মানবাজার-পুরুলিয়া রাস্তায় চলছে অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র
চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই শবর যুবককে কিছুদিন আগে গ্রেফতার করেছিল মানবাজার থানার পুলিশ। ধৃত যুবকেরা নিরপরাধ দাবি করে বৃহস্পতিবার মানবাজার-পুরুলিয়া রাস্তায় গোপালনগর গ্রামে পথ অবরোধ করে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগে ফেললনে এলাকার কয়েকটি গ্রামের শবর গোষ্ঠীর কয়েকশো মহিলা-পুরুষ। ঘণ্টা দেড়েকের অবরোধের জেরে ওই রাস্তায় সবেচেয়ে বেশি নাকাল হয়েছেন বাসযাত্রীরা।
এ দিন বেলা দশটা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, গোপালনগর হাইস্কুলের কাছে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি আর পাথরের চাঁই ফেলে রেখে পথ অবরোধ চলছে। রাস্তার দু’ধারেই বহু বাস-লরি-ট্রাক-ছোট গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে। অবরোধকারীদের অনেকেরই হাতে তির, ধনুক, টাঙ্গি, বল্লমের মতো অস্ত্র। পুলিশ অবরোধকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। মানবাজারের বাসিন্দা, কলেজ ছাত্র শুভম দত্ত পুরুলিয়া থেকে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘এক ঘণ্টা হয়ে গেল, অবরোধে আটকে আছি। কখন ছাড়া পাব, জানি না।’’ মানবাজারের বাসিন্দা গৌতম পাল পুরুলিয়ার উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুরুলিয়ায় জরুরি কাজ ছিল। এখানেই প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট আটকে আছি। কখন আমাদের বাস ছাড়বে কে জানে।’’
এ দিন শবর গোষ্ঠীর পুরুষদের হাতে অস্ত্র থাকলেও মহিলাদের হাতে প্ল্যাকার্ড ছিল। পিচ বোর্ডের ওপর লাল কালিতে লেখা ‘জোসেফ ও হেমন্ত শবরের মুক্তি চাই। মিথ্যে অভিযোগে ওদের ফাঁসানো হয়েছে’। কিছু প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘শবর লোকদের চোর অপবাদ দেওয়া চলবে না’। মানবাজার থানার নির্ভয়পুর গ্রামের বাসিন্দা জানকী শবর, অনিমা শবর বলেন, ‘‘মাস তিনেক আগে গোপালনগরে একটি সোনার দোকানে চুরি হয়েছিল। পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কিছুদিন আগে জোসেফ ও হেমন্ত শবর নামে দুই যুবককে বিনা অপরাধে তুলে এনেছিল। চুরির রাতে ওরা গ্রামে ছিল না। পুলিশ কেন ওদের চোর বলে গ্রেফতার করবে। এরই প্রতিবাদে আমাদের অবরোধ।’’
পুলিশের অবশ্য দাবি, গত ২০ মার্চ গোপালনগর বাজারে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকানে যে চুরি হয়েছিল, তাতে জোসেফ ও হেমন্ত যুক্ত বলে তাদের কাছে নির্দিষ্ট প্রমাণ আছে। তা ছাড়া বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। আদালত ধৃতদের নির্দোষ মনে করলে তাঁরা মুক্তি পাবেন।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অবরোধকারীরা শবর সম্প্রদায়ের। এ জন্য ঠান্ডা মাথায় তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চালান হচ্ছিল। কারণ তা না হলে উত্তেজনা ছড়াতে পারত। অপরাধ না করলে কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না, এই আশ্বাসে ওঁরা অবরোধ তুলে নেন।’’ পুলিশ কর্তা আরও জানান, ওখানেই অবরোধকারীদের জন্য মুড়ি, আলুর চপ, ফুলুরির ব্যবস্থা করা হয়। দূরের শবর বাসিন্দাদের পুলিশ গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করে। ঘণ্টা দেড়েক পরে অবরোধ ওঠায় পথচারী ও বাসযাত্রীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। স্বস্তি ফেরে পুলিশ-প্রশাসনেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy