আটক: বিরোধীদের গাড়ি ঘিরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শিবপুর মৌজায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
শিবপুর মৌজায় জমি নিয়ে রাজনীতি চলছেই। এ বার চাষিদের সংঘবদ্ধ করতে অনিচ্ছুক জমিদাতা কৃষকদের নিয়ে একটি সভা করলেন রাজ্যের বিরোধী দল নেতা আব্দুল মান্নান। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ, পৌরসভা স্তরে যারা দুর্নীতি করছে তাঁদের বিষয়েও তদন্ত হবে। আমরা সেই সব দুর্নীতি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব।’’ সভায় ছিলেন, রাজ্যের বিরোধী দল নেতা আব্দুল মান্নান, আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, স্থানীয় সিপিএম নেতা সমীর ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা তপন সাহা প্রমুখ।
আব্দুল মান্নান চাষিদের সংঘবদ্ধ করতে তিনি আরও বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে যারা জমি ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করেছে আজ তারাই জমি কেড়ে নিচ্ছে, সারা রাজ্যে এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।’’ সভাস্থল থেকে কিছুটা দূরে রাস্তায় আগাম জমায়েত হয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। পরে সভা শেষে পুলিশের সামনেই বিরোধী দল নেতা ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। পুলিশ বিক্ষোভকারী তৃণমূল নেতা কর্মীদের সরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
বাম আমলে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের নামে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। সেই সময় আন্দোলনে নেমেছিল বিরোধী দল তৃণমূল। পরবর্তীকালে রাজ্যে পালা বদলের পরে এই জমিতে কেমিক্যাল হাব তৈরির কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন শিল্প মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, এই সিদ্ধান্ত বদল করে মুখ্যমন্ত্রী এই জমিতে ‘গীতবিতান’ নামক আবাসন প্রকল্প তৈরির কথা ঘোষণা করেন। এরপরে জমিদাতা কৃষকদের একাংশ জমি দিতে রাজি হয়নি। ‘শিল্প হলে জমি দেব, নইলে জমি ফিরিয়ে দিতে হবে’ এই দাবিতে তাঁরা আন্দোলনেও নামেন। জমি ফেরত চেয়ে জেলাশাসক এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দেন অনিচ্ছুক কৃষকেরা। কিন্তু, এই জমিতে শুরু হয় আবাসন নির্মাণের কাজ। এই সংক্রান্ত বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি সংস্থার জনস্বার্থ মামলা করে। সেই প্রেক্ষিতে জমি কেনাবেচায় স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।
সভা শুরুর আগে থেকেই এলাকায় গোলমালের আশঙ্কায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সভাস্থলে বিক্ষোভ দেখাতে আগে থেকেই রাস্তার উপর জমায়েত হতে শুরু করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্মীরা। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বিরোধী দল নেতা ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের গাড়ি পৌছাতেই বোলপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর শেখ ওমরের নেতৃত্বে কর্মী সমর্থকেরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এলাকায় উত্তেজনার মধ্যেই এ দিন সভা শুরু হয়। সভাস্থলে দাঁড়িয়ে স্থানীয় অনিচ্ছুক জমিতাদা চাষিদের মধ্যে শের মহম্মদ খাঁ, খুশিদ আলি, শেখ হায়দার আলি বলেন, “আমরা শিল্পের জন্য জমি দিয়েছি। শিল্প হলে জমি দেব। শিল্প হলে আমরা কাজ পাব। আবাসন প্রকল্প হলে আমাদের কোনও লাভ নেই, সরকারের লাভ। তাই আমরা ঠিক করেছি, রক্ত দিয়ে দেব তা-ও জমি নিতে দেব না।”
সভা শেষেও একই ভাবে পুলিশের সামনেই গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু হয়। সভায় আব্দুল মান্নানের দাবি, “ওরা তো ভয় পাচ্ছে। আমরা ওদের দুর্নীতিগুলো খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে আনছি তাই। জেলা পরিষদ, পুরসভা স্তরে যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিষয়েও তদন্ত হবে। আমরা সেই সব দুর্নীতি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব। সিঙ্গুরে যারা জমি ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করেছে আজ তারাই জমি কেড়ে নিচ্ছে, সারা রাজ্যে এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।”
মামলার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “ওরা যদি শিল্প করতে পারে এখানকার চাষিরা নিজেরা মজুর হিসাবে খেটে কাজ করে দেবে। কিন্তু, শিল্প না হলে জমি দেবে না।”
এ দিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূল কোনও বিক্ষোভ দেখায়নি। ওখানকার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। যারা উন্নয়নের পক্ষে, বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ৩৪ বছর সিপিএম কিছু তো করেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy