(বাঁ দিকে) বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত ফলক।— নিজস্ব চিত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি-ফলক বিতর্কে পিছু হঠল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। চাপের মুখে কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ফলক অস্থায়ী ভাবে বসানো হয়েছে। ভবিষ্যতে তা সরিয়ে দেওয়া হবে। যদিও কবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামহীন ফলক সরানো হবে, কবে তাঁর নামাঙ্কিত ফলক ফিরিয়ে আনা হবে, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক ভাবেও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি।
বিশ্বভারতীকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। তার পরেই গত ১৯ অক্টোবর এই স্বীকৃতির একটি ফলক বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। ফলকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম। বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথের নাম ফলকটির কোথাও নেই।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর ফলক নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, শুক্রবার সকালের মধ্যে বিশ্বভারতীর ফলকে ফিরিয়ে আনতে হবে রবি ঠাকুরের নাম। তা না হলে আন্দোলনের পথে হাঁটবে তৃণমূল। মমতার কথায়, ‘‘বিশ্বভারতী ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য। তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। ওঁর নাম সরিয়ে দিয়েছে! পুজো বলে আমরা এটা চুপচাপ হজম করেছি। কাল সকালের মধ্যে ওই ফলক না সরালে এবং রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে না আনলে ওখানে আমাদের লোক রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে।’’
মমতার হুঁশিয়ারির আগেই অবশ্য বিশ্বভারতীর ফলক-বিতর্কে কোমর বেঁধে নেমেছিল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটে তৃণমূলের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে এ নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। সেই পোস্টে বাংলার শাসকদল প্রশ্ন তোলে, ‘‘মোদীজি কি নিজেকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে মনে করছেন?’’ বিশ্বভারতীর ফলক থেকে রবি ঠাকুরের নাম বাদ দেওয়া, মোদী এবং বিদ্যুতের নামকে প্রাধান্য দেওয়া শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, প্রত্যেক ভারতীয়ের অপমান বলে উল্লেখ করেছে তৃণমূল। তাদের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘‘এই প্রবণতা আসলে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’
তৃণমূলের এই পোস্টের পরেই একে একে শাসকদলের নেতানেত্রীরা তা শেয়ার করে ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন। মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে ইন্দ্রনীল সেন, সায়নী ঘোষেরা একে একে ফলকের নিন্দা করে বিশ্বভারতীর উপর চাপসৃষ্টি করতে শুরু করেন। চন্দ্রিমা এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘আমাদের জাতীয় কবির অবদানকে সংরক্ষণের পরিবর্তে মোদীজি নিজের ঢাক পেটাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ শশীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মহান নেতাদের কীর্তির উপর বিজেপির আধিপত্য এবং ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টার উদাহরণ বিশ্বভারতীর এই ফলক।’’ এক ধাপ এগিয়ে সায়নী লিখেছেন, ‘‘বাংলা যে রবি ঠাকুরের ভূমি, তা স্বঘোষিত বিশ্বগুরু হজম করতে পারছেন না। সাদা দাড়ি রাখলেই উনি রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথের নাম সরালেই তাঁর কীর্তি ফিকে হয়ে যাবে না। তবে এটি বিজেপির আগ্রাসন, অশ্রদ্ধাকে আরও স্পষ্ট করে প্রকাশ করে দিল। এই কারণেই বাংলা বিজেপিতে বার বার প্রত্যাখ্যান করে।’’
শাসকদলের তরফে এই সাঁড়াশি আক্রমণ যখন চলছে, তার মাঝেই বিশ্বভারতীর একটি সূত্র দাবি করে, ফলকটি অস্থায়ী। তা সরিয়ে ফেলা হবে।
বিশ্বভারতীকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই অভিযোগ উঠেছিল, এই কাজের জন্য উপাচার্য নিজে কৃতিত্ব নিতে চান তো বটেই, আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও প্রকাশ্যে আনতে চান। শান্তিনিকেতনের আনাচেকানাচে তা নিয়ে আলোচনা চলেছে বিস্তর। তার মাঝেই দেখা যায়, বিশ্বভারতীর তরফে উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে শ্বেত পাথরের ফলক বসানো হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’। তার ঠিক নীচে নরেন্দ্র মোদী এবং বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম। বিশ্বভারতীর আশ্রমিক থেকে শুরু করে প্রাক্তনী এবং শিক্ষকদের একাংশ এই ফলক দেখে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। অনেকের দাবি, এমন ঘটনা বিশ্বভারতীতে বেনজির। কারণ সেখানকার প্রথা অনুযায়ী কোনও উদ্বোধনী ফলক বা স্বীকৃতি ফলকে সাধারণত কারও নাম উল্লেখ করা হয় না। বিষয়টি আগেই তৃণমূলের নজরে এসেছিল। পুজো মিটে যাওয়ার পরে তাকে হাতিয়ার করে আসরে নেমে পড়ল বাংলার শাসকদল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy