Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
নয়া মহকুমা ঝালদা ও মানবাজার

মহকুমা ঘোষণায় উচ্ছ্বাস

সকাল থেকেই অধীর অপেক্ষায় ছিলেন বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে ঘোষণা করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল ঝালদা ও মানবাজার। অবশেষে মহকুমার স্বীকৃতি পেল ওই দুই জনপদ।

মমতা: মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী।  ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও সুজিত মাহাতো।

মমতা: মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও সুজিত মাহাতো।

প্রশান্ত পাল ও সমীর দত্ত
পুরুলিয়া ও মানবাজার শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

সকাল থেকেই অধীর অপেক্ষায় ছিলেন বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে ঘোষণা করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল ঝালদা ও মানবাজার। অবশেষে মহকুমার স্বীকৃতি পেল ওই দুই জনপদ। কেউ বলছেন মানবাজার তার হৃত গৌরব ফিরে পেল, আবার কেউ আশা করছেন, ঝালদায় এ বার উন্নয়নের চাকা গতি পাবে।

দুই জনপদেই মহকুমার স্বীকৃতি আদায়ের লড়াই শুরু হয়েছিল অনেক আগে। তবে ক’দিন ধরেই চাউর হয়ে গিয়েছিল, অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। মমতা এ বার জেলায় এসে ওই দুই মহকুমা চালু করছেন। তাই শুক্রবার সকাল থেকেই প্রহর গুনছিলেন বাসিন্দারা। ঘোষণার পরেই তাই রাস্তাঘাটে উচ্ছ্বাস চোখে পড়েছে মানুষজনের মধ্যে।

পুরুলিয়া জেলা তৈরি হওয়ার আগে সাবেক মানভূম জেলার সদর ছিল মানভূম। পুরুলিয়ার ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘১৮৩৩ থেকে পাঁচ বছর মানবাজার ছিল মানভূম জেলার সদর কার্যালয়। এতদিন পরে মহকুমা ঘোষণার মাধ্যমে মানবাজারকে তার হৃতগৌরব খানিকটা হলেও ফিরিয়ে দেওয়া হল।’’

কোথায় কী

ঝালদা মহকুমা


ব্লক: ঝালদা১, ঝালদা ২, কোটশিলা, জয়পুর, আড়শা ও বাঘমুণ্ডি


মহকুমাশাসক: সন্দীপ টুডু


মহকুমা পুলিশ আধিকারিক:

কল্যাণ সিংহ রায়

মানবাজার মহকুমা


ব্লক: মানবাজার ১, মানবাজার ২, পুঞ্চা, বোরো, বান্দোয়ান ও বরাবাজার


মহকুমাশাসক: সঞ্জয় পাল


মহকুমা পুলিশ আধিকারিক:

আফজল আবজারা

জেলার কবি স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম দত্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনেছেন এটাই খুশির খবর।’’ বান্দোয়ানের বাসিন্দা সাহিত্যিক মহাদেব হাঁসদা বলেন, ‘‘বান্দোয়ানের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে পুরুলিয়া গিয়ে আদালতের কাজ সেরে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যেত। খরচও অনেক হতো। এ জন্য এই এলাকার অনেক বিবাদ স্থানীয় স্তরে মেটানোর রেওয়াজ রয়েছে। তাতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও ওঠে। মানবাজারে মহকুমা আদালত হলে মানুষের আইনি সহায়তার দিকে ঝোঁক বাড়বে।’’ বাসিন্দাদের আশা, মহকুমা হলে হাসপাতাল, দমকলকেন্দ্রও-সহ নানা পরিষেবা চালু হবে। একসময় পুরসভাও হবে।

মানবাজারের বিধায়ক তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর কথায়, ‘‘দিদি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। এ বার থেকে নতুন ভাবে পথচলা শুরু হল।’’

আরও পড়ুন: হাতির হানায় মৃত্যু হলেই চাকরি

ঝালদাকে মহকুমা করার দাবিটা তুলেছিল মূলত কংগ্রেস, ১৩ বছর আগে। ওই দাবি নিয়ে ঝালদা থেকে পুরুলিয়া শহর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার পদযাত্রা করে কংগ্রেস। তাই ঝালদা মহকুমা হওয়ায় রাজনীতি ভুলে খুশি কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা বিঝায়ক নেপাল মাহাতোও। তিনি বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও মুখ্যমন্ত্রী ঝালদাকে মহকুমা হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ।” ২০০৪ সালের ওই পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন বর্তমানে তৃণমূলের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও। তাঁর কথায়, ‘‘বামফ্রন্ট মহকুমা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করতে পারেনি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মানুষের দাবিকে পূর্ণতা দিলেন।”

ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা প্রত্যন্ত এলাকা ঝালদার উন্নয়নের দাবি দীর্ঘদিনের। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাটার্য ২০০৯ সালে ঝালদায় জলপ্রকল্পের উদ্বোধনে এসে ঝালদাকে মহকুমা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন বটে, কিন্তু সেই কাজ থমকে ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই প্রক্রিয়া গতি পায়।

নতুন মহকুমা পেয়ে খুশী স্থানীয়েরা। ঝালদার ব্যবসায়ী নরেশ অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী মহকুমা হওয়ায় এলাকায় পর্যটন-সহ অন্যান্য শিল্পের সম্ভাবনা বাড়বে।” ঝালদা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই শহরে এখনও উন্নয়নের অনেক কাজ বাকি। তাই মহকুমার স্বীকৃতি চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্তর থেকে দাবি উঠছিল। এতদিনে সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় আশাকরি এ বার এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subdivision
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE