Advertisement
E-Paper

টানা বৃষ্টি, আশ্রয় মিলল স্কুলে

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজারের বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকা। স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধে থেকে টানা বৃষ্টিতে কার্যত বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সাঁইথিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। সাঁইথিয়ার আমোদপুর এলাকার বেশ কিছু গ্রামে বক্রেশ্বর নদীর জল ঢুকেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৭
তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে ছাড়া হয়েছে ৩৯ হাজার কিউসেক জল। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ময়ূরাক্ষীর কজওয়ে। ছবি: অনির্বাণ সেন।

তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে ছাড়া হয়েছে ৩৯ হাজার কিউসেক জল। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ময়ূরাক্ষীর কজওয়ে। ছবি: অনির্বাণ সেন।

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজারের বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধে থেকে টানা বৃষ্টিতে কার্যত বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সাঁইথিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। সাঁইথিয়ার আমোদপুর এলাকার বেশ কিছু গ্রামে বক্রেশ্বর নদীর জল ঢুকেছে। ওই সব গ্রাম থেকে দেড়শোরও বেশি পরিবারকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমোদপুর-বোলপুর রাস্তায় বক্রেশ্বর নদীর উপর টেকেড্ডা সেতুতে জল উঠে যাওয়ায় দু’টি গাড়ি মাঝ সেতুতে আটকা পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ নৌকো করে গাড়ি চালক ও বাকিদের উদ্ধার করে। বহু মাটির ঘরবাড়িও পড়ে গিয়েছে। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মহম্মদবাজারের গামিরার কাছে কুলে নদীর সেতুর উপর নদীর জল উঠে বেশ কিছু ক্ষণ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাঁইথিয়া-মহম্মদবাজার রাস্তায় আঙ্গারগড়িয়ায় একটি বটগাছ পড়ে গিয়ে সেখানেও দীর্ঘ ক্ষণ যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ ও প্রশাসনের লোক জন এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

বস্তুত, ক’দিনের টানা বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার একটু বেলার দিকে সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল। সন্ধে থেকে আবার মুখ ভার করেছিল আকাশ। কয়েক পশলা বৃষ্টিও হয়। শুক্রবার সকাল থেকে ফুরফুরে বাতাস আর ঝরঝরে রোদ দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, এ বার বোধহয় বৃষ্টিটা ছাড়ল। কিন্তু, বিকেল হতেই কালো মেঘে ফের মুখভার করে আকাশ। শুরু হয় বৃষ্টি। কখনও হালকা কখনও ঝমঝমিয়ে। আর রাত পৌনে ১১টা থেকে শুরু হয় আকাশ ভাঙা বৃষ্টি।

ঘটনা হল, বর্ষায় এলাকার খাল-বিল-নদী-নালা-পুকুর— সব ভর্তিই ছিল। তাই শুক্রবার রাতে বৃষ্টি ও মেঘের গর্জনে অনেকেই বন্যার আশঙ্কা করতে থাকেন। সাঁইথিয়া দেড়িয়াপুর এলাকার দুই নদীর মাঝের গ্রাম গোবিন্দপুরের আরিবুল শেখ, রওশান আলি, রায়হাটের বাহা মুর্মু, মুরাডিহি কলোনির প্রদীপ বসাকরা বলেন, ‘‘সারা রাত আতঙ্কে ছিলাম। এই বুঝি ময়ূরাক্ষী নদীতে জল ছাড়ল। এই বুঝি বন্যা হল।’’ নদীতে জল ছেড়েছে ঠিকই। কিন্তু, কম পরিমাণে জল ছাড়ায় এ দিকে তেমন বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। তবে, সাঁইথিয়া-সহ আশপাশের গ্রামের সমস্ত নীচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে।

এ দিকে, আমোদপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমোদপুর পঞ্চায়েতেরই সাঙুলডিহি, কুরুমসাহা, টেকেড্ডা, কুশুমযাত্রা, জুঁইতা, নহনা-সহ আটটি গ্রাম বক্রেশ্বর নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত স্থানীয় লোকজনকে উদ্ধার করে প্রাথমিক স্কুল গুলিতে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জীব মজুমদার বলেন, ‘‘সরকার থেকে শুকনো খাবার দিয়েছে। আমরা সকলকে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি।’’ সাঁইথিয়ার বিডিও অতুনু ঝুরি বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় ব্লকে ৫০০-র বেশি বাড়ি পড়ে গিয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পাড়ুইয়ের বুধরা গ্রাম। শুধু ওই গ্রামেই একশোর বেশি বাড়ি পড়ে গিয়েছে। ২০-২২টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৬৮টি পরিবারকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্কুলগুলিতে রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার দেওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় খিচুড়ি খাওয়ানো শুরু হয়েছে।’’

ফি বছরের মতন এ বারও ডুবল সাঁইথিয়ায় বনগ্রাম পঞ্চায়েতের ৮ নম্বর সংসদের বোলসুণ্ডা কলোনি। শনিবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কারও উঠোনে হাঁটু সমান জল তো কারও তাঁত মেশিনের তলা ভেসে যাচ্ছে জলে। এমনকী, বাড়ির পানীয় জলের কুয়োও জলমগ্ন। এলাকার বাসিন্দা দুলাল বসাক, বিপ্লব বসাকরা বললেন, ‘‘প্রতি বছরই বর্ষাকালে আমাদের এই অবস্থা হয়। আমাদের আর্থিক সংস্থান খুব ভাল নয়। তাঁত বুঁনে কোনও রকমে দিন গুজরান হয়। কিন্তু, প্রতি বছর বর্ষাকালে তাঁত মেশিনগুলিতে জল ঢুকে যাওয়ার কারণে আমরা প্রায় ১০-১২ দিন ধরে বেরোজগার হয়ে থাকি।’’ তার উউরে এ বছর আবার অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে সাঁইথিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাঁদের এলাকায় জল ঢুকে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে বলে দুলালবাবুদের দাবি। জলমগ্ন হয়েছে এলাকার সদস্য তথা পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানের বাড়িও। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘আসলে এ বছর অতি বৃষ্টির ফলে আমাদের বিভিন্ন এলাকার ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক মতো কাজ করছে না। ড্রেনের জল বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। তা ওই অবস্থা হচ্ছে। অতি বৃষ্টির জন্য আমরাও অসুবিধায় পড়েছি।’’

অন্য দিকে, সারা রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল মহম্মদবাজার ব্লকের পুরাতনগ্রাম পঞ্চায়েতের রাওতড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। গ্রাম জলমগ্ন হওয়ায় সব স্কুলেই ছুটি দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রটিতে জলের সঙ্গে অনেক বিষধর সাপও ঢুকে যায়। পরিস্থতি খাতিয়ে দেখতে মহম্মদবাজারের বিডিও সুমন বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি ব্লক স্তরীয় পরিদর্শক দল গ্রামে যান। সুমনবাবু বলেন, ‘‘পরিস্থতি খতিয়ে দেখতে ব্লকের কর্মীরা গ্রামে গিয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে বন্যা কবলিত এলাকা বলে এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবু গ্রামের মানুষদের কষ্টের কথা ভেবে আমরা কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিলি করেছি।’’ তিনি জানান, সকালে চিঁড়ে গুড় দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় হেরুকা হাইস্কুলে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে খাবার জন্য খিঁচুরি রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও কোনও এলাকায় চালও বিলি করা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিডিও-র দাবি। আর সাঁইথিয়ার বিডিও অতনু ঝুরি বলেন, ‘‘ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় জল ঢুকে বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন দুর্গতদের পাশেই আছে।’’

School building shelter house Amodpur Sainthia Mohammadbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy