বাছাই আম হাতে খুদে। মেলায় সোমবার। ছবি: সুজিত মাহাতো
জেলার বিভিন্ন ব্লকের বাগানে ফলা আমের সম্ভার নিয়ে সোমবার থেকেই পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবন চত্বরে শুরু হয়েছে আম মেলা। উদ্যোক্তাদের দাবি, গত বারের থেকে এ বার মেলায় আম এসেছে পাঁচ গুণ বেশি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত বলেন, ‘‘এ বার মেলা পাঁচ বছরে পা দিল। আগে আমরা আম উৎসব করতাম। এ বার থেকে সেটা বদলে গিয়েছে মেলায়। গত বার মেলায় মোট ১৩ টন আম এসেছিল। এ বারে দু’দিনের মেলায় আম এসেছে ৭০ টনেরও বেশি।’’
এই মেলার উদ্যোক্তা জেলা উদ্যান পালন দফতর। দফতরের আধিকারিক সুদীপ ভকত বলেন, ‘‘এ বার মেলায় মোট ৪৩ জন চাষি তাঁদের বাগানে ফল নিয়ে আমি যোগ দিয়েছেন। আম্রপালি ও মল্লিকা —এই দুই জাতের আমই বেশি এনেছেন। ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, দশেরা, বেগুনফুলি-সহ অন্য কিছু জাতও রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এই আমের সিংহ ভাগই জৈব সারে উৎপাদিত এবং গাছে পাকা। আর একটি বিশেষত্বও রয়েছে জেলার আম্রপালির— শক্ত আর খোসা পাতলা। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ফলন বেড়েছে। আমাদের এ বার লক্ষ্য পুরুলিয়ার আমের বাজার।’’
ইচ্ছে থাকলে যে শুকনো মাটিতেও এমন রসালো ফল ফলানো যায়, সে কথা প্রমাণ করছেন পুরুলিয়ার চাষিরা। জেলায় যে আমের চাষ বাড়ছে উদ্বোধনী বক্তব্যে সে কথা বলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও। তিনি জানান, ২০১৬ সালে জেলায় ২,৭১০ হেক্টর জমিতে আম ফলত। সেবার আমের ফলন ছিল ১০ হাজার টন। মেলায় এসেছিল ২ টন আম। ২০১৭ সালে আম চাষের জমি বেড়ে হয় ২,৯৬৫ হেক্টর। ফলন বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার টন। ওই বছর মেলায় এসেছিল ১০ টন আম। আর চলতি বছরে আমের ফলনের জমি বেড়ে হয়েছে ৩,৪৫০ হেক্টর। আম হয়েছে ১৩ হাজার টন। এ বারে মেলায় এসেছে ৬৭ টন আম। মন্ত্রীর দাবি, পুরুলিয়ার পতিত জমিতে আম ফলিয়ে চাষিরা যে বিকল্প আয়ের দিশা খুঁজে পেয়েছেন, এই পরিসংখ্যানেই তা পরিষ্কার।
জেলার আমের কথা উঠলে এসে পড়ে কাশীপুরের বেলিয়াডাঙা গ্রামের বাসিন্দা জানিক বাউরির নাম। গত বার রাজ্য আম উৎসবে তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন বাগানের মল্লিকা ও আম্রপালির জন্য। বললেন, ‘‘এ বারও ওই দুই প্রজাতির আমই মেলায় এনেছি। দাম কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।’’ মেলায় ঘুরতে ঘুরতে তনুশ্রী মাহাতো গন্ধ শুঁকে কিনেই ফেললেন সেই আমের বেশ কিছুটা। ঝালদা ১ ব্লকের অনিলচন্দ্র মাহাতো নিজে মেলায় আম এনেছেন। ষাট পেরিয়েছেন। এখনও রোজ নিয়ম করে দু’বেলা বাগানে যান। নিজের হাতে গাছের পরিচর্যা করা, নতুন প্রজাতির আমের গাছ খুঁজে উদ্যান পালন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাষের প্রযুক্তির সুলুকসন্ধান করার নেশা নিয়ে মেতে আছেন। জানালেন, এ বার মেলায় মল্লিকা, আম্রপালি তো এনেছেনই. সঙ্গে কিছুটা ল্যাংড়া, অনুপম, হিমসাগরও আছে। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আমগুলো আমার অনেক যত্নের। যাঁরা নিয়ে যাবেন তাঁরা কে কী বলছেন সেটা অনেক দামি। তাই নিজেই এসেছি।’’
মেঘলা আকাশ, ভ্যাপসা গরম। গন্ধে ম ম করছে পুরুলিয়া শহরের জেলা পরিষদ চত্বর। যাঁরা মেলার খবর রাখেন না, পথচলতি এমন অনেকে উঁকি মেরে হাসি মুখে ব্যাগবন্দি করে নিয়ে যাচ্ছেন পছন্দের আম। বাবার সঙ্গে আম কিনে বাড়ি ফেরার পথে শুভ্রা মিত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জেলার বাগানের আম মেলে এই মেলায়। বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy