E-Paper

পরীক্ষায় নেই, চার হাজার কি ‘স্কুলছুট’?

বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ বলছেন, ওই চার হাজারের বড় অংশই স্কুলছুট। নেপথ্যে মেয়েদের বাল্যবিবাহ এবং ছেলেদের কাজের খোঁজে যাওয়া-সহ নানা কারণ রয়েছে।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP

নবম শ্রেণিতে যে সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী রেজিষ্ট্রেশন বা নাম নথিভুক্তি করিয়ে ছিল, তার থেকে ৪,২৮৩ জন কম ছাত্রছাত্রী এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। এই পরিসংখ্যানেই চিন্তিত শিক্ষক মহল। কারণ, তাঁদের মতে, এদের একটা বড় অংশ স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে। ওই পড়ুয়াদের মধ্যে ৩,৬৮৩ ছাত্র, ৬০০ ছাত্রী রয়েছে।

জেলা শিক্ষা দফতরের তথ্য বলছে, নবম শ্রেণিতে নথিভুক্তি (রেজিস্ট্রেশন) হয়েছিল মোট ৪৭,৩০০ জন ছাত্র ছাত্রীর। কিন্তু মাধ্যমিকের ঠিক আগের দিন পাওয়া তথ্য বলছে, পরীক্ষায় বসছে ৪৩,০১৭ জন। শিক্ষকেরা মনে করছেন, এক ধাক্কায় চার হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী কমে যাওয়াটা তো চিন্তার বটেই। শুধু রামপুরহাট মহকুমায় রেজিষ্ট্রেশনের সংখ্যার তুলনায় প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী কম পরীক্ষায় বসছে। আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। তবে শেষ পর্যন্ত ৪৩,০১৭ জন ছাত্র ছাত্রীও শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা দেবে কি না সংশয় রয়েছে সেটা নিয়েও। কারণ শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিজ্ঞতা বলছে, এর মধ্যেও বেশ কিছু পরীক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার হলে পৌঁছয় না।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ বলছেন, ওই চার হাজারের বড় অংশই স্কুলছুট। নেপথ্যে মেয়েদের বাল্যবিবাহ এবং ছেলেদের কাজের খোঁজে যাওয়া-সহ নানা কারণ রয়েছে। কিছু মেয়ের কম বয়সেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারা আর স্কুলমুখো হচ্ছে না। কিছু ছেলে কাজের খোঁজে স্কুল ছাড়ছে। কেউ নিজের এলাকায় থেকে দিনমজুরি করছে। কেউ কেউ কাজের খোঁজে ভিন্ জেলা, এমনকি ভিন্ রাজ্যেও চলে যাচ্ছে।

তবে শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, আরও একটি কারণ রয়েছে। তা হল, যেহেতু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ ফেল নেই সেই জন্য অনেকেই নবম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হচ্ছে। কেউ কেউ আবার মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।সেই সংখ্যাটাও আছে। বোলপুর তারাশঙ্কর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক তথা প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের সংগঠন অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের জেলা সভাপতি নিত্যানন্দ বারুই বলছেন, ‘‘নবম শ্রেণির পরেই স্কুলছুট হওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। এই ছবি জেলা জেলার প্রায় স্কুলেই রয়েছে।’’

সিউড়ির রামপ্রসাদ রায় স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীরকুমার দাসও মানছেন, স্কুলছুটের একটা প্রবণতা রয়েছে। তিনি জানান, তাঁর স্কুলে ৯৭ জন ছাত্রছাত্রী নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন করিয়েছিল। এ বার মাধ্যমিকে বসছে ৮৪ জন। মুরারই ১ ব্লকের কাহিনগর এলএম বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অভীক মুখ্যাপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এলাকার অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী দুঃস্থ হওয়ায় স্কুলছুটের প্রবণতা রয়েছে।’’ তিনি জানান, মোট ১১৭ জন পরীক্ষার্থী এ বার ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক দেবে। কিন্তু রবিবার বিকেল পর্যন্ত পাঁচ জন পরীক্ষার্থী অ্যাডমিট নিয়ে যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি ওই পরীক্ষার্থীদের হাতে সেগুলি পৌঁছে দিতে।’’

জেলায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা উদ্বেগজনক। বার বারই নাবালিকা বিয়ের কথা সামনে আসে তবে সেই তুলনায় ছাত্রীদের স্কুল ছাড়ার প্রবণতা কম বলে পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে। শিক্ষদের একাংশ বলছেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের সুবিধে নিতে বিয়ের পরেও লুকিয়ে অনেক ছাত্রী স্কুলে আসছে, পরীক্ষায়ও বসছে।’’ আবার অনেকে এক বছর পরে স্কুলে ফেরত এসেছে। তবে সামগ্রিক ছবিটা উদ্বেগের বলেই মানছেন সকলে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy