Advertisement
E-Paper

রাস্তায় গুঁড়ি ফেলে রাতে অবাধ লুঠ

ফের একের পর এক গাড়ি আটকে অবাধে লুঠ চলল বড়জোড়ার রাস্তায়। অসহায় মানুষ বারবার বড়জোড়া থানার ল্যান্ড লাইন এবং ‘১০০ ডায়াল’-এ ফোন করেও পুলিশের সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ছিনতাই পর্ব চালানোর পর দুষ্কৃতীরা চম্পট দেওয়ার আধ ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে আসে বড়জোড়া থানার পুলিশ। ক্ষুব্ধ জনতা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় পুলিশকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০১:১২

ফের একের পর এক গাড়ি আটকে অবাধে লুঠ চলল বড়জোড়ার রাস্তায়। অসহায় মানুষ বারবার বড়জোড়া থানার ল্যান্ড লাইন এবং ‘১০০ ডায়াল’-এ ফোন করেও পুলিশের সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ছিনতাই পর্ব চালানোর পর দুষ্কৃতীরা চম্পট দেওয়ার আধ ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে আসে বড়জোড়া থানার পুলিশ। ক্ষুব্ধ জনতা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় পুলিশকে।

রবিবার মাঝরাতে ঘটনাটি ঘটেছে বড়জোড়া-সোনামুখী রাস্তায়, পখন্না গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চাঁদাই ও কাঁটাবাধ গ্রামের মাঝামাঝি। হাটয়াশুড়িয়ায় একটি হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বহু মানুষ। রাতে ফেরার পথে তাঁরা ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়েন। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাত সাড়ে বারোটা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে ছিনতাই। যদিও পুলিশের দাবি, এক ঘণ্টার মধ্যেই ছিনতাই পর্ব শেষ করে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে গাড়ি থামাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। যাতায়াকারী লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ, সোনা-রুপোর গয়না কেড়ে নিয়ে তাঁদের গাড়িতেই বসিয়ে রাখছিল দুষ্কৃতীরা। অন্তত ৩০টি গাড়ি আটকে লুঠ চলে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

পখন্নার বাসিন্দা প্রভাত মণ্ডলের গাড়ি ভাড়া খাটানোর ব্যবসা রয়েছে। গ্রামেরই গৌরাঙ্গ শীট, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সরোজ মণ্ডলদের নিয়ে নিজের গাড়িতে করে নাম সংকীর্তন শুনতে গিয়েছিলেন তিনি। রাত প্রায় দু’টো নাগাদ ফেরার পথে কাঁটাবাঁধ মোড়ের কাছে দেখেন, রাস্তার একপাশে সারসার গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রথমে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি। প্রভাতবাবু জানান, হঠাৎই দুই যুবক তাঁর কাছে এসে গাড়িটিকে সামনে নিয়ে যেতে বললেন। কিছু দূর এগোতেই জনা পাঁচেক যুবক গাড়িতে লাঠি দিয়ে ঘা মারতে থাকে। তারা কেন এ রকম করছে জানতে চাইলে মুখে গামছা বাঁধা এক যুবক গাড়ির হেড লাইট বন্ধ করতে বলে লাঠি দিয়ে তাঁকে মারে। প্রভাতবাবু বলেন, ‘‘আমি প্রতিবাদ করতেই টাঙ্গি হাতে এক জন তেড়ে আসে। বিপদ বুঝে ফের গাড়ির ভিতরেই ঢুকে যাই। টাঙ্গির আঘাত গিয়ে পড়ে গাড়ির ছাদে। আমাদের গাড়ির ভিতরে আটকে রেখে মোবাইল কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিল লুঠেরারা। তার পর মানিব্যাগ থেকে টাকা পয়সা বের করে নিতে লাগল।’’

রাত আড়াইটের পরে ছিনতাইবাজরা চলে গেলে প্রভাতবাবু তাঁর মোবাইল থেকে বড়জোড়া থানার ল্যান্ডলাইনে ফোন করেন। কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি বলে তাঁর অভিযোগ। পরে পখন্না অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি জীতেন ভান্ডারিকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান প্রভাতবাবু। একই ভাবে কীর্তন শুনে ফেরার পথে ছিনতাইবাজদের খপ্পরেই পড়েন পখন্নার আরেক ব্যবসায়ী ধনঞ্জয় গরাই। গাড়ির চালকের মোবাইল ও রুপোর চেন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইবাজেরা। ধনঞ্জয়বাবু নিজের মোবাইল বন্ধ করে গাড়ির ভিতরে গোপন জায়গায় রেখে দেন। তাঁর কাকিমাও সঙ্গে ছিলেন। দুষ্কৃতীরা সোনার দুল খুলে নেয় ধনঞ্জয়বাবুর কাকিমার। দুষ্কৃতীরা সরে যেতেই গাড়ির ভিতর থেকে মোবাইল থেকে ১০০ ডায়াল-এ একাধিক বার ফোন করেন ধনঞ্জয়বাবু। কোনও সাড়া পাননি। শেষে রাত তিনটে নাগাদ পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়ে থানায় ফিরে যায়।

গত এক বছরে একাধিক বার রাস্তায় গাড়ি আটকে অবাধে লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চল বড়জোড়ার বিভিন্ন জায়গা। এ ছাড়া চুরি, ডাকাতি-র মতো ঘটনা তো আছেই। গাড়ির টায়ার চুরির চক্রও রমরমিয়ে চলছে বড়জোড়ায়। প্রতিটি ঘটনার পরেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ। বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না। রবিবার রাতে যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, বছর খানেক আগেও সেখানে একই কায়দায় লুঠ হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশের একটি গাড়িকেও টহল দিতে দেখা যায় এই এলাকায়। কিন্তু রবিবার রাত ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কোনও টহল গাড়িই চোখে পড়েনি ছিনতাইবাজদের হাতে আক্রান্ত লোকজনদের।

সোমবার সকালে বাঁকুড়ার ডিএসপি (প্রশাসন) আনন্দ সরকার, বড়জোড়া থানার আইসি অসিত সিংহ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। ঘটনা প্রসঙ্গে অবশ্য তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। যদিও ঘটনার পর কাউকে গ্রেফতার বা আটক করতে পারেনি পুলিশ। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “নগদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা, কিছু সোনা-রুপোর গয়না চুরি যাওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ ফোনে পুলিশকে না পাওয়ার অভিযোগের ‘সত্য মিথ্যা যাচাই হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন তিনি।

plundering and dacoity barjora dacoity road blockade bole road blockade midnight vehicles midnight plundering
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy