Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Crime

মাদক মামলা বাড়ছে কেন, প্রশ্ন

আইনজীবীদের একাংশ ও বিরোধী বিজেপির দাবি, মাদক কারবার থাকলেও মামলা বা অভিযুক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে অন্য সমীকরণ কাজ করেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২০ ০১:০৯
Share: Save:

মাদক আইনে অভিযুক্তের সংখ্যা কি ক্রমশ বাড়ছে? জেলায় কি মাদক কারবারের রমরমা চলছে? বুধবার সিউড়ি আদালত চত্বরে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে পুলিশি নিরাপত্তার ‘ফাঁক’ গলে মাদক আইনে এক অভিযুক্তের পালিয়ে যাওয়ার পরই এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। মাদক আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। পুলিশ অবশ্য তা মানেনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার মাদক মামলার জন্য বিশেষ আদালতের বিচারক (এডিজে ১) ধরণীধর অধিকারীর এজলাসের সামনে খুব ভিড় ছিল। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই পালিয়ে ছিলেন অভিযুক্ত। তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই পুলিশকর্মীদের তৎপরতায় ধরা পড়েন অভিযুক্ত। ঘটনার পরই আইনজীবীদের একাংশ আদালত চত্বরে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। বিশেষ করে মাদক আইনের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ আদালতের সামনের অংশে। সরকারী আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায়ও একই কথা বলেছেন। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

যে কারণে ওই এজলাসের সমানে ভিড়, তার নেপথ্যে কারণ ঘিরেই প্রশ্নটা উঠেছে। সিউড়ি আদালতের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য বলছে গত বছরে এই বিষয়ক ৮৭টি মামলা ঝুলছে ওই আদালতে। চলতি বছরের দু’মাস কাটতে না কাটতেই নতুন করে আরও ২০টি মামলা হয়েছে। সিউড়ি জেলা সংশোধনগারের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে প্রায় ৯০ জন বন্দি মাদক আইন সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত। জেলা বন্দিদের মধ্যে পালা করে সিউড়ির বিশেষ আদালতে হাজির করাতেই হয়। সঙ্গে থাকেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিত্য নতুন অভিযুক্ত। সঙ্গে থাকেন তাঁদের পরিজনেরা। ফলে প্রতিদিন ওই আদালত চত্বরে ব্যাপক ভিড় হয়। প্রশ্ন উঠছে, জেলা জুড়ে যদি মাদক কারবারের রমরমা না থাকে তাহলে এত সংখ্যক অভিযুক্ত বা মামলা কোথা থেকে হচ্ছে। ব্রাউন, সুগার, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, কোডিন মিশ্রণ বিভিন্ন ধরনের মাদক উৎপাদন, বিক্রি, সঞ্চয় চাষের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জেলা আবগারি দফতরের এক কর্তা আড়ালে বলেই ফেলছেন, ‘‘এত মামলা, অথচ আমাদের কাছেই তেমন খবর নেই!’’

আইনজীবীদের একাংশ ও বিরোধী বিজেপির দাবি, মাদক কারবার থাকলেও মামলা বা অভিযুক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে অন্য সমীকরণ কাজ করেছে। আইনজীবীদের একাংশের দাবি, কখনও অপরাধীদের আটকে রাখার অস্ত্র হিসেবে এই আইনে মামলা দেওয়া হয়। আইনজাবীদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের বেশ কিছুদিন জেলবন্দি রাখতেই ওই ধারাকে আশ্রয় করে পুলিশ। বীরভূমে আগে বেআইনি পোস্ত চাষের রমরমা ছিল। ১৬ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েক বছর লাগাতার পোস্ত চাষের সময় পোস্তর আঠা, পোস্তর খোল ও পোস্তর আঠার সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে ব্রাউন সুগার তৈরির কৌশল রপ্ত করে অনেকে ধরা পড়েছে। বর্তমানে চাষ বন্ধ হলেও সেই মাদক কারবারে ছেদ পড়েনি। কিন্তু রমরমা কারবার চলার সময় যতসংখ্যক মামলা জেলায় হতো সেই সংখ্যা কমে তো নি, বরং বেড়েছে।’’

বিরোধীদের আবার অভিযোগ, শাসকদলের কথা শুনে বিরোধী দলের যে কারও উপর মাদক আইনে মামলা ঠুকে দেওয়া দস্তুর করে ফেলেছে পুলিশ প্রশাসন। বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের অন্তত ২৫ জন কার্যকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ এই ধারায় মামলা করেছে। উদ্দেশ্যটা হল, অন্তত ছ’মাস আটকে রেখে মনোবল ভেঙে দেওয়া। এমন অনেকের বিরুদ্ধে গাঁজার মামলা দেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে গাঁজার কোনও যোগ নেই। এমনও হয়েছে জেলে থাকাকালীনও আমাদের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই মামলা দিয়েছে পুলিশ।’’ বিজেপি নেতাদের দাবি, সত্যিই যাঁরা মাদক কারবারে যুক্ত তাদের পুলিশ নিশ্চয়ই ধরুক। কিন্তু এই আইনটিকে অস্ত্র করে মামলার সংখ্যা বাড়ানো বন্ধ হোক।

পুলিশ অবশ্য এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের দাবি, কম মাত্রা ও বেশি মাত্রায় মাদক পেলে দু’ধরনের মামলা হয়ে থাকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এই ধারায় মামলা হলে অভিযুক্তের সঙ্গে বাজেয়াপ্ত মাদক আদালতে পেশ করতে হয়। একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনেই সেটা সিল করা হয়। মাদক না পেলে মামলা হবে কেন? জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘মাদক কারবারে যুক্তদেরই তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশ ধরছে ও মামলা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে এই নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ আমার কাছে কেউ করেন নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Drugs Drug Addiction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE