Advertisement
০৬ মে ২০২৪
কাশীপুরে যুবক খুন

চিলেকোঠায় দরজা নেই, জানত আততায়ী

সপ্তাহ দুয়েক বাদেই বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সে জন্য পরিবারে তোড়জোড়ও চলছিল। কিন্তু, তার আগেই পরিবারে নেমে এল বিপর্যয়। রাতের অন্ধকারে বাড়ির মধ্যে ঢুকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কুপিয়ে খুন করা হল সেই যুবককে। আততায়ীকে বাধা দিতে গিয়ে কোপ খেয়ে জখম হলেন ওই যুবকের দিদিও। শুক্রবার রাতে কাশীপুরের মধাপাতড়া গ্রামের ওই ঘটনা ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাশীপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েক বাদেই বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সে জন্য পরিবারে তোড়জোড়ও চলছিল। কিন্তু, তার আগেই পরিবারে নেমে এল বিপর্যয়। রাতের অন্ধকারে বাড়ির মধ্যে ঢুকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কুপিয়ে খুন করা হল সেই যুবককে। আততায়ীকে বাধা দিতে গিয়ে কোপ খেয়ে জখম হলেন ওই যুবকের দিদিও। শুক্রবার রাতে কাশীপুরের মধাপাতড়া গ্রামের ওই ঘটনা ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম গুরুচরণ মাহাতো (২৮)। তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক কোপ রয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে শনিবার সকালেই আটক করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাদের নাম জানাতে চায়নি। পুরুলিয়ার জেলা সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। আততায়ীর গামছা পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, জমি সংক্রান্ত বিবাদ এই ঘটনার পিছনে থাকতে পারে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুরুচরণদের পরিবার মূলত চাষাবাদ নির্ভর। বছর দুয়েক আগে বাবা আকুলচন্দ্র মাহাতোর মৃত্যুর পরে গুরুচরণের ঘাড়েই সংসারের দায়িত্ব পড়ে। চাষবাস মূল জীবিকা হলেও তিনি কাশীপুরে মাইকেল মধুসূদন কলেজে কলা বিভাগে পড়াশোনাও করেছিলেন। দিদিদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে মা ও গুরুচরণ থাকতেন। শুক্রবার রাতে অন্য দিনের মতোই একটি ঘরে বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন ওই যুবক। পাশের ঘরে দিদি রাণুবালা মাহাতো শুয়েছিলেন। মা ছিলেন অন্য ঘরে। গুরুচরণদের বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় সিঁড়িঘরে কোনও দরজা নেই বলেই জানিয়েছেন তাঁর আত্মীয়েরা।

পরিবার সূত্রের খবর, মাঝরাতে গুরুচরণের আর্ত চিৎকারে রাণুবালার ঘুম ভেঙে যায়। তাড়াতাড়ি তিনি উঠে ভাইয়ের ঘরে ঢুকে দেখেন, অন্ধকারে এক জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভাইকে আক্রমণ করছে। গুরুচরণের এক জামাইবাবু সৌমিত্র মাহাতো বলেন, ‘‘রাণুবালা যা বলেছে, তাতে আততায়ীর মুখে গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনি তাঁকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু অজ্ঞাতপরিচয় ওই আততায়ী দিদিকেও ধারালো অস্ত্রের কোপ মারে। দিদির ডান কাঁধে চোট লেগেছে। হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী।’’ সৌমিত্র জানান, আততায়ী বাঁশ বেয়ে ছাদে উঠে গুরুচরণের ঘরে ঢুকেছিল। কেননা বাঁশটি এখনও পড়ে রয়েছে। রাণুবালা জানান, ভাইয়ের বুকের বাঁ দিকে ও শরীরে একাধিক ক্ষত থেকে তখনও রক্ত ঝরছিল। গোলমালে দ্রুত গ্রামের লোকজন জেগে যান। গুরুচরণকে কাশীপুর কল্লোলী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশও জানিয়েছে, চিলেকোঠার দরজা না থাকার সুযোগ নিয়েছে আততায়ী। ঘুমিয়ে থাকায় কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেননি গুরুচরণ। খুনের কারণ নিয়ে রহস্য রয়েছে যথেষ্ট। জমি নিয়ে বিবাদের কথা পুলিশ স্থানীয় ভাবে জেনেছে। কিন্তু, স্রেফ সেই কারণেই ওই যুবককে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে ধন্দ আছে। তবে, আগাম ছক কষেই যে এই খুন, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই পুলিশের।

এই যুবকের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, আগামী ৪ঠা আষাঢ় গুরুচরণের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কার্ড বিতরণের কাজও চলছিল। বাড়িতে মা একা বলে বিয়ের কাজকর্ম দেখভাল করার জন্যই তাঁর দিদি রাণুবালা শ্বশুরবাড়ি থেকে কয়েক দিন আগে এসেছিলেন। তার ঠিক আগে এমন ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার। কথা বলতে পারছেন না নিহতের মা ও দিদি। গ্রামের লোকজনও শোকগ্রস্ত। সৌমিত্র বলেন, ‘‘ক’দিন বাদেই বাড়িতে বিয়ে। তারই প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু কী যে হয়ে গেল!’’ কাশীপুরেরই তিলাহিড় গ্রামে গুরুচরণের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেখানেও এই দুঃসংবাদ পাঠানো হয়। নিহতের আত্মীয়স্বজনদের ধারণা, আততায়ী পরিচিত কেউ। না হলে বাড়ির ছাদের সিঁড়ি ঘরের যে দরজা নেই, তা বাইরের কারও জানার কথা নয়। পুলিশ জানিয়েছে, রাণুবালাদেবীই থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘এই খুনের পিছনে যে বা যারাই থাকুক, পুলিশকে বলা হয়েছে খুঁজে বের করতে হবে। কী কারণে ওই যুবককে এ ভাবে খুন হতে হল, তা জানা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cossipore Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE