Advertisement
E-Paper

এক জনের করোনা হয়েছে বলে সবাই ঘরবন্দি কেন, প্রশ্ন

একটি জটলায় শোনা গেল এক জন বলছেন, ‘‘এত কিছু ঘোষণার পরে এ কেমন লকডাউন?’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০১:৩৫
‘মাস্ক’ না পরেই জমিয়ে আড্ডা। বাঁকুড়ার ফাঁসিডাঙায়। নিজস্ব চিত্র

‘মাস্ক’ না পরেই জমিয়ে আড্ডা। বাঁকুড়ার ফাঁসিডাঙায়। নিজস্ব চিত্র

‘লকডাউন’ শুরু হতে ঘণ্টা চারেক বাকি। জায়গাটা বাঁকুড়া শহরের ফাঁসিডাঙার হরিজন কলোনি। প্রশাসনের খাতায় ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত। পাড়ার মোড়ে মাঝবয়সী জনা চারেক গল্পগুজব করছিলেন। কারও মুখেই ‘মাস্ক’ নেই। কারণ জিজ্ঞাসা করায় তাঁদের মধ্যে এক প্রৌঢ়ের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এলাকায় এক জনের করোনা হয়েছে। তার জন্য সবাইকে কেন ঘরবন্দি থাকতে হবে! কে এ সব নিয়ম বানিয়েছে?’’ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ধারেকাছে পুলিশ নেই। রাস্তায় বেড়েছে লোকের সংখ্যা। ছবি তুলতে যেতেই তেড়ে এলেন কয়েকজন।

সন্ধ্যার পরে শহরের ওই এলাকায় বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন কয়েকজন। একটি জটলায় শোনা গেল এক জন বলছেন, ‘‘এত কিছু ঘোষণার পরে এ কেমন লকডাউন?’’ কিছু যুবক বলছিলেন, ‘‘করোনা নিয়ে এখানকার মানুষ সে ভাবে সচেতন নন। স্বাস্থ্য দফতরের লোকজন এলাকায় এসে সবাইকে মাস্ক পরতে বলেছে। তার পরেও বেশির ভাগ লোক সে সব বুঝছে না। বোঝাতে গেলে উল্টে আমাদেরই উল্টোপাল্টা কথা শুনতে হচ্ছে।”

কেন ছিল না পুলিশ? বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি।’’ বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদও বলেন, ‘‘আমি মহকুমা প্রশাসনের থেকে এই ব্যাপারে খবর নিচ্ছি।’’

‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ হিসাবে ঘোষিত হরিজন কলোনির বস্তিতে শ’তিনেক পরিবারের বাস বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। বাসিন্দাদের অনেকেই বাঁকুড়া পুরসভার সাফাই কর্মী। পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “লকডাউনে কী নিয়ম মানতে হবে, হরিজন কলোনিতে সে কথা প্রচার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন পুরকর্মীরা। বুধবার রাতে সেখানে স্বাস্থ্য-দল পাঠিয়ে মানুষজনের ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’ করা হয়েছে। সচেতনও করা হয়েছে। তার পরেও অনেকেই নিয়ম মানছেন না।’’

তবে শুধু হরিজন কলোনি নয়, বাঁকুড়া শহরের বাজারহাট বা পথেঘাটে অনেককেই দেখা যাচ্ছে মুখ না ঢেকেই ঘুরে বেড়াতে। সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে ভিড়ভাট্টা প্রায় সর্বত্র। বাঁকুড়া জেলায় প্রায় প্রতিদিনই নতুন করোনা রোগীর সন্ধান মিলছে। গত ক’মাসে এই জেলায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। তার পরেও কেন মানুষজনের টনক নড়ছে না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।

বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, “রাজ্য সরকারের উচিত ছিল সমস্ত স্তরের মানুষকে সচেতন করা। কী সতর্কতা নেওয়া উচিত, সেটাই এখনও বহু মানুষ বোঝেননি।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শুভাশিস বটব্যাল অবশ্য বলেন, “সরকারি ভাবে ক্রমাগত সচেতন করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের মিথ্যা সমালোচনা করা বিরোধীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’’ বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন বলেন, “কন্টেনমেন্ট এলাকা তো বটেই, জেলার অন্য এলাকাতেও করোনা রুখতে কী করা উচিত তা নিয়ে আশাকর্মীদের মাধ্যমে মানুষজনকে সচেতন করা হচ্ছে।”

জেলার অন্য ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’গুলিতে অবশ্য এ দিন বিকেল ৫টার পরে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ মোতায়েন ছিল বলে জানা গিয়েছে।

Lockdown in West Bengal Contentment Zone Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy