Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

থামের কাছে উঠছে বালি, ক্ষুব্ধ এলাকা

বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সব্যসাচী সরকার বলেন, “সেতুর আশপাশ থেকে বালি তোলা আমরা মোটেই বরদাস্ত করব না। পুরো বিষয়টি নিয়ে মেজিয়া ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে খোঁজ নেব।”

আশঙ্কা: প্রত্যেক বছর বর্ষার পরে সেতুর নীচ থেকে এ ভাবেই বেরিয়ে আসছে পাথর। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

আশঙ্কা: প্রত্যেক বছর বর্ষার পরে সেতুর নীচ থেকে এ ভাবেই বেরিয়ে আসছে পাথর। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মেজিয়া শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০২:১০
Share: Save:

স্তম্ভের কাছ থেকে তোলা হয়েছে বালি। যার ফলে বন্যায় জলের তোড়ে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সেতুতে। বাঁকুড়ার মেজিয়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জের মধ্যে সংযোগকারী দামোদর নদের উপরের মেজিয়া সেতু নিয়ে এমনই আশঙ্কা দানা বেধেছে এলাকায়। বাসিন্দাদের মতে, প্রশাসন বালি চোরদের ঠেকাতে সক্রিয় না হলে ওই সেতুতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। যার জেরে রানিগঞ্জ-বাঁকুড়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সেতুর গা ঘেঁষে মেশিনে যথেচ্ছ ভাবে বালি তোলা চলে। নদী বক্ষে বালি তোলার যন্ত্র ও পরিবহণের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে দামোদরের একটা বড় অংশ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনভর চলে বালি তোলা।

মেজিয়া থানার স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে সেতুর ঠিক মুখে। তা সত্ত্বেও এমন কারবার চলছে কী ভাবে?

যদিও এমন কিছু ঘটছে বলে খবর নেই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্তাদের কাছে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সব্যসাচী সরকার বলেন, “সেতুর আশপাশ থেকে বালি তোলা আমরা মোটেই বরদাস্ত করব না। পুরো বিষয়টি নিয়ে মেজিয়া ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে খোঁজ নেব।” জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “মেজিয়া সেতুর সামনে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। তারপরেও অবৈধ বালি কারবার চলার কথা নয়। ঘটনাটি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।”

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি। বালি তোলার মেশিনও রয়েছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী মেশিন দিয়ে বালি কাটা যায় না। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “দিন-রাত বালি তোলা হচ্ছে সেতুর কাছ থেকে। এ ভাবে চলতে থাকলে নদের গতিপথ পরিবর্তন বা সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটতেই পারে। তখন কী হবে?”

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন বিডিও (মেজিয়া) অজয় সামন্তও। তিনি বলেন, “সেতুর কাছ থেকে বালি তোলার ঘটনাটি আমাদের নজরেও এসেছে। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে এ সব রুখতে পদক্ষেপ করতে বলেছি।” মেজিয়ার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। দফতরের এক আধিকারিকের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “এ নিয়ে যা বলার জেলা প্রশাসন বলবে।”

এ দিকে ওই সেতুটি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে থাকলেও জাতীয় সড়ক বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, সেতু দেখভালের দায়িত্ব মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। ওই সেতুর এক পাশে রয়েছে মেজিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালগাড়ির রেললাইন। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সেতুর খুব কাছ থেকে যে ভাবে বালি তোলা হচ্ছে, তাতে তাঁরাও উদ্বেগে। এতে সেতুর স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকারের অভিযোগ, “মেজিয়া সেতুর কাছে যে ভাবে বালি তোলা হচ্ছে তাতে আমরা চিন্তিত। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে তৃণমূলের। তা না হলে দিনে দুপুরে বালি চুরি চললেও পুলিশ-প্রশাসন চুপ করে রয়েছে কেন?’’ যদিও শালতোড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বাউড়ির দাবি, “পুলিশ ও প্রশাসন বালি তোলা রুখতে এখন খুব কড়া। সেতুর কাছে বালি তোলা হয় না। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ।” মেজিয়া থানার দাবি, পুলিশ ওই সেতু ও তার আশপাশে নজরদারি চালায়। অবৈধ বালি তোলার কারবারের অভিযোগ ঠিক নয়।

ঘটনা হল, বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন নদী থেকেই অবৈধ ভাবে বালি তোলার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে।

জেলা প্রশাসনের নজরেও এসেছে নিয়ম ভেঙে কখনও মেশিন দিয়ে যথেচ্ছ বালি তোলা চলছে, কখনও আবার মাত্রাতিরিক্ত বালি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া চলছে। ঘাট-মালিকেরা প্রশাসনের শাস্তির মুখেও পড়েছেন। তারপরেও এই বেনিয়ম রোখা যায়নি।

সম্প্রতি গন্ধেশ্বরী নদী সংস্কারের জন্য প্রশাসনের তরফে এক ব্যক্তিকে বালি তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর গন্ধেশ্বরী সেতুর খুব কাছ থেকে ওই ব্যক্তি বালি তুলছিলেন। সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার পরেই প্রশাসন পদক্ষেপ করে।

মেজিয়ার বাসিন্দাদের দাবি, দামোদর নদের উপর সেতুটিকে রক্ষা করতে দ্রুত স্তম্ভের কাছ থেকে বালি তোলা বন্ধ

করুক প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mejia Sand Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE