বলা হয়েছিল আগেই। সেই প্রতিশ্রুতি মতোই ডেউচা পাঁচামির প্রস্তাবিত খনি এলাকার মধ্যে থাকা গাছগুলিকে ‘ট্রান্সলোকেট’ বা পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ শুরু হল। বৃহস্পতিবার অন্তত আটটি মহুয়া গাছ তোলা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। আজ, শুক্রবার প্রকল্প এলাকার বাইরে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের চিহ্নিত নির্দিষ্ট জায়গায় আইআইটি খড়গপুর সংস্থার তত্ত্বাবধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার মাধ্যমে গাছগুলিকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের (পিডিসিএল) অধীনে খড়গপুরের একটি সংস্থা গাছ সরানোর কাজ করছে। প্রকল্প এলাকার মধ্যে থাকা ১২ একর জমির মধ্যে বহু মহুয়া, শাল ও অর্জুন গাছ রয়েছে। সেগুলিই অন্য জায়গায় বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে সেই কাজ। বৃহস্পতিবার সকালে মহম্মদবাজারের চাঁদা মৌজায় গিয়ে দেখা যায়, গাছ তোলা চলছে।
সংস্থা সূত্রে খবর, প্রথমেই পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি নরম করা হচ্ছে। তারপর ওই গাছের মূল শিকড় অনুযায়ী প্রথমে একটি ‘রুট বল’ বানানো হচ্ছে। তারপরেই সেখানে বিশেষ হরমোন ছেটানো হচ্ছে। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে এক ধরনের অ্যাসিড। গাছ তোলা হলে গাছের শিকড় থেকে শুরু করে ডাল পর্যন্ত সমস্ত কাটা জায়গায় ‘ব্লু কপার’ লাগানো হচ্ছে, যাতে সেই কাটা অংশ থেকে পুনরায় ডাল ও শিকড় বের হয়। যাতে কাটা অংশগুলি শুকিয়ে না যায় সে কারণেই ওই ওষুধ লাগানো হচ্ছে।
আবার, যেখানে গাছগুলিকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে সেখানেও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সেই গর্তে উইপোকা দমন করতে স্প্রে করা হচ্ছে। তারপরেই বিশেষ ওষুধ দেওয়ার পর গাছগুলিকে বসানো হবে। যাতে নতুন জায়গায় গিয়ে গাছের খাবারের অভাব না হয় সে কারণে নির্দিষ্ট ওষুধও দেওয়া হবে। তার ফলে গাছগুলি প্রয়োজন মতো খাবার সেখান থেকে পেতে পারবে।
পিডিসিএল সূত্রে দাবি, হায়দরাবাদের বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতেই এই কাজ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ওই কাজ খতিয়ে দেখতে প্রকল্প এলাকায় আসেন সিউড়ির মহকুমাশাসক সুপ্রতীপ সিংহ ও যুগ্ম বিডিও (মহম্মদবাজার) পলাশ বিশ্বাস। তাঁরা জানান, ওই পদ্ধতিতেই সমস্ত গাছকে এক এক করে নতুন জায়গায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সেই কাজ শুরু হয়েছে। গাছ পুনর্বাসনের দায়িত্বে থাকা এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘আমরা যে পদ্ধতিতে গাছগুলিকে পুনর্বাসন দিচ্ছি তাতে একটি গাছেরও ক্ষতি হবে না। প্রায় দু’মাসের মধ্যেই গাছগুলোর পুনরায় শিকড় বের হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)