যন্ত্রণা দিয়ে শিশু কন্যাকে তিল তিল করে মারার ঘটনায় তার সৎ বাবার পাশাপাশি মা-ও দায়ী বলে চার্জশিটে দাবি করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রাম থেকে সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুটিকে খুনের অভিযোগে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে সৎ বাবা সনাতন গোস্বামী ও শিশুটির মা। সুচ-কাণ্ডে শিশুমৃত্যুর ৫৮ দিনের মাথায় মঙ্গলবার পুরুলিয়া আদালতে চার্জশিট জমা পড়ল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন জেলা আদালতের বিশেষ বিচারক সুযশা মুখোপাধ্যায়ের এজলাসেই এই ঘটনার জড়িত ওই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুন, ষড়যন্ত্র-সহ পকসো আইনে চার্জশিট পেশ করা হয়। ৫০০ পাতার বেশি চার্জশিটে শিশুকন্যার ময়না-তদন্তের রিপোর্ট-সহ দু’জনকে জেরায় যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে, সে সবের উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, স্বামী-বিচ্ছিন্না ওই যুবতী নিজের ওই শিশু কন্যাকে নিয়ে মায়ের কাছে থাকত। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে সনাতন তাকে বিয়ে করতে চাওয়ায় সে স্থায়ী আশ্রয় পাওয়ার জন্য তাতে আর আপত্তি জানায়নি। মেয়েকে মায়ের কাছে রেখেই এ বছরের দোলের সময় সনাতনকে বিয়ে করে তার ঘর করতে নদিয়াড়ায় চলে আসে ওই যুবতী। মাসখানেক পরে শিশুটিকে সেখানে দিয়ে যাওয়ার পর থেকেই গোলমালের সূত্রপাত হয়।
সনাতন কিছুতেই সৎ মেয়েকে মেনে নিতে পারেনি। এমনকী রাতের বেলায় শিশুটিকে বিছানা থেকে মারধর করে সনাতন ছুড়েও ফেলে দিয়েছে কয়েকবার। তাই দু’জনের নিভৃত জীবনযাপনের বাধা হয়ে ওঠা ওই শিশুটিকে মেরে ফেলাই একমাত্র পথ বলে মনে করেছিল সনাতন।
পুলিশ জানাচ্ছে, দু’জনকে জেরা করে তারা জানতে পেরেছে, সনাতন শিশুটিকে মেরে ফেলতে চাওয়ায় শিশুটির মা আপত্তি তোলেনি। কারণ তাতে ওই আশ্রয় চলে যাওয়ার ভয় ছিল। অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড জানতে, হঠাৎ করে মেয়েটিকে খুন করলে ময়না-তদন্ত, থানা-পুলিশ হতো। তাই দিনের পর দিন শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সুচ ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে মেয়েটিকে নিস্তেজ করতে চেয়েছিল সে। সাতটি সুচও ঢুকিয়ে ফেলেছিল।
কিন্তু ঘুণাক্ষরেও তা টের পাননি গ্রামবাসী। কারণ একে সনাতনের বাড়ি গ্রামের এক প্রান্তে। তার উপরে, সে বাড়িতে হামেশাই তারস্বরে রেডিও চালিয়ে রাখত। ফলে মেয়েটি যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও তা বাইরের কারও কানে আসেনি।
কিন্তু শাশুড়ির বাৎসরিক কাজ করতে গ্রামে আসা সনাতনের পুত্রবধূদের নজরে মেয়েটির অসুস্থতা আসতেই সব ফাঁস হয়ে যায়। তাঁদের চাপে ১১ জুলাই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করার পরে এক্স-রে তে একরত্তির শরীরে সাতটি সুচ বিঁধে থাকার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
হস্তক্ষেপ করে চাইল্ড লাইন। কিন্তু মুখ খুলতে চাননি শিশুর মা। সনাতন অবশ্য আঁচ পেয়ে আগেই গা ঢাকা দেয়।
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে সুচগুলি বের করে আনা হলেও শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। ২১ জুলাই শিশুটির মৃত্যু হয়। এরপরেই পুলিশ তার মাকে ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করে। ২৯ জুলাই উত্তরপ্রদেশ থেকে পুলিশ সনাতনকে খুঁজে আনে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সনাতনের বিরুদ্ধে পকসো আইনের ৬ ধারায় এবং নিহত শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে পকসো আইনের ৪ ধারায় চার্জশিট জমা করা হয়েছে। পকসো আইনের মামলায় ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা করতে হয়। তার আগেই আমরা চার্জশিট জমা দিয়েছি।’’ মঙ্গলবার ওই দু’জনকে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাদের ফের জেল হাজতে পাঠান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy