Advertisement
E-Paper

প্রকৃতি-প্রতিবাদে মিশছে রাজনীতিও

১৫ নভেম্বর আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে এলে পুলিশ আঘরপুরের মুখে তাঁকে আটকায়। তখন রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ গামছা পেতে বসে থাকেন তিনি।

প্রশান্ত পাল 

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫২
জেল থেকে ছাড়া পাওয়া মহিলাদের নিয়ে আঘরপুরে মিছিল গ্রামবাসীদের একাংশের। ডান দিকে, গ্রামে ঢোকার মুখে পুলিশের ব্যারিকেড।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়া মহিলাদের নিয়ে আঘরপুরে মিছিল গ্রামবাসীদের একাংশের। ডান দিকে, গ্রামে ঢোকার মুখে পুলিশের ব্যারিকেড। —নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার নিস্তরঙ্গ রাজনীতিতে হঠাৎ তরঙ্গ তুলেছে আঘরপুর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া ডুংরির গায়ে এখন রাজনীতির রং। প্রকৃতি বাঁচাতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে জেলে যান ১৩ জন। সেই ঘটনা লোকসভা ভোটের আগে আঘরপুরে টেনে এনেছে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদেরও।

৫ নভেম্বর তিন শিশু-সহ আঘরপুরের ১৩ জন মহিলা জেলে যাওয়ার পর থেকে শিল্পতালুকের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ বিনা বাধায় এগোচ্ছে। কিন্তু তাঁদের গ্রেফতারিতে রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়েছে। শিল্পতালুকের প্রতিবাদ আন্দোলন ঘিরে এলাকার সমর্থনের স্রোত টানতে উঠেপড়ে লেগেছে বিরোধীরা।

১৫ নভেম্বর আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে এলে পুলিশ আঘরপুরের মুখে তাঁকে আটকায়। তখন রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ গামছা পেতে বসে থাকেন তিনি। জানান, বিধানসভায় তিনি এ নিয়ে সরব হবেন। এর ক’দিন পরে আঘরপুরে ঢুকতে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য নেতৃত্ব। ছিলেন তিন প্রাক্তন মন্ত্রীও। এর পরে জামিন পেয়ে ধৃতেরা গ্রামে ফিরলে তাঁদের মালা পরিয়ে বাজনা নিয়ে মিছিল করেন গ্রামবাসী। ২৩ নভেম্বর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আঘরপুরে এসে ওই মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। জানিয়ে যান, তাঁদের পাশে দল থাকবে। প্রতিবাদী মহিলাদের থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশ যে ভাবে মারধর করেছে, সে জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। পুলিশ সে অভিযোগ মানেনি। কিন্তু আন্দোলনের পরিসর তাতে কমেনি।

আঘরপুর ডুংরি বাঁচাতে ইতিমধ্যে জয়পুরে সভা করে নাগরিক কমিটি গড়েছেন স্থানীয়রা। কমিটির সদস্য তথা এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক সুব্রত মাহাতো বলেন, ‘‘শিল্পতালুকের পাঁচিলের ওপারেই গ্রামের মানুষজনের বাস। তাঁরাই এতদিন এই প্রাকৃতিক সম্পদকে টিকিয়ে রেখেছেন। অথচ শিল্পতালুকের নামে এখানে কী কী শিল্প হবে, সেটুকু জানার অধিকার তাঁদের নেই? গণতান্ত্রিক ভাবেই প্রতিবাদ চলবে।’’

শিল্পতালুক ঘিরে গ্রামবাসীর অসন্তোষ পঞ্চায়েত ভোটে ছায়া ফেলেছে, দাবি বিরোধীদের। স্থানীয় বড়গ্রাম পঞ্চায়েতের আঘরপুরের গ্রাম সংসদ ২০১৮ সালে তৃণমূল দখল করেছিল। কিন্তু এ বার ওই গ্রাম সংসদে জিতেছেন সিপিএম প্রার্থী। এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক সুব্রত মাহাতোর দাবি, ‘‘ভোটের আগে থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে এলাকাবাসীর অনেক প্রশ্ন ছিল। তার সদুত্তর তাঁরা পাননি। তারই প্রভাব পড়েছে পঞ্চায়েত ভোটে।’’

জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। এখানে সেই জমি আন্দোলন ঘিরেই কি রাজনৈতিক জমি হারাচ্ছে তৃণমূল?

দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতোর অবশ্য দাবি, ‘‘মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। বড়গ্রাম পঞ্চায়েত আমরাই জিতেছি। তাছাড়া এখানে সরকারি জমিতে শিল্পতালুক হচ্ছে। কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো জমি নেওয়া হচ্ছে না। কিছু মানুষ স্রেফ বিরোধিতার জন্যই এ সব করছেন। তার জন্য শিল্পায়ন ঘিরে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। এলাকাবাসীকে বোঝানো হবে।’’

গত বিধানসভা ভোটে স্থানীয় জয়পুর আসনে জিতেছে বিজেপি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আঘরপুর-কাণ্ডে বিজেপিকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।

জয়পুরের বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘আঘরপুরের শিল্পতালুকে ঠিক কী হবে, কত মানুষ কাজ পাবেন এই বিষয়টি জানতে চেয়ে আমি বিধানসভায় প্রশ্ন জমা দিয়েছি। দেখি রাজ্য সরকারের তরফেকী উত্তর পাই।’’ (চলবে)

Protest purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy