মিছিলে হাঁটলেন সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশ। যা বাম-কংগ্রেস জোটকেই আরও জোরাল করল বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

একজোট। শুক্রবার বিকালে রামপুরহাটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

একজোট। শুক্রবার বিকালে রামপুরহাটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:১০
Share: Save:

বাম-কংগ্রেস সমঝোতার লক্ষ্য ছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া। বীরভূমে তারই পথে অন্তরায় ছিল দু’টি আসন। এ বার সেই আসনেই কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে পথে নেমে মিছিলে হাঁটলেন সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশ। যা বাম-কংগ্রেস জোটকেই আরও জোরাল করল বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

সম্প্রতি সাঁইথিয়া কেন্দ্রে জট খুলেছে। কিন্তু, রামপুরহাট ও হাঁসনে এখনও রয়েছেন বাম ও কংগ্রেস, দু’তরফেরই প্রার্থী। এই অবস্থায় শুক্রবার রামপুরহাট ও হাঁসনে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে ডাকা মিছিলে হাঁটতে দেখা গেল জোনাল সম্পাদক-সহ একঝাঁক সিপিএম নেতা-কর্মীকে। ওই দুই আসনে বাম প্রার্থীদের নাম থাকা সত্ত্বেও এ ভাবে কংগ্রেসের মিছিলে হাঁটাকে যদিও ভাল চোখে দেখছেন না সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের একাংশ। সামনে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কেউ-ই মুখ খোলেননি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা সিউড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ ব্যাপারে যা বলার বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক মনসা হাঁসদাই বলবেন।’’ যোগাযোগ করা হলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে মনসা বলেন, ‘‘বাইরে আছি। কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে পরে বলব।’’

জোটের বার্তা যা-ই হোক, ঘটনাটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেই মন্তব্য করেছে ওই দুই আসনে প্রার্থী থাকা বামেদের দুই শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরসিপিআই। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রামপুরহাটে মহম্মদ হান্নানকে বামফ্রন্টের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তা আমাদের দলের একক সিদ্ধান্ত নয়। সেই প্রার্থীর বিরোধিতায় ফ্রন্টের কেউ হেঁটে থাকলে, তা দুর্ভাগ্যজনক। সব কিছুই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া উচিত ছিল।’’ হাঁসন কেন্দ্রের বাম প্রার্থী তথা আরসিপিআই-এর জেলা সম্পাদক কামাল হাসানের আবার দাবি, ফ্রন্টের বিক্ষুব্ধ কয়েক জন মাত্র হাঁসন কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করছেন। ফ্রন্টের অধিকাংশের সমর্থন তাঁর দিকেই রয়েছে। আজ, শনিবার বামফ্রন্টের ঘোষিত প্রার্থী হিসাবে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রের খবর, ফব-এর প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ হান্নানকে রামপুরহাট আসনে বামফ্রন্টের প্রার্থী করা হয়। তার পরে ওই আসনে জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। কিন্তু, নাম ঘোষণার পর থেকেই হান্নানে আপত্তি জানায় সিপিএমের একাংশ। তাঁদের দাবি, হান্নান লড়লে তৃণমূলের পক্ষে লড়াই অনেক সহজ হয়ে যাবে। বরং জিম্মি জোটের প্রার্থী হলে তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাই কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে জিম্মির নাম ঘোষণা হতেই হতাশ সিপিএম কর্মীদের একাংশ অনেকটাই উজ্জীবিত হয়েছিলেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। অন্য দিকে, বৃহত্তর লক্ষ্যে জোটের স্বার্থে হাঁসন কেন্দ্রে আরসিপিআই প্রার্থী কামাল হাসানের বদলে কংগ্রেস প্রার্থী মিলটন রশিদকেই সমর্থন করা দরকার বলে মত বামফ্রন্টের বাকি শরিকদের একাংশের।

ঠিক কী ঘটেছে এ দিন?

এ দিন বিকালে রামপুরহাটে কংগ্রেস প্রার্থী জিম্মির সমর্থনে কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি কর্মীদের নিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক কর্মী-সমর্থকদের একটি মিছিল বের হয়। তাতেই জিম্মির পাশে হাঁটতে দেখা যায় প্রায় ৫৩ বছরের বেশি বাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত খরুণ গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সনৎ কর্মকার থেকে সিপিএমের রামপুরহাট ১ জোনাল সম্পাদক দিলীপ মেহেনা, জোনাল কমিটির সদস্য নাজমুল শেখ, অজয় মণ্ডল, রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য এবং নারায়ণপুর অঞ্চলের প্রাক্তন প্রধান বিষ্ণু লেটেদের। কংগ্রেসের তরফে যাকে জোটের সমর্থনে মিছিল বলেই বর্ণনা করেছেন। একই ভাবে হাঁসন কেন্দ্রের মাড়গ্রামে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায় একাধিক সিপিএম, ফব কর্মী-সমর্থককে। কিছু দিন আগে তারাপীঠেও একই রকম মিছিল সংগঠিত হয়েছিল।

জিম্মিকে সমর্থন কেন? দিলীপবাবুদের বক্তব্য, ‘‘আমরা তৃণমূলকে হারানোর জন্য একজোট হয়েছি। সেখানে আমরা কোনও ভাবেই চাইব না তৃণমূল প্রার্থী হাসতে হাসতে জিতে যান। ওই আসনে জিম্মি জোটের প্রার্থী হলে তৃণমূলকে হারানো সম্ভব। তাই মিছিলে হেঁটেছি।’’ সনৎবাবু, বিষ্ণুবাবুদের দাবি, একই কারণে এলাকার বাম কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই হান্নানকে নয়, জিম্মিকেই জোটের প্রার্থী চান। প্রায় একই বক্তব্য সিপিএমের মাড়গ্রাম লোকাল সম্পাদক রবি মারজিতেরও। তাঁর জবাব, ‘‘যা করেছি, তৃণমূলকে হঠাতে করেছি।’’ কিন্তু দলের প্রার্থী থাকার পরেও কংগ্রেস প্রার্থীর প্রতি রাস্তায় নেমে এ ভাবে খোলাখুলি সমর্থনে কি দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ হচ্ছে না? দিলীপবাবুদের বক্তব্য, ‘‘যে আসনে যাঁর লড়াই দেওয়ার ক্ষমতা বেশি, তাঁরই প্রার্থী হওয়া উচিত। আমরা আমাদের আপত্তির কথা নেতৃত্বকে জানিয়েই মিছিলে হেঁটেছি।’’

বামেদের একাংশের সমর্থন যে তাঁরা পাবেন, তার দাবি আগেই করেছিলেন জিম্মি এবং মিলটন। এ দিন দু’জনেই বলেন, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট। মানুষের এই একতাই এ বার তৃণমূলকে হারাবে।’’ জোটের কথা মাথায় রেখে ফব বা আরসিপিআই, কেউ-ই এ দিনের ঘটনায় কংগ্রেসের দিকে আঙুল তোলেননি। তাঁদের ক্ষোভ, বামফ্রন্টেরই একাংশের বিরুদ্ধে। কামালের সুরেই রামপুরহাটের ফব প্রার্থী হান্নান এ দিন বলেন, ‘‘আমি বামফ্রন্টের বিশ্বস্ত সৈনিক। বামফ্রন্টের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের নির্দেশেই কাজ করে চলেছি। সেই মতো আজ, মনোনয়নপত্র জমা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 congress campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE