Advertisement
E-Paper

বাস চলছে, বিক্রির আশায় আকবরেরা

যে ক’টি বাস নেমেছে, তাতেই আশা জেগেছে বাস চলাচলের উপরে নির্ভর করে থাকা ক্ষুদ্র দোকানি ও ব্যবসায়ীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২১ ০৭:৪৬
বাস চলতে পথে শুরু ব্যবসাও। কীর্ণাহারে।

বাস চলতে পথে শুরু ব্যবসাও। কীর্ণাহারে। ছবি: কল্যাণ আচার্য।

বিধিনিষেধের পর্ব কাটিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে ফের পথে নমেছে বেসরকারি বাস। কিন্তু, বাস যেমন সামান্য সংখ্যক চলছে, যাত্রীও তেমন হাতে গোনা। তবুও বিক্রিবাটার আশায় বুক বাঁধছেন বাসের হকার, দোকানি এবং বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার কিছু বেশি বেসরকারি বাস চলেছে জেলায়। এ দিন ৪০টির মতো বাস চলছে। তার মধ্যে সিউড়ি, রামপুরহাট, রাজনগর, সাঁইথিয়া, আসানসোল-সহ একাধিক রুটে প্রায় ৩৫টি বাস চলেছে। অন্য দিকে, বোলপুর থেকে দুর্গাপুর, আসানসোল ও বর্ধমান রুটের চারটি বাস গিয়েছে। তবে বাস মালিকদের দাবি, অধিকাংশ বাসে যাত্রী ছিলেন খুবই কম। বাস মালিদদের বক্তব্য, ডিজেলের দাম ৯০ টাকা ছাড়িয়েছে। তার উপরে যাত্রীও হাতেগোনা। এত কম যাত্রী নিয়ে পুরনো ভাড়ায় বসা নামানো কোনও অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

তা সত্ত্বেও, যে ক’টি বাস নেমেছে, তাতেই আশা জেগেছে বাস চলাচলের উপরে নির্ভর করে থাকা ক্ষুদ্র দোকানি ও ব্যবসায়ীদের। কারণ, সিউড়ি হোক বা সাঁইতিয়া, রামপুরহাট বা বোলপুর—বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশে এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী বাসযাত্রীদের উপরে নির্ভর করে ব্যবসা করে থাকেন। জেলা বাস হকার ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ছোটখাটো চা-তেলেভাজা, পান-সিগারেটের গুমটি দোকান কিংবা বাসে বাসে ঝালমুড়ি, লজেন্স, চানাচুর-সহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। কিন্তু, বছর দেড়েক ধরে করোনা পরিস্থিতির জন্য কখনও আংশিক কখনও বা সম্পূর্ণ লকডাউনের জেরে বাস পরিষেবা কার্যত থমকে থাকায় তাঁদের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ বারও ভোটের পরে বিধিনিষেধের জেরে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই ছোট ব্যবসায়ীরা হাতগুটিয়ে বসেছিলেন। কেউ কেউ বিকল্প রুজির পথে হাঁটলেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এই অবস্থায় বাস চলাচল শুরু হতেই পণ্যসামগ্রী নিয়ে তাঁদের অনেকে পথে নেমে পড়েছেন।

২৫-৩০ বছর ধরে বাসে বাসে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন কীর্ণাহারের যাদব দাস, কানন দাস, সাঁইথিয়ার ডালু চন্দ্ররা। তাঁরা জানাচ্ছেন, যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, তখন দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকা আয় হয়েছে। কিন্তু, করোনার মারে বছর দেড়েক ধরে বাস চলাচল কার্যত বন্ধ থাকায় ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘ব্যবসার পুঁজিটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। ধার করে মাল কিনেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আস্তে আস্তে সামলে নিতে পারব।’’ একই আশায় বুক বাঁধছেন লাভপুর বাসস্ট্যান্ডের চায়ের দোকানদার সুনীল দাস, সাঁইথিয়া বাসস্ট্যান্ডের আকবর আলিরা। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের বিক্রিবাটা মূলত যাত্রী নির্ভর। বাস বন্ধ থাকায় এত দিন দোকানে তালা ঝুলিয়ে বাড়িতে বসেছিলাম। বাস চলতে শুরু করায় ঝাঁপ খুলেছি।’’

জেলা হকার্স ইউনিয়ানের অন্যতম সদস্য ওসমান গনি, বিমান পাল জানান, বাস-সহ বেশির ভাগ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শুধু বাস হকার কিংবা বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ীরাই নন, গ্যারাজ, রাস্তার ধারের হোটেল, গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানদার সহ আরও অনেকে মার খাচ্ছিলেন। যাত্রী যাই হোক না কেন, বাস চলাচল শুরু হওয়ায় সকলে আশার আলো দেখছেন। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার আরেক খুচরো দোকানি অসীম কুমার দাস বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের সকলের উপকার।’’ যত দিন যাবে, যাত্রী আরও বাড়বে বলেও তাঁদের সকলের আশা।

তবে, একই সঙ্গে মনে দানা বাঁধছে আশঙ্কা, ফের সংক্রমণ বাড়বে না তো, ফের হবে না তো লকডাউন!

coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy