Advertisement
E-Paper

বদলাচ্ছে বিয়ের তত্ত্বের সাজ

রাঙামাটির দেশে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিয়ের তত্ত্বের চেনা ছবিটা। তত্ত্ব মানেই বাঁশের কঞ্চির ডালায় বড় বড় ফেনী বাতাসা থাকতো এক সময়। বেনারসি চমচম, জলযোগ, মালাইচপ, মালাইকারি, খাসবালুসাই, চিনি দেওয়া চমচমের মতো পুরনো তত্ত্বের মিষ্টি ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছে গায়ে হলুদের সকালে বা ফুল সজ্জার সন্ধ্যায় তত্ত্বের ডালা থেকে। 

তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
কর্মকাণ্ড: সিউড়ির মিষ্টির দোকানে সাজানো হচ্ছে বিয়ের তত্ত্বের মিষ্টি। নিজস্ব চিত্র

কর্মকাণ্ড: সিউড়ির মিষ্টির দোকানে সাজানো হচ্ছে বিয়ের তত্ত্বের মিষ্টি। নিজস্ব চিত্র

রাঙামাটির দেশে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিয়ের তত্ত্বের চেনা ছবিটা। তত্ত্ব মানেই বাঁশের কঞ্চির ডালায় বড় বড় ফেনী বাতাসা থাকতো এক সময়। বেনারসি চমচম, জলযোগ, মালাইচপ, মালাইকারি, খাসবালুসাই, চিনি দেওয়া চমচমের মতো পুরনো তত্ত্বের মিষ্টি ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছে গায়ে হলুদের সকালে বা ফুল সজ্জার সন্ধ্যায় তত্ত্বের ডালা থেকে।

সম্প্রতি মেয়ে শ্রৌতির বিয়ে দিলেন সিউড়ির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক কুনাল রায়। তিনি বলেন “আমাদের পছন্দ অনুযায়ী কম মিষ্টি দিয়ে তত্ত্বের ডালা তৈরি হয়েছিল এখানেই। কলকাতার পাত্র পক্ষও একদম কম মিষ্টি দিয়ে তৈরি তত্ত্বের ডালা সিউড়ির মিষ্টির দোকান থেকে নিয়েছিলেন।” চিরকালই তত্ত্ব বিষয়টা বিয়ের একটা নজরকাড়া অংশ। পাত্রপক্ষের পাঠানো তত্ত্ব বনাম পাত্রীপক্ষের তত্ত্বের প্রতিযোগিতাও চলে। ক্ষীরের বর-বউ, মাছ তো থাকেই বাজেট বাড়ালে বিভিন্ন আদলের মিষ্টির মডেলও হয়। কিন্তু এইসবই প্রথা অনুযায়ী তৈরি হওয়া তত্ত্ব।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে তত্ত্বের মিষ্টির ধরন থেকে স্বাদ সবই। বিয়ের মরসুমে সিউড়ির এক মিষ্টির দোকানের কারখানায় উঁকি মারতেই ব্যস্ততা মালুম হল। তত্ত্বের কারিগর ময়ূরেশ্বরের কোটাসুরের শমু মণ্ডল ১০ বছর ধরে নানা রকম মিষ্টির ডালা সাজানোর কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘তত্ত্বের মিষ্টিতে ভাল খোয়া, ক্ষীর, চকোলেট পাউডার, খাবারের রঙ, তবক, কিসমিস তো ব্যবহার করা হয়ই। এর সঙ্গে থাকে আরও কিছু জিনিস। দোকানের মালিক বাপি ঘোষাল স্মৃতিচারণ করেন, ‘‘আমার বাবা গোঁসাইদাস ঘোষালের আমলে বাঁশের কঞ্চির ডালাতে রঙিন কাগজ মুড়ে তাতে গাত্রহরিদ্রা, শুভবিবাহ, ফুলসজ্জা ছাপের সন্দেশ, মাটির বড় হাঁড়িতে রসগোল্লা, দই, বোঁদে তত্ত্বের মিষ্টি হিসেবে পাঠানো হত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁওয়া লাগল তত্ত্বের মিষ্টিতেও। কঞ্চির ডালার জায়গা নিল সুদৃশ্য নানা আকারের ট্রে।’’ এখন তত্ত্বের মিষ্টিতে জায়গা করে নিচ্ছে ড্রাইফ্রুট, মনমাতানো সন্দেশ, হাল্কা সুগন্ধি ষ্ট্রবেরি পাঞ্চ, চকোলেট বল, চকোলেট বরফি, লাড্ডুর মতো মিষ্টি।

শিল্পীর তুলির টান এখন রসগোল্লা বা দইয়ের মাটির হাঁড়িতেও। মালিপাড়ার তত্ত্ব সাজানোর দোকানের মালিক গৌতম মালাকার জানান, আগে বাঁশের ট্রে রঙিন কাগজ মোড়া ৫-৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পরে পিচবোর্ড আর থার্মোকলের ট্রে বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ৫৫ টাকায়। এখন নিজেদের হাতে তৈরি পিভিসি বোর্ড, পাইপ, হ্যান্ডমেড রঙিন কাগজ, চুমকি, জরি, রিবন, পলিথিন, সেলোটেপ, রঙিন বল এই সব দিয়ে গোল, চৌকো, ছ’কোনা, বহু কোনা, বরফি আকৃতির ট্রে তত্ত্বের জন্য তৈরি হচ্ছে। এর দাম পড়ছে ৪৫ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। মিষ্টির জন্য হাঁড়িকেও সাজাতে হচ্ছে চাহিদা মত। সেক্ষেত্রে দামের হেরফের হচ্ছে। বেশি কারুকাজ অবশ্য অনেকেরই পছন্দ নয়। সিউড়ির আরেক মিষ্টি ব্যবসায়ী সুশান্ত সাহা বলেন, ‘‘এখন সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। মিষ্টিতেও তার প্রভাব পড়ছে।’’ তিনি জানান, এক সময় তত্ত্বের মিষ্টিতে প্রজাপতি, মাছ, ফল, ফুল, সন্দেশ দিয়ে সাজানো ডালায় কড়া মিষ্টি আর রঙের ব্যবহার বেশি হত। এখন রুচি বদলাচ্ছে। কম মিষ্টি দিয়ে তৈরি হচ্ছে আইবুড়োভাত, মণ্ডপ সজ্জা, পাল্কি, গোলাপের তোড়া, সিঁদুর দান, তবলা, তানপুরার সাজে ডালা। চাহিদা অনুযায়ী স্পেশ্যাল তত্ত্বের ডালাও আছে। আগে ডালার সংখ্যা বেশি হত। এখন সেটা কমেছে। সাজানো ডালার দাম পড়ছে ৫০০ থেকে ২৫০০টাকা অবধি।

তবে তত্ত্বের সাজে বীরভূমের প্রতিনিধিত্ব করতে বিভিন্ন মোরব্বার ডালাটি থাকে এখনও। হারিয়ে যেতে বসা ফেনী বাতাসার কথা মনে করায় লেটো শিল্পী হরকুমার গুপ্তের ছড়া, “টোপর দেওয়া গরুর গাড়ি, পাত্র যাবে বিয়ে করতে শ্বশুরবাড়ি সঙ্গে যাবে বাজনা তাসা আর তত্ত্বে নিও ফেনী বাতাসা”। ছড়া আর ছবিতেই এরপর হয়তো ধরা থাকবে এইসব মিষ্টিগুলি।

Marriage Marriage Ceremony Gifts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy