Advertisement
১৮ মে ২০২৪
খেজুরিয়াডাঙায় হুঁশিয়ারি দিল জেলা বিজ্ঞান মঞ্চ

ডাইনি অপবাদ দিলে আইনি ব্যবস্থা

ডাইনি অপবাদ দিয়ে নিগ্রহ বা ‘অপদেবতা তাড়ানোর’ জন্য সালিশিসভা বসালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান মঞ্চ। পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে খেজুরিয়াডাঙায় একটি পরিবারের কর্ত্রীকে ডাইনি অপবাদের জেরে নিগ্রহ এবং গোটা পরিবারকে ঘরছাড়া করার ঘটনা জেনে শুক্রবার এলাকায় যান সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকা ঘুরে, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে, ওই পরিবারের উপরে চাপ রয়েছে। বিষয়টি আমরা পুলিশ সুপারকেও জানাব।’’

ডাইনি বলে কিছু নেই। গ্রামবাসীকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা চালালেন জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। —নিজস্ব চিত্র।

ডাইনি বলে কিছু নেই। গ্রামবাসীকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা চালালেন জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০১:১৮
Share: Save:

ডাইনি অপবাদ দিয়ে নিগ্রহ বা ‘অপদেবতা তাড়ানোর’ জন্য সালিশিসভা বসালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান মঞ্চ। পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে খেজুরিয়াডাঙায় একটি পরিবারের কর্ত্রীকে ডাইনি অপবাদের জেরে নিগ্রহ এবং গোটা পরিবারকে ঘরছাড়া করার ঘটনা জেনে শুক্রবার এলাকায় যান সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকা ঘুরে, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে, ওই পরিবারের উপরে চাপ রয়েছে। বিষয়টি আমরা পুলিশ সুপারকেও জানাব।’’

খেজুরিয়াডাঙার ওই পরিবারের অভিযোগ, প্রৌঢ়া গৃহকর্ত্রীকে প্রথমে ডাইনি অপবাদ দিয়েছে, পরে গয়ায় নিয়ে গিয়ে ‘শরীরে ঢুকে থাকা অপদেবতা’ তাড়ানোর খরচ আদায় করেছে পড়শিরা। অথচ, বন্ধ হয়নি মানসিক নির্যাতন, শারীরিক নিগ্রহ। ফলে, সপরিবার বাড়ি ছাড়তে হয় তাঁদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ ওই পরিবারকে বাড়িতে ফিরিয়েছে। তবে প্রৌঢ়া এখনও বাড়িছাড়া।

বিজ্ঞান মঞ্চের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল এ দিন ওই পরিবারটির বাড়িতে গিয়ে প্রৌঢ়ার দেখা পায়নি। তবে তাঁর ছেলে এবং পূত্রবধূর সঙ্গে কথা বলেন নয়নবাবুরা। প্রৌঢ়ার পুত্রবধূকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এখন এলাকায় পুলিশ রয়েছে। পুলিশ সরে গেলেই এলাকায় থাকা অসম্ভব হবে আমাদের পক্ষে। আমরা ঠিক করেছি, এলাকা থেকে চলে যাব।’’ বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরা তাঁকে বলেন, ‘‘আপনাদের পাশে আমরা আছি। প্রশাসন রয়েছে। তা ছাড়া, আদালত রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ না থাকলে আমরা আদালতের সাহায্য নেব।’’

মাস তিনেক আগে এলাকার দুই মহিলা মাথাধরা, জ্বর, বমির উপসর্গে ভুগছিলেন। সেই সময় কিছু লোক রটিয়ে দেয়, এই পরিবারের বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়ার ‘কুনজরে’ ওই কাণ্ড ঘটছে। তাঁকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দিন কয়েক আগে প্রৌঢ়ার পাশের বাড়ির এক মহিলা চম্পা রাজোয়াড় একই উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হতেই বাধে গোলমাল। চম্পার স্বামী বাণেশ্বর রাজোয়াড়ই প্রৌঢ়াকে ঝাড়ফুঁক এবং পরে গয়ায় নিয়ে গিয়ে ‘শরীরে ঢুকে থাকা অপদেবতা’ তাড়ানোর খরচ আদায় করায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত।

বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরা এ দিন যে পরিবারগুলিতে মানুষজন অসুস্থ হয়েছিলেন, তাঁদের খোঁজ করেন। বাণেশ্বর রাজোয়াড়ের খোঁজ করে জানতে পারেন, তিনি বাড়িতে নেই। বাড়িতে ছিলেন চম্পাদেবী। নয়নবাবু চম্পাদেবীর কাছে জানতে চান কি হয়েছিল। চম্পাদেবী তাঁদের জানান, তিনি অসুস্থ, কিছু বলতে পারবেন না। চম্পাদেবীর জা বলে পরিচয় দেওয়া আর এক মহিলাও এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি। দু’পক্ষের কথাবার্তা চলাকালীন পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন।

পুলিশ পিকেট থেকে পুলিশকর্মীরা চলে আসেন। বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘‘এখানে সবাই মোবাইল ব্যবহার করছেন। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। টিভি রয়েছে। সভ্য সমাজে এ ভাবে কাউকে ডাইনি বলা যায় না। শরীর অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। হাসপাতালে যেতে হয়। ফের এ ভাবে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হলে আমরা আইনের সাহায্য নেব। এই কুসংস্কার চলতে পারে না।’’

আক্রান্ত পরিবারটির দাবি, এলাকা ছাড়ার আগে তাঁরা স্থানীয় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দু মাহালিকে এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমি ওঁদের বলেছিলাম, পাড়ায় বৈঠক করে সব ঠিক করে দেওয়া হবে। কিন্তু ওঁরা তার আগেই পুলিশের কাছে চলে যান। শীঘ্রই সকলকে নিয়ে বসব। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক করা হবে।’’

বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরা এর পরে প্রৌঢ়াকে ‘ঝাড়ফুঁক’ করা ওঝা পিন্টু দাসের বাড়িতে যান। তবে তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। নয়নবাবু বলেন, ‘‘এ ভাবে ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলার উপরে মানসিক অত্যাচারের ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে সে বিষয়টিই বলব। পাশাপাশি, আমরা একটি আইনি সেল গড়েছি। প্রয়োজনে আক্রান্ত পরিবার সেখান থেকেও সাহায্য পাবে। আমরা ফের এলাকায় যাব।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারকে গোটা ব্যাপারটি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘কুসংস্কার কাটাতে পুলিশের পক্ষ থেকেও সচেতনতা-প্রচার চালানোর কথা ভাবছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE