বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলবাসীর ভরসা খাতড়া মহকুমা হাসপাতাল। অথচ এখানে নেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চিকিৎসক, প্রশাসনিক কর্তা। ঘাটতি রয়েছে নার্স-সহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও। যে কারণে খাতড়া হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
সূত্রের খবর, এখানে চর্ম, অস্থি, মানসিক রোগের চিকিৎসক এক জনও নেই। যার ফলে ওই তিনটি বহির্বিভাগ বন্ধ। এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। এ ছাড়াও অ্যানাস্থেটিস্ট- সহ আরও কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসক ঘাটতি রয়েছে।
তবে খাতড়া মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসকের অভাবের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সে অভাব কবে মিটবে, তার সদুত্তর মেলেনি।
খাতড়া মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বহির্বিভাগে রোজ গড়ে প্রায় আটশো
জন রোগী আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকেন প্রায় আড়াইশো জন। তবে শীতকাল বাদে বছরের অন্য সময়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
রাজ্যে পালাবদলের পরে বাঁকুড়া সদর মহকুমার ছাতনা, ওন্দা ও বড়জোড়ায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। বিষ্ণুপুরেও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হয়েছে। যদিও বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল খাতড়া মহকুমায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল
তৈরি হয়নি। কেন বঞ্চিত, তারও সদুত্তর প্রশাসনের তরফে পাওয়া যায়নি।
খাতড়া সহ জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের ভরসা তাই খাতড়া মহকুমা হাসপাতাল। কিন্তু বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক না থাকার জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন। অস্থি বিভাগের চিকিৎসক না থাকায় দুর্ঘটনা-সহ নানা ক্ষেত্রের আহতদের বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করতে হয়। যার ফলে আহতদের চিকিৎসা পেতে সময় লাগে। যাতায়াতে খরচও গুনতে হয়।
রানিবাঁধের ঝিলিমিলি থেকে বাঁকুড়া শহরের দূরত্ব প্রায় আশি কিলোমিটার। ওই এলাকার বাসিন্দা সুরেশ হেমব্রম বলেন, ‘‘মানসিক সমস্যা হোক কিংবা হাড়ের সমস্যা, এত দূর থেকে সেই বাঁকুড়া মেডিক্যালেই আমাদের যেতে হয়। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে যা খরচবহুল। তাই মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ করা জরুরি।’’
সারেঙ্গা থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। সারেঙ্গার যুবক কৌশিক ষন্নিগ্রহী বলেন, ‘‘চর্ম রোগের চিকিৎসকও খাতড়ায় নেই! এ জন্যও বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে যেতে হয় বাসিন্দাদের।’’
অ্যানাস্থেটিস্ট বা অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে অজ্ঞান করার চিকিৎসকও প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। এতে জরুরি পরিষেবা থেকে সন্তান প্রসবের সময় অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। ঘাটতি রয়েছে প্রচুর নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও।
বিভিন্ন আধিকারিকের পদ খালি থাকায় প্রশাসনিক কাজকর্মেও বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। মহকুমা হাসপাতাল হলেও নেই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, ফেসিলিটি ম্যানেজার, কোয়ালিটি ম্যানেজার প্রভৃতি।
খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার বিশ্বরূপ সনগিরি জানান, চিকিৎসক, প্রশাসনিক কর্তা থেকে নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির ঘাটতির বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো রয়েছে। তাঁর দাবি, মহকুমা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দায়িত্বও তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে। তিনি ছাড়া প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখার আর সে রকম কেউ নেই। যার ফলে সমস্যা হচ্ছে। সবই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)