Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিষেধ উড়িয়ে অবাধ ব্যবহার, প্লাস্টিক দূষণ রইলই মেলায়

পরিবেশ বিধিতে পৌষমেলার উপরে কড়া নজর ছিল আগাগোড়াই। মামলা পর্যন্ত হয়েছিল। এবার তাই পৌষমেলা প্লাস্টিকমুক্ত করার বিষয়ে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

 মেলা-মাঠে জমা প্লাস্টিক (উপরে)। প্লাস্টিক বর্জনের আর্জি জানিয়ে প্রচার (নীচে)।

মেলা-মাঠে জমা প্লাস্টিক (উপরে)। প্লাস্টিক বর্জনের আর্জি জানিয়ে প্রচার (নীচে)।

বাসুদেব ঘোষ  
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৬
Share: Save:

মূল লক্ষ্য ছিল প্লাস্টিকমুক্ত মেলা করার। বিশ্বভারতী বা মেলা কমিটির ঘোষিত সিদ্ধান্ত ছিল পৌষমেলায় প্লাস্টিক! নৈব নৈব চ। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। চারদিনের মেলায় হাওয়ায় উড়ল প্লাস্টিক, মেলা মাঠে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গেল পলিথিন প্যাকেট, প্লাস্টিকের ঠোঙা বা ছেঁড়া প্লাস্টিকের টুকরো।

পরিবেশ বিধিতে পৌষমেলার উপরে কড়া নজর ছিল আগাগোড়াই। মামলা পর্যন্ত হয়েছিল। এবার তাই পৌষমেলা প্লাস্টিকমুক্ত করার বিষয়ে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। মেলা শুরুর আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলেন এবারে সম্পূর্ণভাবে প্লাস্টিকমুক্ত মেলা করা হবে। মেলা শুরু হতেই মেলা কমিটির তরফ থেকে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে মেলা প্রাঙ্গনের ভিতরে ও শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সাঁটানো হয়, ‘পৌষমেলার মধ্যে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার নিষিদ্ধ’। মাইকেও ঘোষণা করা হতে থাকে মেলার প্রথম দিন থেকে। মেলা চত্বরে প্লাস্টিক ও থার্মোকলজাত বস্তুর ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে দোকানে দোকানে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও কার্যত প্লাস্টিক বন্ধ করা গেল না শুধুমাত্র বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকার কারণে।

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও মেলা শুরু থেকে মেলা ভাঙার দিন পর্যন্ত কোথাও প্রকাশ্যে কোথাও আবার লুকিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট বা পলিথিন থলেতে জিনিসপত্র বিক্রি হতে দেখা গেল। এই বছর মেলায় অনলাইন বুকিং-এর মাধ্যমে হাজারখানেক স্টল হয়েছিল। এছাড়াও যে সমস্ত হস্তশিল্পী ও ক্ষুদ্র শিল্পীরা অনলাইনে স্টল বুক করতে পারেননি তাঁদের কাছ থেকে সামান্য ভাড়া নিয়ে প্রায় ৬০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে মেলায় বিভিন্ন জায়গায় বসতে দেওয়া হয়।

এই দোকানগুলি থেকেই প্লাস্টিকের থলেতে জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। অনেক ক্রেতা আবার মেলায় এসেছেন পকেটে প্লাস্টিকের থলে নিয়ে। বড় স্টলগুলির মধ্যে শালপট্টির দোকানগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক প্যাকেট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দোকানদারদের অভিযোগ, ক্রেতারা অনেকেই জিনিসপত্র কেনার পরে ক্যারি ব্যাগের খোঁজ করেছেন। প্লাস্টিক বন্ধ শুনে কেনা জিনিসও রেখে দিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে চলে যেতে চেয়েছেন। তাই বাধ্য হয়েই প্লাস্টিকের প্যাকেট দিতে হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট দেওয়া নিয়ে শান্তিনিকেতনের পরিবেশকর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন, কাগজ বা কাপড়ের ক্যারিব্যাগও তো বাজারে পাওয়া যায়। ক্রেতা- বিক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বোধ আর সদিচ্ছা থাকলে তাতেও জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করতে পারতেন। মেলা কমিটির সদস্য কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উপাচার্য নিজে ঘুরেছেন মেলায় যাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার না হয় তা দেখার জন্য। আমরাও প্রথম দিন থেকে অভিযান চালিয়েছি। তারপরেও যদি ক্রেতা বা বিক্রেতারা নিষেধাজ্ঞা না মানেন, তাহলে এর দায় কে নেবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantiniketan Plastic pollution Poush Mela
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE