Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সত্তর পার করে হাতে ভোটার কার্ড, খুশি কবিতা

মনিপুর গ্রামে একটি কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্র রয়েছে। পরিচালনা করে একটি বেসরকারি সংস্থা। মাটির ছোট ঝুপড়ি বানিয়ে পরিবার থেকে বিচ্যুত কুষ্ঠ-আক্রান্ত অনেক মানুষ থাকেন।

প্রাপ্তি: ভোটার কার্ড নিয়ে মনিপুরের নতুন প্রতিবন্ধী ভোটারেরা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রাপ্তি: ভোটার কার্ড নিয়ে মনিপুরের নতুন প্রতিবন্ধী ভোটারেরা। —নিজস্ব চিত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল 
আদ্রা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ১১:২৬
Share: Save:

এই বছরই প্রথম ভোট দেবেন পুরুলিয়ার আদ্রার মনিপুর গ্রামের বাহাত্তর বছরের কবিতা দত্ত। শুধু তিনি নন। মনিপুরে এ বার নতুন ভোটার কুষ্ঠ আক্রান্ত ৩৯ জন প্রতিবন্ধী। তাঁদের মধ্যে জনা পনেরো ষাট পেরিয়েছেন। ভোট দেওয়ার আগেই খুশি তাঁরা। হাতে এসেছে ভোটার পরিচয়পত্র। আশা করছেন, নাগরিক হিসাবে অনেক পরিষেবাই সহজে মিলবে।

মনিপুর গ্রামে একটি কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্র রয়েছে। পরিচালনা করে একটি বেসরকারি সংস্থা। মাটির ছোট ঝুপড়ি বানিয়ে পরিবার থেকে বিচ্যুত কুষ্ঠ-আক্রান্ত অনেক মানুষ থাকেন। কেউ রয়েছেন ছ’বছর। কেউ আরও বেশি। এত দিন ভোটার তালিকায় নাম ওঠেনি কেন? প্রশাসনের আধিকারিকেরা কিছু বলতে চাননি।

তবে সূত্রের দাবি, চার-পাঁচ দশক আগে ওই ৩৯ জন বাড়ি ছেড়েছিলেন নিসঃম্বল হয়ে। না ছিল বয়সের প্রমাণপত্র। ছিল অন্য জরুরি নথিও। কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্রের সম্পাদক নবকুমার দাস বলেন, ‘‘ওই ৩৯ জনের নাম কয়েক বার খসড়া ভোটার তালিকায় উঠেছিল। স্ক্রুটিনির সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণের অভাবে বাদ পড়ে যায়।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডল গ্রামে গিয়ে ওই ক’জনের নাম ভোটার তালিকায় তোলানোর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ বারে নির্বাচন কমিশন প্রতিবন্ধী ভোটারদের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। খোঁজ নিতে দিয়ে দেখা যায় মনিপুরের ৩৯ জন প্রতিবন্ধীর নাম তালিকায় নেই। তার পরেই নাম তোলা হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, নিয়মকানুন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে ওই প্রতিবন্ধীদের জন্য।

প্রথম বার ভোট দিতে যাবেন কবিতা দত্ত, গান্ধারী মাহাতো, সত্য মাহাতো, সতর মাহাতো, নারায়ণ কর্মকারের মতো বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। গান্ধারী এবং সত্য বলেন, ‘‘ছোটবেলায় রোগ ধরা পড়েছিল। বাড়ির লোকজন হাসপাতালে দিয়ে যায়। আর ফেরায়নি।’’ কাউকে আবার কুষ্ঠ ধরা পড়ার পরে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ঠাঁই মিলেছিল হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেও জায়গা হয়নি আর। পথে পথে ভিক্ষা করে দিন গুজরান হত। পরে থিতু হয়েছেন মনিপুর গ্রামে। সতর, নারায়ণরা বলেন, ‘‘ভোট দিতে পারব ভেবে অন্য রকমের ভাল লাগছে। এ বার যদি ভাতার টাকাও পাই তাহলে অনেক সমস্যার হিল্লে হয়।’’

নবকুমারবাবু জানান, পরিচয়পত্রের অভাবে সেই সমস্ত ভাতা পাওয়া আটকে ছিল এত দিন। ভোটার কার্ড হতেই প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ওই ৩৯ জনের নাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Adra Leprosy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE