সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের কাছে রোগীরা কি সঠিক পরিষেবা পাচ্ছেন? চিকিৎসকেরা কি তাঁদের নির্ধারিত দিনগুলিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকছেন? জেনেরিকের বদলে কোম্পানির ব্র্যান্ডের ওষুধের নাম প্রেসক্রিপশন লেখা হচ্ছে না তো? এমনই নানা বিষয়ে নজরদারির জন্য এ বার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর রাজ্যের প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’ ব্যবস্থা চালু করছে।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সে দিন অপারেশন থিয়েটারের অনুপস্থিতির অভিযোগ ঘিরে রাজ্য তোলপাড় হয়েছে। তারপরেই স্বাস্থ্যভবনের এই নির্দেশিকা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হাসপাতাল প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিভাগের অধিকর্তা এই নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হয়েছে, জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়মিত ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’ করে তার রিপোর্ট প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাতে হবে।
কী ভাবে হবে ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ছোট থেকে বড় সমস্ত সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা হঠাৎ পরিদর্শনে যাবেন। তাঁরা রোগীদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করে যাচাই করবেন।
কী কী বিষয় নজরে রাখা হবে? সূত্রের দাবি, প্রেসক্রিপশনে কী ওষুধ লেখা হয়েছে তা মূলত খতিয়ে দেখা হবে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের শুধুমাত্র জেনেরিক নাম লেখার কথা। তা হচ্ছে না কি দেখা হবে। যে ওষুধের নাম প্রেসক্রিপশনে লেখা হচ্ছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তা মজুত রয়েছে কি না, তা-ও যাচাই করা হবে। আবার সংশ্লিষ্ট ওষুধটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মজুত থাকা সত্ত্বেও অন্য কোনও নামে (ব্র্যান্ড নেমে) সেই ওষুধটিই প্রেসক্রিপশনে লেখা হয়েছে কি না, যাচাই করা হবে।
পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস বলেন, ‘‘পরিষেবার মান যাচাইয়ে ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’ একটি পদ্ধতি। কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে যে কোনও চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন খতিয়ে দেখে এই অডিট করা হয়। কী ভাবে এই কাজ হবে, বিষয়টি জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের জানানো হবে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই নজরদারির ব্যবস্থায় সেই সময়ে যে চিকিৎসকের কাজে থাকার কথা তিনি তা করছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা সম্ভব হবে।
যদিও বিভিন্ন সময়ে রোগীর পরিবারের তরফে অভিযোগ ওঠে, চিকিৎসকদের একাংশ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের এক সপ্তাহে মোট যত ঘণ্টা কাজ করার কথা, তা একটানা করে বাকি দিনগুলিতে তাঁরা বাইরে ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ করেন। ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’ ব্যবস্থায় এ বার সেটির উপরেও নজর রাখা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
যদিও চিকিৎসকদের সংগঠনগুলি ওই অভিযোগ পুরোপুরি সত্য তা মানতে চায়নি। ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর’স অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সভাপতি কিংশুক কর্মকারের বক্তব্য, ‘‘এই অভিযোগ যে অতীতে অল্পবিস্তর ওঠেনি এমন নয়। কিন্তু এখন পরিস্থতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। এখন প্রত্যন্ত এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও চিকিৎসকেরা নিদিষ্ট সময়ে থাকেন।’’ সার্ভিস ডক্টর’স ফোরামের জেলা সম্পাদক কালীসেন মুর্মুর কথায়, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকায় এক জন চিকিৎসকের থাকার মতো পরিকাঠামো রয়েছে কি না সেটাও বিচার্য। তাই অনেক সময়ই ডিউটি করে কোনও কোনও চিকিৎসককে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দূরে অন্যত্র থাকতে হয়। তবে সর্বত্রই যে এটা হয়, এমনটাও নয়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)