Advertisement
১১ মে ২০২৪
Panchayat Election

শাসককে দূষণ-তিরে বিঁধে প্রচারে বিজেপি

সর্বত্র কার্বনের কালো গুঁড়ো জমতে থাকে। তা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করে বারবার পথে নেমেছিল তৃণমূল।

লোকের বাড়িতে গিয়ে সেখান থেকে কার্বনের গুঁড়ো তুলে দেখাচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

লোকের বাড়িতে গিয়ে সেখান থেকে কার্বনের গুঁড়ো তুলে দেখাচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৬
Share: Save:

তৃণমূলের অস্ত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রচারে নামল বিজেপি।

সিপিএমের আমলে গড়ে উঠেছিল বড়জোড়া শিল্পাঞ্চল। এর কয়েক বছরের মধ্যেই এলাকাবাসী মূলত স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলির বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে সরব হন। বাসস্থান থেকে কৃষিজমি, পুকুরের জল— সর্বত্র কার্বনের কালো গুঁড়ো জমতে থাকে। তা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করে বারবার পথে নেমেছিল তৃণমূল। তারপরে এক দশক পেরিয়ে গেলেও দূষণের ছবিটা বদলায়নি। স্থানীয়দের দাবি, দূষণের মাত্রা বরং বেড়েছে। সেই অসন্তোষকে অস্ত্র করেই তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দূষণ নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতার অভিযোগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে যাচ্ছেন বড়জোড়ার বিজেপি কর্মীরা।

বিজেপির নেতা-কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেঝে ও আসবাবের উপর থেকে কালি হাতে তুলে নিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছেন। যদিও বড়জোড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমাদের সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে অনেক আগেই পদক্ষেপ করেছে।’’

বিজেপির বড়জোড়া ১ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি গোবিন্দ ঘোষের দাবি, ‘‘কারখানায় নতুন করে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। উল্টে বড়জোড়া ও আশপাশের গ্রামের মানুষ কারখানাগুলোর দূষণে জেরবার। প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ভরে গেলেও কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। স্পঞ্জ আয়রণ কারখানাগুলো উল্টে একের পর এক ইউনিট বাড়িয়ে কারখানার সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। জনশুনানির নামে প্রহসন হচ্ছে।’’

বিজেপির যুব মোর্চার বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ করের অভিযোগ, ‘‘বহু কারখানা দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালায় না। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি দফতর বড়জোড়ায় চালু করলেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’’ তিনি জানান, বড়জোড়ার বাতাস কতো বিষাক্ত তা বিভিন্ন অ্যাপ খুলে বাসিন্দাদের তা বিজেপি কর্মীরা দেখাচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘরের কালি দেখানোর পাশাপাশি, এলাকায় যে মানুষের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ ও চর্মরোগ বাড়ছে সে কথাও তাঁরা তুলে ধরছেন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এটি দলের বড়জোড়া শাখার নিজস্ব কর্মসূচি।

তবে বড়জোড়ার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শুধু ভোটের আগে নয়, রাজনৈতিক দলগুলির দলমত নির্বিশেষে দূষণ নিয়ে সুষ্ঠ পদক্ষেপ করা উচিত। তবে বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘অনেক আগেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রশাসন ও কারখানা মালিকদের নিয়ম করে বলা হয়, কারখানা অবশ্যই হোক। তবে দূষণ যেন না ছড়ায়।’’

তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের এনভায়রমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার অরূপ দে বলেন, ‘‘বড়জোড়ায় একটি ‘মনিটরিং স্টেশন’ আছে। সেখান থেকে নিয়মিত কারখানাগুলি পরিদর্শন করা হয়। আরও নজরদারি বাড়ানো হবে।’’

দূষণ বরদাস্ত করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে বণিক সংগঠনগুলিও। ‘পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, ‘‘আমরা দূষণের বিরুদ্ধে। কয়েকটি কারখানার জন্য সবাই কেন সমস্যায় পড়বে? প্রয়োজনে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।’’ ‘বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স’-এর সম্পাদক (শিল্প) সিদ্ধার্থ সেন বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই কারখানা চালাতে হবে। কোথাও সমস্যা থাকলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’ বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, ‘‘কোনও কারখানা নিয়ম ভাঙলে সংগঠন পাশে থাকবে না। প্রয়োজনে প্রশাসন পদক্ষেপ নিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Election barjora BJP Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE