Advertisement
E-Paper

ধৃত সলমনকে নিয়ে সালাউদ্দিন হত্যার তদন্ত, ছুরি কোন দোকানের, খতিয়ে দেখল পুলিশ

পুলিশের দাবি, সলমন বন্ধুকে খুন করার প্রস্তুতি নিয়েছিল অন্তত ১০ দিন আগে থেকে। তারই প্রস্তুতিতে শনিবার সকালে দুবরাজপুরে এসে ধারাল ছুরি কেনে সে।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:০৮
তদন্তে: সলমনকে নিয়ে দুবরাজপুরে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

তদন্তে: সলমনকে নিয়ে দুবরাজপুরে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

ধারাল যে ছুরি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সৈয়দ সালাউদ্দিনের গলার নলি কাটা হয়েছিল, সেই ছুরি কেনা হয়েছিল দুবরাজপুর বাজার এলাকার দোকান থেকে। ইলামবাজারের জঙ্গলে শনিবার রাতে খুন হন বছর একুশের সালাউদ্দিন ওরফে জয়। ওই খুনে মূল অভিযুক্ত তথা নিহতের বন্ধু শেখ সলমনকে মঙ্গলবার দুবরাজপুরে নিয়ে এসে পুলিশ সে কথাই জানতে পারল।

পুলিশের দাবি, সলমন বন্ধুকে খুন করার প্রস্তুতি নিয়েছিল অন্তত ১০ দিন আগে থেকে। তারই প্রস্তুতিতে শনিবার সকালে দুবরাজপুরে এসে ধারাল ছুরি কেনে সে। তার আগে দুবরাজপুরের একটি দোকানে নিজের দু’টি খারাপ হয়ে যাওয়া মোবাইল সারাতে দিয়েছিল সে। এমনকি স্কুটিতে করে বিকেলে বোলপুর যাওয়ার পথে গোপালপুর মোড়ে কোন দোকানে চা খেয়েছিল, পুলিশকে এ দিন সেটাও দেখিয়েছে সলমন। পুলিশ সূত্রে খবর, মূল অভিযুক্তের দাবির সঙ্গে শহরে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মিলে গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘আমরা গোটা ক্রাইম সিন রেকর্ড করছি। প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা তারই অঙ্গ।’’

রবিবার সকালে ইলামবাজারের চৌপাহাড়ির জঙ্গলে সৈয়দ সালাউদ্দিন নামে ওই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের বাড়ি মল্লারপুরের সমন্বয়পল্লিতে। তবে আদি বাড়ি খয়রাশোল থানার আহম্মদপুরে। ঘটনাস্থলেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ওই খুনে মূল অভিযুক্ত শেখ সলমন। সে সালাউদ্দিনের ছোটবেলার বন্ধু। তার বাড়ি আহম্মদপুরেই। পুলিশের কাছে অপরাধ কবুল করে সলমন জানায়, ধার দেনায় জর্জরিত ছিল সে। টাকা আদায়ের জন্য বন্ধুর বাবার থেকে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। কিন্তু মুক্তিপণ আসার আগে মদ খাইয়ে বন্ধুকে বেহুঁশ করে গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়।

কী ভাবে সালাউদ্দিনকে খুন করা হয়েছে অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সোমবার ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ধৃতকে। মঙ্গলবার ইলামবাজার পুলিশ দুবরাজপুর থানা এলাকায় নিয়ে আসে সলমনকে। অভিযুক্তকে দুবরাজপুরে আনার পিছনে পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল খুনের আগে ঠান্ডা মাথায় কী ধরনের ছক করেছিল সলমন সেটা জানা। সঙ্গে ছিলেন ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার তথা ইলামবাজার থানার ওসি তন্ময় ঘোষ। সহযোগিতায় ছিল দুবরাজপুর থানা। ছিলেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (ক্রাইম) ফিরোজ হোসেন, দুবরাজপুরের ওসি শেখ আফরোজ আলি।

প্রথমেই পুলিশের তরফে সলমনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুবরাজপুরের বাজারে সেই দোকানে, যেখানে নিজের দু’টি মোবাইল সারাতে দিয়েছিল সলমন। মোবাইলের দোকান মালিক সলমনকে চিহ্নিত করেন এবং সলমনের ফোন দুটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তারপর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সেই দোকানটিতে যেখানে থেকে বন্ধুকে খুন করার ছুরি কেনা হয়েছিল। সলমনের থেকে পুলিশ জানতে পারে, ছুরি কেনা ও মোবাইলের কাজ সেরে দুপুরের মধ্যে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল সে। পরে স্কুটিতে করে বিকেলে গ্রাম থেকে দোবান্দাও রসুলপুর হয়ে শাল নদীর সেতুর কাছে ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কে উঠে সে। বৃষ্টি পড়ছিল। কাছেই গোপালপুর মোড়ের একটি দোকান থেকে চা খায় সে। চায়ের দোকানি সলমনকে চিনতেও পারেন। তিনি পুলিশকে জানান, একাই সেদিন তাঁর দোকানে এসেছিল সলমন।

সলমন যে দেনাগ্রস্ত ছিল সেটাও এ দিন জেনেছে পুলিশ। শুধু ইটভাটার বিপুল ক্ষতি, মোবাইল গেম খেলে প্রচুর টাকা দেনা করেছিল সেটাই নয়, বাড়ি তৈরির জন্য বাবার নামে ২১ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছিল দুবরাজপুরের একটি সংস্থা থেকে। সেই নথিও সংগ্রহ করে পুলিশ। দুবরাজপুরেরই একটি শো-রুম থেকে মায়ের নামে যে স্কুটিটি সলমন কিনেছিল সেই দেনাও শোধ হয়নি।

Crime Murder Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy