Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আইডি জটে কন্যাশ্রীর টাকা, সমস্যায় তরুণী

বিঘা দেড়েক জমি আর দিনমজুরির আয়ে কোনও রকমে চলে সংসার। তবু মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিয়ে কলেজে ভর্তি করেছিলেন নানুরের কড়েয়া গ্রামের বিপদতারণ পাল। ভেবেছিলেন, কন্যাশ্রীর টাকায় ছোট মেয়ে প্রতিমাকে বিএ পাশ করাবেন। অভিযোগ, নিয়মের ফাঁসে আটকে গিয়েছে কন্যাশ্রীর টাকা। এ ব্যাপারে বিডিও-র (নানুর) দ্বারস্থ হয়েছেন ওই তরুণী। 

প্রতিমা পাল। নিজস্ব চিত্র

প্রতিমা পাল। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৬
Share: Save:

বিঘা দেড়েক জমি আর দিনমজুরির আয়ে কোনও রকমে চলে সংসার। তবু মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিয়ে কলেজে ভর্তি করেছিলেন নানুরের কড়েয়া গ্রামের বিপদতারণ পাল। ভেবেছিলেন, কন্যাশ্রীর টাকায় ছোট মেয়ে প্রতিমাকে বিএ পাশ করাবেন। অভিযোগ, নিয়মের ফাঁসে আটকে গিয়েছে কন্যাশ্রীর টাকা। এ ব্যাপারে বিডিও-র (নানুর) দ্বারস্থ হয়েছেন ওই তরুণী।

বিপদতারণবাবু বছর দু’য়েক আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অভাবের সঙ্গে লড়েই প্রতিমাকে পড়িয়েছেন। ২০১৪ সালে কড়েয়া কুড়চণ্ডী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১৬ সালে কীর্ণাহার তারাপদ স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরিবারের দাবি, কড়েয়া স্কুলে পড়াশোনার সময় কন্যাশ্রী-১ বা কে-১ প্রকল্পের টাকা পেলেও কীর্ণাহারে পড়ার সময় জটিলতায় (আইডি ট্রান্সফার না হওয়া) তা বন্ধ হয়ে যায়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে তিনি কে-১ প্রকল্পের টাকা আর পাননি।

কে-১ প্রকল্পে ১৩-১৮ বছর বয়সি স্কুলের মেয়েরা বর্তমানে বছরে এককালীন ১০০০ টাকা পান৷ বিডিও-র কাছে প্রতিমা জানিয়েছেন, কীর্ণাহারের স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কে-১ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তির আর্জি জানিয়েছিলেন। সেখান থেকে বলা হয়, কড়েয়া হাইস্কুল থেকে তাঁর ‘আইডি ট্রান্সফার’ করা হয়নি। কড়েয়া স্কুলের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করলে বলা হয়, তাঁদের তরফে আইডি ট্রান্সফার সংক্রান্ত যা করণীয়, তা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালে লাভপুর শম্ভুনাথ মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন প্রতিমা। ভেবেছিলেন, কন্যাশ্রীর টাকা পেয়ে যাবেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৮-১৯ বছর বয়সি দুঃস্থ মেয়েদের (কলেজ ছাত্রী) উচ্চশিক্ষায় উত্‍সাহ দিতে চালু হয়েছে কন্যাশ্রী-২ বা কে -২ প্রকল্প৷ তাতে এককালীন ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কে -১ এবং কে -২ তে নাম লেখাতে গেলে পরিবারের মাসিক রোজগার ১০ হাজার টাকার মধ্যে হতে হবে৷ বিবাহিত হলে হবে না৷ বিডিও-র কাছে আবেদনে প্রতিমা জানিয়েছেন, শেষ অবধি আইডি ট্রান্সফার না হওয়ায় কলেজে ভর্তির এক বছর পরেও তিনি কে-২ প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাতে পারেননি। ফের দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে যান। তাঁর অভিযোগ, দু’জায়গা থেকেই তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর টাকা পাওয়ার মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে।

২০১৭-র মাঝামাঝি কলেজ ছেড়ে দেন প্রতিমা। তাঁর মা মিঠুদেবীর কথায়, ‘‘অভাবের মধ্যেও কষ্ট করে মেয়েকে এত দিন পড়িয়েছি। ভেবেছিলাম, কন্যাশ্রীর টাকা পেলে কলেজে পড়তে পারবে।’’ বিপদতারণবাবুর আক্ষেপ, ‘‘রাজ্য সরকার মেয়েদের পড়াশোনার জন্য প্রকল্প চালু করেছেন। সেই সুযোগ পেলাম না বলে মেয়েকে আর পড়াতে পারলাম না।’’ তবে টাকা হাতে এলে মেয়েকে ফের পড়ানোর ভাবনাও রয়েছে তাঁর। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অধীরকুমার দাস জানিয়েছেন, আইডি ট্রান্সফার সংক্রান্ত সমস্যায় অনেক ছাত্রীকেই এই সমস্যায় পড়তে হয়। এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও সজাগ থাকা উচিত। নিয়মের সরলীকরণ করা যায় কিনা, তা দেখা উচিত সরকারের। কড়েয়া কুড়চণ্ডী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওই ঘটনা আমি এই স্কুলে যোগ দেওয়ার আগে হয়েছে। যে আধিকারিক ওই কাজ দেখাশোনা করতেন, তিনি বদলি নিয়ে অন্য স্কুলে চলে গিয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হয়েছে, এই স্কুলের তরফে যা করার ছিল, তা করা হয়েছে।’’ অন্য দিকে, কীর্ণাহার তারাপদ স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শুভশ্রী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ওই ছাত্রী কিছু জানায়নি। বিডিওকে জানিয়েছে। তাই বিডিও-ই বলতে পারবেন। নথিপত্র না দেখেও বলা সম্ভব নয়।’’ নানুরের বিডিও অরূপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আইডি ট্রান্সফার সংক্রান্ত সমস্যায় ওই ছাত্রীর নাম নথিভুক্ত করা যায়নি। নতুন করে নথিভুক্তির জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree Scheme Kanyashree Nanoor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE