Advertisement
E-Paper

টাকা ফেরত না পেয়ে ছক কষেই খুন

আগাগোড়া পরিকল্পনা করে নেমেছিল ওরা। খুন করে গাড়ির পিছনের আসনে দু’জনের মাঝে বসিয়ে রাখা হয়েছিল দেহ। যেন কোনও যাত্রী ঘুমাতে ঘুমাতে সফর করছেন। ঠিক ছিল বাঘমুণ্ডির পাহাড়ের কোনও খাদে দেহ ফেলে প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করা হবে। কিন্তু বাধ সাধল পুলিশের টহল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৯

আগাগোড়া পরিকল্পনা করে নেমেছিল ওরা। খুন করে গাড়ির পিছনের আসনে দু’জনের মাঝে বসিয়ে রাখা হয়েছিল দেহ। যেন কোনও যাত্রী ঘুমাতে ঘুমাতে সফর করছেন। ঠিক ছিল বাঘমুণ্ডির পাহাড়ের কোনও খাদে দেহ ফেলে প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করা হবে। কিন্তু বাধ সাধল পুলিশের টহল।

বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির রাধাকৃষ্ণপুরের যুবক মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মী স্বপন গড়াইয়ের দেহ নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের টহল দেখে ছক পাল্টে ফেলে আততায়ীরা। লধুড়কা মোড় থেকে গাড়ি কাশীপুরের দিকে ঘুরিয়ে নেয় তারা। বাহুকাটা মোড় পেরিয়ে কিছুটা গিয়েই তারা রাস্তার ধারে দেহটি ফেলে পুরুলিয়ার দিকে চলে যায়। স্বপন-খুনে অভিযুক্তদের জেরা করে এমনই তথ্য পেয়েছে বলে দাবি করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।

২৬ সেপ্টেম্বর হুড়া থানার বাহুকাটা গ্রামের অদূরে লধুড়কা-কাশীপুর রাস্তার পাশ থেকে প্রথমে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হিসেবেই স্বপনের দেহ মেলে। পরে ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার আগের সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ স্বপন। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গঙ্গাজলঘাটির সিরসা গ্রামের অপু গোস্বামী নামে এক ব্যক্তি স্থানীয় কোন সংস্থায় চাকরি করে দেওয়ার জন্য স্বপনকে এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কাজ দিতে পারেননি। অপু টাকাও পাননি।

পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় তাদের জানিয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অপু ফোন করে স্বপনকে ডাকে। প্রথমে গড়িমসি করলেও স্বপন বেরোন। অপুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয় পাশের একটি গ্রামে। গাড়ি নিয়ে এসেছিল অপু। সঙ্গে ছিল মাণিক দাস নামে একজন, যার দাবি, চাকরি দেওয়ার নাম করে স্বপন তার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছিল। যদিও সে চাকরি পায়নি। ওই গাড়ির চালকের নাম গোপন বাউরি। গোপন ও মাণিকের বাড়ি গঙ্গাজলঘাটি থানা এলাকাতেই। স্বপনকে তারা গাড়িতে তুলে দুর্লভপুর মোড়ে নিয়ে যায়। সেখানে টাকা ফেরত নিয়ে অপু ও মাণিকের সঙ্গে স্বপনের এক দফা তর্কাতর্কি হয়। তখন স্বপন তাঁদের জানিয়েছিলেন, বাঁকুড়ায় তিনি টাকার ব্যবস্থা করবেন। তারা স্বপনকে গাড়িতে তুলে বাঁকুড়ার দিকে রওনা দেয়।

পথে একটি দোকান থেকে নাইলনের দড়ি কেনে অপু। গাড়িতে টাকা নিয়ে ফের বচসা শুরু হয়। স্বপনকে খুনের চেষ্টা হয়। গাড়ি বাঁকুড়ার শহরের কাছে হেবির মোড় এলাকায় পৌঁছনোর কিছুটা আগে গতি কমে। তখন দরজা খুলে পালানোর চেষ্টা করেন স্বপন। তিনজনে গাড়ি থেকে নেমে পিছু ধাওয়া করে তাঁকে ধরে ফেলে। পাশের একটি জঙ্গলে তারা স্বপনকে টেনে নিয়ে গিয়ে নাইলনের দড়ি তার গলায় পেঁচিয়ে খুন করে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা তাদের কাছে স্বীকার করেছে, দু’জন স্বপনের হাত-পা ধরে ছিল আর অপু দড়ি পেঁচিয়ে তাঁকে খুন করে। দেহ গাড়িতে তুলে পুরুলিয়ার দিকে রওনা দেয়।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘জেরায় অভিযুক্তেরা স্বীকার করেছে দেহটি বাঘমুণ্ডির কোনও জঙ্গলে বা পাথরের খাদে ফেলে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আততায়ীদের। তাতে দেহ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকত বলে মনে করেছিল আততায়ীরা। কিন্তু রাস্তায় পুলিশের টহল দেখে তারা বাহুকাটার কাছে ফাঁকা জায়গায় ঝোপের মধ্যে দেহটি ফেলে রেখে যায়। পরে পুরুলিয়া থেকে রঘুনাথপুর দিয়ে গঙ্গাজলঘাটিতে ওরা ফিরে যায়।’’

এ দিকে পরের দিনও স্বপন বাড়ি না ফেরায় স্থানীয় লোকজন অপুকে চেপে ধরে। কারণ তার ফোন পেয়েই স্বপন বেরিয়েছিলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অপু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জেরায় তখনই সে খুনের কথা স্বীকার করে বলে পুলিশ জানাচ্ছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বাকি দুই অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ ধৃতদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করে এবং খুনে ব্যবহৃত দড়ি ও স্বপনের ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। বর্তমানে তিনজনেই জেলে রয়েছে। তবে কিছু বিষয় নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। যেমন, ভাড়া গাড়ির চালক খুনের ঘটনায় কেন যুক্ত হল, তা স্পষ্ট নয়।

Murder Police Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy