Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিষ্ণুপুরের চিঠি

বিষ্ণুপুরবিষ্ণুপুর বাংলার এক প্রাচীন জনপদ। হাজার বছরের বেশি সময় জুড়ে দীর্ঘ ইতিহাস এই শহরকে জড়িয়ে আছে। রাজকাহিনীর অনুষঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য ও সঙ্গীতের এক অনন্য মিশেল এখানে। মল্লরাজাদের মন্দির নির্মাণ, ধর্ম-সংস্কৃতির পরিশীলিত রূপায়ণ, কুটির শিল্প ও লোকশিল্পের ধারাবাহিকতা— সবই বিষ্ণুপুরের ভূমিকে মহিমা দিয়েছে। মন্দিরনগরী, সঙ্গীতনগরী, শিল্পনগরী, টেরাকোটার শহর-কত নাম এই শহরের।

বর্ষা-বেহাল। ঝাপড় মোড় থেকে কালীমেলা অবধি রাস্তা।

বর্ষা-বেহাল। ঝাপড় মোড় থেকে কালীমেলা অবধি রাস্তা।

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

পরিষেবার বড্ড অভাব

বিষ্ণুপুর বাংলার এক প্রাচীন জনপদ। হাজার বছরের বেশি সময় জুড়ে দীর্ঘ ইতিহাস এই শহরকে জড়িয়ে আছে। রাজকাহিনীর অনুষঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য ও সঙ্গীতের এক অনন্য মিশেল এখানে। মল্লরাজাদের মন্দির নির্মাণ, ধর্ম-সংস্কৃতির পরিশীলিত রূপায়ণ, কুটির শিল্প ও লোকশিল্পের ধারাবাহিকতা— সবই বিষ্ণুপুরের ভূমিকে মহিমা দিয়েছে। মন্দিরনগরী, সঙ্গীতনগরী, শিল্পনগরী, টেরাকোটার শহর-কত নাম এই শহরের। দশাবতার তাস, পট নির্মাণ, রাবনকাটা উৎসব, বাঘ ঝাপান পরব-এ সবই বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। রথযাত্রা, রাস উৎসব, হোলির গানও আছে বহুকাল ধরে। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ‘বিষ্ণুপুর মেলা’ ও ‘বিষ্ণুপুর উৎসব’ যা বিষ্ণুপুরের সঙ্গীত ও শিল্পের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও ঋদ্ধ করে চলেছে। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। অভিভূত হন। চলে যান। গবেষণার কাজে যাঁরা আসেন, তাঁদের কেউ কেউ কয়েকদিন থেকে যান। এ রাজ্যের পর্যটকরা এখানে দু’-একদিনের বেশি থাকেন না। বড় কারণ পরিকাঠামো। প্রাচীনতার সঙ্গে তাল রেখে আধুনীক সময়ের পর্যটকদের উপযোগী কোনও পরিষেবা শহরে আজও গড়ে ওঠেনি। পুরকৃতীগুলি সংস্কারের উদ্যোগ যেমন চোখে পড়ে না, তেমনই মল্লরাজাদের তৈরি পরিখা ও বাঁধগুলি ক্রমে ধ্বংশপ্রাপ্ত হয়ে চলেছে। ক্ষয়ে যাওয়া বহু নিদর্শনই অবলুপ্তির পথে। চওড়া রাস্তাঘাট নেই। পর্যটক শুধু নয়, বিষ্ণুপুর শহরের বাসিন্দারাও এই রাস্তাঘাট নিয়ে নাজেহাল। শহরের পথে শৌচাগারের অভাব। নেই পানীয় জলের খুব উন্নত পরিষেবা। পল্লিগুলিতেও জলের সে রকম ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। রাস্তায় পড়ে থাকা জঞ্জাল দৃষ্টিদূষণ ঘটাচ্ছে। শহরের কেন্দ্রগুলিতে রাস্তা এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ি বা দোকানের উঠোনে। মটুকগঞ্জ থেকে চকবাজার ও গোপালগঞ্জ থেকে বোলতলা যেতে আটকে পড়তে হয় দীর্ঘক্ষণ পথচারীদের, সাইকেল আরোহীদের।

রাতে শহরের অনেক মন্দির অন্ধকারেই থাকে। জ্যোৎস্না রাতে আলো জ্বলে না, কৃষ্ণপক্ষে সরকারি আলো কিছু মন্দিরে জ্বলে। নালার সংস্কার ও জল নিকাশি ব্যবস্থাও শহরবাসীকে বহু ক্ষেত্রে বিপন্ন করে। শহরের সব পাড়ায় নালা সে রকম নেই। বর্ষার জল জমে অনেকগুলি জায়গায়। বিশেষ করে স্টেশন থেকে ঝাপড় মোড় রাস্তায় অতি বর্ষণে জল জমে যায়। পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েন। বাসস্ট্যান্ডে প্রতীক্ষালয়ের অভাব। অভাব ভাল শৌচাগারেরও। পুরপ্রশাসনের নজর পড়লে ভাল লাগবে।

তুলসীদাস মাইতি। রবীন্দ্রপল্লি, বিষ্ণুপুর

শহরে সুলভ শৌচাগার চাই

বিষ্ণুপুরে না এলে পশ্চিমবঙ্গ দর্শন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। পর্যটকদের মূল আকর্ষণ মল্লরাজাদের নির্মিত টেরাকোটার মন্দির। অনেক পর্যটকই কয়েক দিনের জন্য এখানে আসেন না। বহু মানুষ কয়েক ঘণ্টার জন্য যাঁরা বেড়াতে আসেন বিষ্ণুপুরে। তাঁরা লজ ও হোটেল ভাড়া নেন না। সেই সমস্ত পর্যটকদের জন্য মন্দির এবং অন্য দর্শনীয় স্থান সংলগ্ন এলাকায় সুলভ শৌচাগার থাকলে তাঁদের উপকার হবে। যে কোনও পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের জন্য এ ধরনের সুলভ শৌচালয় থাকা পরিষেবার অঙ্গ। বিষয়ে পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এতে পুরসভার আয়েরও একটা পথ তৈরি হবে। বাসস্ট্যান্ড, পোকাবাঁধে পূর্ব পাড়ে সুলভ শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকলেও মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে এগুলির দূরত্ব পর্যটকদের ব্যবহারের অন্তরায়।

সুব্রত পণ্ডিত। গোপালগঞ্জ, বিষ্ণুপুর

ইতিহাস রক্ষা করুন

‘গান বাজনা মতিচূর/ তিন নিয়ে বিষ্ণুপুর’— এই লোককথাটি আজ ইতিহাস-প্রায়। গান ও বাজনার অনুষ্ঠান এই শহরে কদাচিত চোখে পড়ে। মতিচূর নামের মিষ্টি কবেই হারিয়ে দিয়েছে। ওই মিষ্টি পিয়ালের বেসন সহযোগে নানারকম ভিয়েন পদ্ধতিতে ময়রা তৈরি করতেন।

আর একটা ঘটনা দুঃখ দেয়। মল্লরাজাদের অক্ষয় কীর্তি সাত-সাতটি বাঁধের বর্তমান অবস্থা। ওই বাঁধের জল শত্রুপক্ষের হাত থেকে রাজার গড় ও নগরকে পরিখার দ্বারা রক্ষা করত। এ ছাড়া খাওয়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ওই জল বাসিন্দারা ব্যবহার করত। ওই সাতটি বাঁধ এখন প্রায় শুকিয়ে ও বুজে গিয়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। যে যমুনাবাঁধে ছিল টলটলে নীল জল, জলের ওপর লাল পদ্মের নির্মল শোভা বিরাজ করত। আজ সেই যমুনাবাঁধ কচুরিপানার চাদরে ঢাকা মজে যাওয়া ডোবায় পরিণত হয়েছে।

সংস্কারের অপেক্ষায়।

মল্লরাজাজের ইচ্ছে ছিল, মন্দির শহর বিষ্ণুপুরকে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ তীর্থে পরিণত করা। তাই যমুনা, কালিন্দী, গন্টক নামে সাতটি বাঁধ খনন করা হয়েছিল। দ্বারকেশ্বর নদের তীর ঘেঁষে দ্বারকা বা দ্বারিকা (অধুনা দুয়ারখা), অবন্তিকা (অধুনা অবিন্টিকা), মথুরা নামে গ্রামগুলির স্থাপন করা হয়।

সবই হারিয়ে যাচ্ছে। লেখা থাকছে ইতিহাসের পাতায়। তবু ইতিহাসকে বর্তমানের হাত ধরেই ফিরিয়ে আনতে হবে। যমুনাবাঁধ নিয়ে কী সব মালিকানা নিয়ে জটিল কথা, আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে শুনছি। যা বিষ্ণুপুরের সাধারণ মানুষ বোঝে না। তাঁরা চান যমুনাবাঁধের সেই টলটলে জলে পুনরায় ঢেউ উঠুক। লাল পদ্মের শোভায় মন মোহিত হয়ে উঠুক।

স্থানীয় পুরকর্তৃপক্ষ ও সরকার এ বিষয়ে একটু নজর দিলে বিষ্ণুপুরবাসী হিসেবে আনন্দিত হব।

নয়নতারা দে। কৃষ্ণগঞ্জ, বিষ্ণুপুর

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur water road temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy