Advertisement
E-Paper

যত অস্বস্তি গোঁজেই

লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে রঘুনাথপুর শহরে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। তার উপরে টানা ১০ বছর পুরসভার ক্ষমতায় থাকায় ভোটারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনোভাবও রয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এর উপরে এ বার নির্বাচনে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে দলের বিক্ষুদ্ধ অংশের ‘নির্দল’ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া। তাই দলের অন্দরেই জোর চর্চা চলছে— এ বারের লড়াইটা আদৌ সহজ নয়।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৫
দল টিকিট দেয়নি। তাই নির্দল হয়ে ভোট-ভিক্ষা। — নিজস্ব চিত্র।

দল টিকিট দেয়নি। তাই নির্দল হয়ে ভোট-ভিক্ষা। — নিজস্ব চিত্র।

লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে রঘুনাথপুর শহরে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। তার উপরে টানা ১০ বছর পুরসভার ক্ষমতায় থাকায় ভোটারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনোভাবও রয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এর উপরে এ বার নির্বাচনে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে দলের বিক্ষুদ্ধ অংশের ‘নির্দল’ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া। তাই দলের অন্দরেই জোর চর্চা চলছে— এ বারের লড়াইটা আদৌ সহজ নয়।

দলের টিকিট না পেয়ে রঘুনাথপুরের চারটি ওয়ার্ডে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন বিক্ষুব্ধরা। তার মধ্যে একজন আবার তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর। এই অবস্থায় দলের তরফে পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক তথা সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার রঘুনাথপুরে কর্মিসভায় বিক্ষুদ্ধদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নিদান দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কিছুমাত্র বদল হয়নি। বরং বিক্ষুদ্ধ ওই নেতাদের দাবি, দল তাঁদের এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে বুঝতে পেরে প্রচারে তাঁরা আরও গতি পেয়ে গিয়েছেন। সব দেখে বিরোধী শিবিরের ধারণা, রঘুনাথপুরে এ বার গোঁজ প্রার্থীরা শাসকদলকে বেগ দেবে। অন্তত দু’টি ওয়ার্ডে শাসকদলের প্রার্থীদের ভোট ভাগ্য নির্ভর করছে দলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের উপরেই।

রঘুনাথপুরে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে একাধিক নাম উঠে আসায় যথেষ্ট বিপাকে পড়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের একাংশ এ বার বিদায়ী পুরপ্রধান মদন বরাটকে ফের প্রার্থী করতে অসম্মত ছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, পুরনোদের বদলে নতুন মুখ আনা হোক প্রার্থী তালিকায়। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ফের মদনবাবুকে টিকিট দিয়েছেন। গোল বেঁধেছে তাতেই। মদনবাবু নিজে যেমন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়েছেন, তেমনই নিজের পছন্দসই আরও দু’জনকে প্রার্থী করেছেন। এতে পুরো প্রার্থী তালিকাটাই কার্যত ঘেঁটে গিয়েছে বলে মত দলেরই একাংশের।

টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন বিদায়ী কাউন্সিলর সাধনা মোহান্ত। একই ভাবে ‘আশ্বাস’ পেয়েও শেষ পর্যন্ত টিকিট না পেয়ে ৫ নম্বরে নির্দল হিসাবে লড়ছেন আরএসপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর নাজিয়া পারভিনের স্বামী তৃণমূল কর্মী শেখ মধু। প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় ৮ নম্বরে গ্লাস প্রতীক নিয়ে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল কর্মী বিক্রম বাউরি। ৭ নম্বরে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন সিপিএম ছেড়ে শাসকদলের শিবিরে যাওয়া প্রাক্তন কাউন্সিলর বাসন্তী বাউরি। তৃণমূল কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে ৯ নম্বরের ক্ষেত্রে। এখানে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বিক্ষুব্ধ বাবুন দে।

শাসকদলককে যেমন ওই বিক্ষুদ্ধ প্রার্থীরা ভাবাচ্ছেন, তেমনই ভাবাচ্ছেন আরও কয়েকটি ওয়ার্ডের নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া তৃণমূল কর্মীরা। নিজেদের এলাকায় পছন্দের প্রার্থীরা টিকিট না পাওয়ায় কিছু ওয়ার্ডের কর্মী নির্বাচনের কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। তাঁরা তলে তলে শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের সমর্থন করে বসবেন কি না তা নিয়েও ঘোর চিন্তায় তৃণমূল নেতৃত্ব। এই ঘটনার অন্যতম উদাহরণ ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে কর্মীদের একাংশ প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন শহর কমিটির সহ-সভাপতি বিজয় গুঁইয়ের স্ত্রী জোৎস্নাদেবীকে। কিন্তু তিনি টিকিট পাননি। ফলে বিজয়বাবু-সহ তাঁর অনুগামীরা নির্বাচন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।

বস্তত গোঁজ কাঁটা যে নির্বাচনে তৃণমূলকে সমস্যায় ফেলতে পারে তার আভাস মিলেছে দলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেই। কর্মিসভায় তিনি বলেন, ‘‘বিক্ষুব্ধরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রার্থীদের পিছন থেকে ছুরি মারা চেষ্টা করছে। এই ঘটনা দল বরদাস্ত করবে না। দলে বিভীষণ, মিরজাফরদের স্থান নেই।” কর্মীদের চাঙা করতে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণাও করেছেন রাজীববাবু। কিন্তু তাতেও চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না শহরের নেতারা। আর এর পিছনে রয়েছে রঘুনাথপুরে লোকসভার ভোটের ফল।

৩, ৫, ৮ এই তিনটি ওয়ার্ডে বিক্ষুব্ধরা প্রার্থী হয়েছেন। আবার এই তিনটি ওয়ার্ডেই লোকসভায় বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে শাসকদল। ১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও এখানে আবার নির্দল প্রার্থী হয়েছেন দলেরই বিদায়ী কাউন্সিলর। তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, লোকসভায় রঘুনাথপুর শহরে তাদের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে মাত্র কমবেশি তিনশো ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি। আবার ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটিতে এগিয়ে রয়েছে বামফ্রন্ট। পাঁচটিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। বাকি পাঁচটি ওয়ার্ড রয়েছে তৃণমূলের দখলে। দলেরই এক নেতার কথায়, ‘‘এগিয়ে থাকা ও পিছিয়ে পড়া দুই ধরনের ওয়ার্ডেই গোঁজ হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন বিক্ষুব্ধরা। এটা আখেরে সমস্যায় ফেলতে পারে আমাদের।”.

অন্য দিকে, বিক্ষুব্ধরা প্রচারে তাদের প্রতি দলের বিশ্বাসঘাতকতার কথা তুলে ধরে সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ প্রার্থী সাধনাদেবী বা শেখ মধু বলেন, ‘‘রাজ্য তৃণমূল নেতা এখন এসে দল থেকে বহিষ্কারের কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের বিপুল জনসমর্থন থাকতে কেন বঞ্চিত করা হল সে জবাব দিচ্ছেন না কেন?’’

তবে গোঁজ প্রার্থীদের প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূলের শহর নেতারা। নির্বাচনী কমিটির দুই সদস্য মৃত্যুঞ্জয় পরামানিক ও প্রণব দেওঘরিয়া বলেন, ‘‘যাঁরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দল করেছিলেন তাঁরাই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ওই প্রার্থীদের স্বরূপ এলাকার ভোটাররা জানেন। ফলে গোঁজ প্রার্থীরা নির্বাচনে কোনও ফ্যাক্টরই হবেন না!”

rebel candidate municipal election trinamool tmc cpm congress bjp loksava rajib bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy