সাজিনার মুখোপাধ্যায় পরিবারের কাত্যায়নী পুজো।নিজস্ব চিত্র।
বাংলার ঘরে তিনি কখনও অসুরবিনাশিনী দেবী দুর্গা, গনেশ জননী, বাসন্তী, জগদ্ধাত্রী। অন্নপূর্না রুপে তিনিই আবার অন্নদাত্রী। বীরভূমের সাজিনা গ্রামের মুখ্যোপাধ্যায় পরিবারে দূর্গা স্নেহময়ী রুপে কৃষ্ণের মুখে যোগান ননী, দেবী কাত্যায়নী। সেই দেবীরই পুজোয় চারদিন ধরেই চলল অন্নসত্র। ফি বছর মাঘী পূর্ণিমাতে এই পুজোর শুরু হয়।
জনশ্রুতি, আনুমানিক ১৫০ বছর আগে বর্ধমানের মিঠানী থেকে মা কাত্যায়নীকে নিয়ে সাজিনায় এসেছিলেন হত দরিদ্র গদাধর মুখ্যোপাধ্যায়। দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের কষ্ট থেকে মুক্তির কাতর প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে প্রকট হন দেবী। মায়ের মৃত্যুর পরে তাঁর নামেই দেবীর নাম হয় কাত্যায়নী। পরিবারের সদস্য দেবনারায়ণ জানান, পারিবারিক ইতিহাস বলে এক সময় হেতমপুরের রাজা সুরঞ্জন চক্রবর্তীর গোমস্থার কাজে নিযুক্ত হয়ে বক্রেশ্বরে দেবী কাত্যায়নীর পুজোর প্রথম প্রচলন করেন ঈশ্বর ভক্ত গদাধর। এলাকার মানুষ জনকে অপদেবতার হাত থেকে মুক্তি দিতে এই বিশেষ পুজো আর সেই উপলক্ষে অন্নসত্রের প্রচলন। প্রথম প্রতিমা করেন গোপালপুরের শিল্পী গোবিন্দ সূত্রধর।
সাজিনা গ্রামে স্থানান্তরিত হল বক্রেশ্বরের কাত্যায়নী পুজো গদাধরের বসত বাড়ী সংলগ্ন ঠাকুর বাড়ীতে। দেবী দুর্গা এখানে বাৎসল্য প্রেমের প্রতিমূর্তি। বৃন্দাবনে এই প্রতিমা আছে। গদাধরের মৃত্যুর পরে তাঁর দুই ছেলে জয় নারায়ণ আর হরিনারায়ণের হাত ধরে পুজো চলতে থাকে পরবর্তী কালে। বাড়ির বৌ মালবিকা মুখ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্নকষ্ট থেকে মুক্তি দিতে দেবীর আগমন তাই এই পুজোর চারদিন অন্নসত্রের আয়োজন করা হয় আর এটাই আমাদের খুব আনন্দের।”
জানা যায়, প্রথম দিন (সপ্তমী)সকালে গোবিন্দ ভোগ চালের অন্ন, ডাল, সাত রকম ভাজা, পাচ মেশালী সব্জি, গুড়ের চাটনী থাকে। অষ্টমীতে লাউ, এঁচোড়ের তরকারি, মুগডাল। নবমীতে খিচুড়ি, পায়েস, সব রকম তরকারির টক। শেষ দিন রয়েছে চিড়ে ভোগ। সেদিন বাড়ীর সকলে মিলে নিমপাতা দিয়ে তেতোর ঝোল আর মাছ খান। কারণ পূজোর সময় নিরামিষ ছাড়া আমিষের প্রবেশ নিষেধ। ভোগের রান্নায় গুড়, সিন্ধক লবন আর ঘি চাই এটাই আমাদের পুজোর বিশেষত্ব বলে দাবি মালবিকাদেবীর।
পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। কোনও বলি দানের প্রথা নেই।
একসময় পুজোয় জয়দেব থেকে সাধুরা আসেন। বসত বাউল গান,কীর্তনের আসর। তবে এখন নবমীর সন্ধ্যা মাতিয়ে রাখে বাড়ির মেয়েরাই। কেউ নাচেন, কেউ বা গান করেন। মহিলারা ঠাকুরের আটচালার সামনে নাটক করেন। সেই আনন্দ যজ্ঞ এ যোগ দিতে দিল্লি থেকে ছুটে আসেন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার শর্মিষ্ঠা, যাদবপুরের মৌমিতা, বোলপুরের রাখীরা। গদাধর মুখ্যোপাধ্যায়, মা কাত্যায়নী, দুই ছেলে জয় নারায়ণ আর হরিনারায়ণের পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন আড়াইশো জনের। একশো পঞ্চাশ বছরের পুজো ঘিরে তৈরি হয় একান্নবর্ত্তী পরিবারের পরিবেশ যা আজকের দিনে অনু পরিবারের যুগে এক আর্দশের। দশমীর দিনের বিকেলে মহাসমারোহে বির্সজন হয় গ্রামের বোস পুকুরের জলে। শুরু হয় এক বছরের অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy