E-Paper

রোদে পুড়েও ট্রেন দেখতে উচ্ছ্বাস সারদা-ভূমে

বাড়ির কাজ সেরে জয়রামবাটি স্টেশনে ট্রেন দেখতে এসেছিলেন পুতুল মুখোপাধ্যায়, মনশ্রী মুখোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই।

অভিজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৯:৩৭
জয়রামবাটিতে ট্রেনের মহড়া। বৃহস্পতিবার।

জয়রামবাটিতে ট্রেনের মহড়া। বৃহস্পতিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র।

ওই আসে ট্রেন— সকাল থেকেই অপেক্ষায় থাকা জনতা এই আশাতেই ঠা ঠা রোদের মধ্যে অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে জয়রামবাটি স্টেশনে মহড়ার ট্রেন যখন ঢুকল, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায় ৪টে। খিদের জ্বালায়, ক্লান্তিতে অবসন্ন মানুষগুলো ট্রেনের বাঁশি শুনেই চনমনে হয়ে ওঠেন। ট্রেন ঢুকতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন সবাই। উলু ধ্বনি দেন মহিলারা।

দীর্ঘ অপেক্ষার পরে সারদাদেবীর জন্মভূমিতে ট্রেন চলায় খুশি পর্যটকেরাও। স্থানীয়দের উচ্ছ্বাসও কম নয়। এক বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে বলেন, ‘‘মা সারদাকে স্মরণ করেই প্রণাম জানালাম। যাতে শীঘ্রই এই পথে ট্রেন চলাচল চালু হয়।’’

এ দিকে বেলা ১১টা থেকে স্টেশনে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে এসেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিমের ঠেলাগাড়ি আর লোকে লোকারণ্য প্ল্যাটফর্ম যেন মেলার চেহারা নিয়েছিল। রেললাইনের পাশের গ্রাম জিবঠ্যা, মসিনাপুর, বালাডিপ থেকে ট্রেন দেখতে এসেছিলেন বিল্লেশ্বর ধাড়া, মনিকা লোহার, বাবু ঘোষের মতো অনেকেই। বিল্লেশ্বর বলেন, “বাড়ির ছেলেমেয়েরা ট্রেন দেখার জন্য ঝোঁক ধরেছিল। বেলা ১১টা থেকেই প্ল্যাটফর্মে বসে আছি। কাজকর্ম আজ বন্ধ রেখেছিলাম। বিষ্ণুপুর পর্যন্ত যদি ট্রেনে যাতায়াত করা যায় তাহলেও সময় অনেকখানি বাঁচবে।”

বাড়ির কাজ সেরে জয়রামবাটি স্টেশনে ট্রেন দেখতে এসেছিলেন পুতুল মুখোপাধ্যায়, মনশ্রী মুখোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই। তাঁরা বলেন, ‘‘ভাবতে পারিনি এই গ্রামে রেল পরিষেবা চালু হবে। মা সারদার ইচ্ছাতেই এটা সম্ভব হয়েছে। তাই ট্রেন আসার প্রথম দিনের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইলাম আমরা সবাই।’’

স্থানীয়দের একাংশ জানান, একটি ট্রেন দিলে বিশেষ সুবিধা হবে না। অন্তত দু’টি ট্রেন চালালে তবেই সবাই ভাল ভাবে পরিষেবা পাবেন। আবার জয়রামবাটি-বিষ্ণুপুর ট্রেন চালু হলে তা বাঁকুড়া পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন ভক্তপ্রাণদের একাংশ। বাঁকুড়ার সঙ্গীত শিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসে জয়রামবাটি যাওয়া অনেক কষ্টের ও সময়সাপেক্ষ। তাই বাঁকুড়া থেকে সরাসরি জয়রামবাটি যাওয়ার ট্রেন চালু হলে বিশেষত বয়স্কদের খুব সুবিধা হবে।’’ তবে মহড়ায় থাকা রেলের আধিকারিকেরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

দিল্লি থেকে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ফোনে বিষ্ণুপুর লোকসভার জমিদাতাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর ভায়া জয়রামবাটি রেলপথ প্রকল্পের জন্য আমি ২৬ বার রেলমন্ত্রকের সঙ্গে দেখা করেছি ও ৪২টি চিঠি দিয়েছি। বৃহস্পতিবার রেলের মহড়া সুন্দর ভাবে হওয়ার জন্য আমি গর্বিত। খুব শীঘ্রই জয়রামবাটি থেকে বিষ্ণুপুর রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হবে। মা সারদার হয়তো এটাই বাসনা ছিল।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jayrambati

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy