Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আসন ২৯, মনোনয়ন উঠল ৩৭৮

কলেজ ভোটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না, বুধবার বৈঠক করার পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। চব্বিশ ঘণ্টা পরেই জেলার বিভিন্ন কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার ধুম দেখে প্রশ্ন উঠছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রোখার হুঁশিয়ারি কি তবে জলেই গেল?

সবাই প্রার্থী হতে চান। বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজে। (ডান দিকে) বাঁকুড়ার কলেজ রোড সাজানো হয়েছে টিএমসিপির পতাকায়। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

সবাই প্রার্থী হতে চান। বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজে। (ডান দিকে) বাঁকুড়ার কলেজ রোড সাজানো হয়েছে টিএমসিপির পতাকায়। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

কলেজ ভোটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না, বুধবার বৈঠক করার পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। চব্বিশ ঘণ্টা পরেই জেলার বিভিন্ন কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার ধুম দেখে প্রশ্ন উঠছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রোখার হুঁশিয়ারি কি তবে জলেই গেল?

কয়েকটি পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হবে, কেন এই প্রশ্ন উঠেছে। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে আসন সংখ্যা ২৪। মনোনয়নপত্র উঠেছে ১১০। বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজে আসন সংখ্যা ২৯ হলেও মনোনয়নপত্র তুলেছেন ৩৭৮ জন ছাত্রপ্রতিনিধি। বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজে আসন সংখ্যা ৩০। মনোনয়নপত্র তুলেছেন দ্বিগুণেরও বেশি, প্রায় ৭০। জেলার কোনও কলেজেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলেননি বিরোধী ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তা হলে এত মনোনয়নপত্র তুলল কারা, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। টিএমসিপি নেতৃত্ব অবশ্য সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা ছাড়া আর কোনও সংগঠন মনোনয়নপত্র তোলেনি।

অর্থাৎ, ধরে নিতে হবে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরাই এতগুলি করে মনোনয়ন তুলেছেন। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও পড়তে চলেছে কিনা, স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছে টিএমসিপি-র অন্দরে। জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ অবশ্য বলছেন, “মনোনয়নপত্র যতই উঠুক, আসন সংখ্যা যত, প্রার্থীও ততই হবে! দলের নীতির বিরুদ্ধে কেউ যাবে না।’’ যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার দাবি, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, ঝুঁকি এড়াতে বেশি সংখ্যায় মনোনয়নপত্র তুলে রাখাটাই রীতি। এ বারও তাই করা হয়েছে।’’

ঘটনা হল, পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূলের সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওই ব্লকের তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম সিংহের বিবাদ, বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি কালীদাস মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেলিয়াতোড়ের যুব তৃণমূল নেতা রাজীব ঘোষালের দ্বন্দ্ব, রাইপুর ব্লক যুব সভাপতি রাজকুমার সিংহের সঙ্গে ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর লড়াই কিংবা বিষ্ণুপুর শহর তৃণমূল সভাপতি বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতানৈক্যের জেরে প্রায়ই অস্বস্তিতে পড়তে হয় জেলা তৃণমূলকে। শাসক দলের নেতাদের এই ঝামেলা এলাকার কলেজ নির্বাচনে পড়তে পারে বলে আগেই আঁচ পেয়েছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই বুধবারই জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব একটি বৈঠক করে কলেজ ভোটে প্রার্থী দেওয়াকে কেন্দ্র করে কোনও রকম বিবাদ দল বরদাস্ত করবে না বলে আগেই ব্লকের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার স্নেহেশবাবু, বড়জোড়া ব্লকের সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় এবং রাইপুরের রাজকুমার সিংহরা ফোনে জানান, কোনও কলেজেই প্রার্থী দেওয়াকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয়নি। তার পরেও বেশ কিছু কলেজে আসন সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যায় মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে জল্পনা দানা বেঁধেছে। বিষ্ণুপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মথুর কাপড়ির কথায়, “জেলা কমিটির নির্দেশ মতো রামানন্দ কলেজে টিএমসিপি-র তরফে ২৯টি মনোনয়ণপত্র তোলা হয়েছে। বাকি গুলি কারা তুলেছে জানা নেই।’’

তবে এ দিন মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে জেলার কোনও প্রান্ত থেকেই ঝামেলার অভিযোগ ওঠেনি। কলেজগুলির সামনে যথেষ্ট পরিমান পুলিশও মজুত ছিল। তা সত্ত্বেও বিরোধী ছাত্র সংগঠন গুলির পক্ষ থেকে কোথাও মনোনয়নপত্র তোলার চেষ্টা দেখা যায়নি। এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক সুজয় পালের অভিযোগ, “সমস্ত কলেজের আশপাশে তৃণমূলের লোকজন জমায়েত করে ছিল। ঝামেলা এড়াতেই আমরা মনোনয়ন তুলতে যাইনি।’’ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের জেলা সংযোজক সনুপ পাত্রের দাবি, “আমাদের সংগঠনের ছাত্রেরা কয়েকটি কলেজে মনোনয়নপত্র তুলতে গিয়েছিল। তবে টিএমসিপি-র গুন্ডারা তাদের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেয়।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মনোনয়ন তোলা নিয়ে কোনও ঝামেলার অভিযোগ পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

college vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE