মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। পাশে মুকুল রায়।—অভিজিৎ সিংহ।
রাইপুরের তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতোর হত্যাকারীদের কড়া শাস্তি চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাইপুরের ব্লক তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি অনিলবাবুকে খুনের ঘটনা গোটা রাইপুর তো বটেই, বাঁকুড়া জেলাতেও আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। ওই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে দড়িত সন্দেহে অনিলবাবুরই অনুগামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু, পুলিশি তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে সিআইডি তদন্তের দাবি তুলেছেন নিহত নেতার স্ত্রী তথা বর্তমানে রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুলেখা মাহাতো।
সোমবার রাইপুরের ফুলকুসমার বালি মাঠের প্রশাসনিক সভায় সেই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই রাইপুর ব্লক তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা অনিল মাহাতো খুন হয়ে গিয়েছেন। তাঁর খুনিদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। আমি চাইব তারা যেন কড়া শাস্তি পায়।’’ এর পরেই তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘খুনিদের ‘প্রোটেকশন’ (নিরাপত্তা) দেওয়ার কোনও কারণ নেই।’’
জেলা তৃণমূল এবং পুলিশের একটি অংশ মনে করছে, এই মন্তব্যের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত পুলিশি তদন্তের উপরেই আস্থা প্রকাশ করেছেন।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে মটগোদায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে গুলি করে খুন করা হয় অনিলবাবুকে। ঘটনার পর দিন সুলেখাদেবী তৎকালীন রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর সাত অনুগামীর বিরুদ্ধে রাইপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে। ধাপে ধাপে পুলিশ সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। তবে, তদন্তে নেমে পুলিশ অনিলবাবু খুনে অন্য সূত্র পায় পুলিশ। এর পরেই গ্রেফতার করা হয় রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তথা অনিলবাবুর ঘনিষ্ঠ অনুগামী রাজকুমার সিংহের ভাই সনৎ সিংহ, অনিলবাবুর গাড়ির চালক জগন্নাথ নামাতা এবং এলাকার এক সিপিএম নেতা অশোক ঘোষকে। তদন্তকারীদের দাবি ছিল, সনৎ-ই চক্রান্ত করে খুন করিয়েছেন অনিলবাবুকে। সনতের নির্দেশে জগন্নাথ গুলি করেন ওই নেতাকে। যে বন্দুক দিয়ে অনিলবাবুকে গুলি করা হয়েছিল, তা সরবরাহ করেছিলেন সিপিএম নেতা অশোকবাবু বলেও পুলিশের দাবি। অথচ এই সনৎই অনিলবাবু খুনের প্রতিবাদে এক সময় সবচেয়ে বেশি সরব হয়ে পথে নেমেছিলেন।
খাতড়া আদালতে জমা পড়া পুলিশের চার্জশিটেও ওই তিন জনকেই এই খুনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। প্রথমে যে সাত জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছিল, তাঁরা আদৌ এই খুনের ঘটনায় জড়িত নন বলেও তদন্তকারীদের দাবি। পুলিশের ‘ক্লিনচিট’ পেয়ে অভিযুক্ত সাত জন দু’হাজার টাকার বন্ডে মামলা থেকে শর্তাধীন রেহাই পেয়েছেন। অন্য দিকে, পুলিশের চার্জশিটে নাম থাকার পরেও জামিন পেয়ে গিয়েছেন সনৎ ও জগন্নাথ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেও রাইপুরে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সুলেখাদেবীর বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীই আমাদের অভিভাবক। উনি যা করবেন ভালই করবেন।’’ তবে, বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজকুমার সিংহ। অনিল-হত্যার পরে পরেই ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জগবন্ধু মাহাতোকে।
এ দিন তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাকে তো প্রায় খুনি সাজিয়েই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সর্ষের মধ্যেই ভূত বেরলো। পুলিশের তদন্তে যাঁরা অনাস্থা প্রকাশ করছিলেন, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে তাঁদের আর কোনও ধন্দ থাকা উচিত নয়। আশা করি, রাইপুরের মানুষও সব বুঝতে পেরেছেন।’’
জঙ্গলমহলের ব্লকে সভা। তাই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গ। জঙ্গলমহলের শান্তি রক্ষা করতে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও সতর্ক হতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জঙ্গলমহলের শান্তি বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। শান্তি বিঘ্নিত হতে দেবেন না।’’
জেলায় যাতে সম্প্রীতি বজায় থাকে, সে বিষয়েও প্রশাসনকে কড়া হতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। রাতে রাতে মুকুটমণিপুরে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, মঙ্গলবার স্থানীয় বারোঘুটুতে তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy