প্রতীকী ছবি।
শাসকদলের দ্বন্দ্ব রোগ ঘুচছে না আড়শায়। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অনাস্থা আনতে বারণ করেছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই অনাস্থায় অপসারণ করা হল আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ সুশীলা মাহাতোকে।
গত ২০ জুন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুশীলাদেবীর বিরুদ্ধে মহকুমাশাসকের কাছে অনাস্থার চিঠি দেন ওই স্থায়ী সমিতির সদস্যেরা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও এলাকার জেলা পরিষদ সদস্যও এই চিঠিতে সই করেছিলেন। বিডিও (আড়শা) ফারহানাজ খানম জানান, বৃহস্পতিবার পূর্ত স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষের অনাস্থা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া সদর) ইন্দ্রদেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বৈঠকে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়েছে।’’
দলের জেলা নেতৃত্ব পঞ্চায়েত ভোটের আগে অনাস্থা আনা যাবে না বলে নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু কী এমন ঘটল যে ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে এক জনকে সরিয়ে যাঁকে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই সুশীলাদেবীকেও অপসারণ করতে হল? পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৌশল্যা সহিসের দাবি, ‘‘উনি বিভিন্ন বৈঠকে আসছিলেন না। ফলে কিছু কাজ আটকে যাচ্ছিল। সে কারণে দলে আলোচনা করেই তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়।’’ দলের আড়শা ব্লক সভাপতি আনন্দ মাহাতোও বলেন, ‘‘সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় কাজ আটকে রয়েছে। তাই তাঁকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’ কিন্তু এই অনাস্থায় তো দলের জেলা নেতৃত্বের সায় ছিল না? আনন্দবাবুর স্বীকারোক্তি, ‘‘সেটা অবশ্য সত্যি। কিন্তু স্থানীয় পরিস্থিতির বিচারে সদস্যদের মানানো যাচ্ছিল না। তবে এই অনাস্থায় দলে কোন প্রভাব পড়বে না।’’
যদিও দলের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত সমিতির কিছু নির্মাণ কাজ নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে দলের অন্য একটি গোষ্ঠীর বনিবনা হচ্ছে না। এই অপসারণ তারই ফল। তাঁদের প্রশ্ন, যদি দলের জেলা নেতৃত্বের এই অনাস্থায় অনুমোদন ছিলই না, তাহলে দলের স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য এবং এই স্থায়ী সমিতির সদস্য সুষেণচন্দ্র মাঝি এই অনাস্থায় সায় দিলেন কেন? দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি সুষেণবাবু বলেন, ‘‘দল চেষ্টা করেছিল অনাস্থা ঠেকাতে। কিন্তু সম্ভব হল না। এর বেশি আর কিছু বলব না।’’ অপসারিত কর্মাধ্যক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘অনাস্থা যাতে না হয় সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবু অনাস্থা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল মহল জানাচ্ছেন, আড়শায় অনাস্থা আগেও বার বার এসেছে। তার জেরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এই পঞ্চায়েত সমিতিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়ার পরে শাসকদলের প্রতিক্রিয়া ছিল, এলাকার মানুষ উন্নয়নের লক্ষ্যেই তাঁদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়েছেন। পরবর্তীকালে কংগ্রেস-বাম সদস্যেরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ক্ষমতা আরও বেড়েছে শাসক শিবিরের। কিন্তু এই পঞ্চায়েত সমিতি থেকে অনাস্থার ভূত তাড়ানো যায়নি।
২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তুষ্টরানি রাজোয়াড় সভাপতির কুর্সিতে বসেন। বছর দেড়েক পরে ২০১৪-র ডিসেম্বরে অনাস্থায় সরতে হয় তাঁকে। তার মাস তিনেকের মধ্যে ফের আনাস্থা আসে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অশোককুমার মাঝির বিরুদ্ধে। ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে তাঁকেও সরতে হয়। দল সূত্রের খবর, এরপর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতিকে ঘিরেও অনাস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে সেই অনাস্থা ঠেকানো গেলেও পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষের অনাস্থা ঠেকানো গেল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy