Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Rampurhat Murder

Rampurhat Murder: ফিরেছেন কেউ কেউ, ভগ্নপ্রায় অনেক বাড়ি এখনও খালি

তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখের হত্যা ও তার পরে বগটুই গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে হত্যাকাণ্ডের পরে তিন মাস কেটেছে।

(বাঁ দিক থেকে) আতাহারা বিবির খালি বাড়ি, বাড়ি ফিরেছে নেকলাল শেখের পরিবার।

(বাঁ দিক থেকে) আতাহারা বিবির খালি বাড়ি, বাড়ি ফিরেছে নেকলাল শেখের পরিবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
বগটুই (রামপুরহাট) শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ০৫:৩৯
Share: Save:

পুড়ে যায় বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপের মতো। সামনের উঠোনে মাথা দোলাচ্ছে সদ্য ফোটা নয়নতারা। তবে জীবনের স্পন্দন ফেরেনি বগটুই গ্রামের অনেক বাড়িতেই। তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখের হত্যা ও তার পরে বগটুই গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে হত্যাকাণ্ডের পরে তিন মাস কেটেছে। এখনও বাড়িতে ফিরতে পারেনি ঘরছাড়া একাধিক পরিবার।

গ্রামে গিয়ে জানা গেল ভাদু শেখের বাবা, দুই দাদা, বৌদি, সৎ ভাই-সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনও কেউ পৈতৃক বাড়িতে ফেরেননি। তবে বগটুইয়ে হত্যার ঘটনায় যাঁদের চার্জশিটে নাম নেই তাঁরা জেল হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরার পরে তাঁদের পরিবারের অনেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। তবে স্বজনহারা পরিবারের অনেকেই এখনও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি।

বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান ভাদু শেখের পৈতৃক বাড়ির কাছে পড়শি ফটিক শেখের বাড়ি। ভাদু শেখ খুন হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফটিক শেখের বাড়িতে আগুন দেয় দুষ্কৃতীরা। রামপুরহাট মেডিক্যালে মৃত্যু হয় ফটিকের স্ত্রী মীনা বিবির। স্ত্রীর মৃতদেহ চিহ্নিত করা বা সৎকার করার সুযোগও পাননি ফটিক শেখ। সেই রাত থেকেই ফটিক ঘরছাড়া ছিলেন।

রামপুরহাট থানার দখলবাটি গ্রামে মেয়ের বাড়িতে তিন মাসের বেশি সময় কাটানোর পরে দিন পনেরো আগে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে ফিরেছেন ফটিক। তবে গ্রামে ফিরলেও এখনও নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি ফটিক শেখ। তাঁর ছেলে ভাসান শেখকে ভাদু খুনে জড়িত সন্দেহে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। পরে ভাদু খুনের চার্জশিটে ভাসানের নাম বাদ যাওয়ার পরে বাবা ফটিক শেখের সঙ্গে গ্রামে ফিরলেও এখনও বাড়িতে ঢুকতে পারেনননি ভাসান।

সকালে বগটুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল পড়শি পিন্টু শেখের বাড়ির দরজার সামনে পর্দা টাঙিয়ে মাথার উপর ত্রিপল টাঙিয়ে ফটিক শেখের মেয়ে মাফুজা খাতুন দুপুরের খাবার রান্না করছেন। মাফুজা বললেন, ‘‘বাবার বাড়ি থাকতেও আজকে পরের বাড়ির দরজার সামনে গলিতে রান্না করতে হচ্ছে। বাপের বাড়িতে কবে যে ঢুকতে পারব জানা নেই।’’

ফটিক শেখের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার অন্য পারে মিহিলাল শেখ, বানিরুল শেখ, সোনা শেখদের বাড়ি। সেই বাড়িগুলিতে এখনও কেউ ঢুকতে পারেননি। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল আগুনে পোড়া ঘরগুলি থেকে আসবাব-সহ অন্য সরঞ্জাম বের করে বাইরে ডাঁই করে রাখা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ভাদু শেখ খুনে অভিযুক্ত, ভাগ্নে পলাশ খানের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন স্বজনহারা বানিরুল শেখ। তাঁর মা, স্ত্রী, মেয়ে ও জামাই, বোনের খাক হয়ে পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল শেখের বাড়ি থেকে।

পলাশ খানের বাড়ি গিয়ে বানিরুলের দেখা মিলল। তিনি জানালেন, এখনও পোড়া বাড়ি সংস্কার করতে পারেননি তিনি। বানিরুল বললেন, ‘‘এতদিন কুমাণ্ডায় আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। ইদের সময় ভাগ্নে পলাশ খানের বাড়িতে ছেলে, বৌমা, নাতিকে নিয়ে পলাশের স্ত্রী ও পলাশের মায়েদের সঙ্গে আছি। বাড়ি ঠিক করতে যে কতদিন সময় লাগবে জানি না।’’

পলাশ খানের বাড়ির অনতিদূরেই শেখলাল শেখের বাড়ি। এই বাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন শেখলালের স্ত্রী নাজিমা বিবি। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যু হয় নাজিমার। শেখলালকে দেখা গেল পোড়া বাড়িতে মাটি ভরাট করে পোড়া দরজা জানালা ঠিক করছেন। বললেন, ‘‘কতদিন আর মেয়ের বাড়িতে থাকব? নিজের বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাড়ি ফেরার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশ লাগবে কি না বুঝছি না।’’

তবে স্বজনহারা পরিবারের আইনজীবী আব্দুল বারি জানাচ্ছেন, সিবিআই তদন্ত শেষ করে মামলায় চার্জশিট ইতিমধ্যে জমা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের নিজেদের বাড়িতে ফিরতে কোনও অসুবিধে নেই। আর এই মর্মে আদালতের কোনও নির্দেশিকাও নেই। তাই স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা তাদের বাড়িতে ফিরতেই পারেন। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও আদালতে জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরছাড়াদের ফেরানো হয়েছে। তার ভিডিয়ো রেকর্ড আছে। কয়েক জন এখনও বাইরে আছেন। তাঁদের বাড়ি তৈরি হলেই গ্রামে ফেরানো হবে।

শেখলাল, বানিরুল, মিহিলাল বাড়ি ফিরতে না পারলেও তাদের আর এক ভাই নেকলাল শেখ অবশ্য পুড়ে যাওয়া খড়ের ছাউনির বাড়িতে নতুন করে টিনের ছাউনি লাগিয়ে স্ত্রী পুত্র মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি জানালেন, ‘‘এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে বাড়িতে ঢুকেছি। এখন কোনও সমস্যা নেই।’’

নেকলালের বাড়ির কাছেই বগটুই অগ্নিকাণ্ডে মৃত আতাহারার বিবির বাড়ি। আতাহারা বিবির ছেলে ও মেয়ে থাকলেও তাদের কেউ ওই বাড়িতে থাকেন না। উঠোন মাড়ানোর কেউ নেই। ভেঙে যাওয়া বাড়ির উঠোন তাই ভরেছে নয়নতারা ফুলের গাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat Murder Bogtui
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE