Advertisement
E-Paper

বাঁকুড়ায় চালু ছয় ত্রাণ শিবির

আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্তই বৃষ্টি হয়েছে ১০২.২ মিলিমিটার। আর সোমবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় বাঁকুড়ায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২৬.৩ মিলিমিটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৭:২০
সজাগ: বাঁকুড়ার সতীঘাটে জলমগ্ন কজওয়ের রাস্তা বন্ধ। কড়া পাহারায় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

সজাগ: বাঁকুড়ার সতীঘাটে জলমগ্ন কজওয়ের রাস্তা বন্ধ। কড়া পাহারায় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বাঁকুড়ার জনজীবন। মেজিয়ায় নিজের ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হল এক বধূর। অন্য দিকে, বাঁকুড়া শহর লাগোয়া বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দামোদর লাগোয়া বড়জোড়ার কয়েকটি এলাকাতেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। কজওয়ে ডুবে ও কালভার্ট ভেঙে যান চলাচল বন্ধ বহু রাস্তায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার ছ’টি ত্রাণ শিবির চালু করল প্রশাসন।

আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্তই বৃষ্টি হয়েছে ১০২.২ মিলিমিটার। আর সোমবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় বাঁকুড়ায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২৬.৩ মিলিমিটার। এই বিপুল বৃষ্টিতে জেলার নজীগুলি যখন ভরে উঠেছে, সেই সময় ঝুঁকি বাড়িয়েছে ফুঁসতে থাকা দামোদর।

মঙ্গলবার দুপুরে মেজিয়ার অর্ধগ্রাম পঞ্চায়েতের তেঘরিয়া এলাকায় দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ছায়া মণ্ডল (৪২) নামের এক বধূর। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “কোতুলপুর, ছাতনা, বাঁকুড়া ২ ব্লক-সহ জেলার বিভিন্ন ব্লকে এখনও পর্যন্ত ছ’টি ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে আমাদের নজর রয়েছে।”

বাঁকুড়া ২ ব্লকে গন্ধেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বর নদের মিলনস্থল ভূতশহরে জল অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে ভূতশহর, বাঁকি, সেন্দড়া, মুগড়ার মতো বেশ কয়েকটি গ্রাম। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া) অসীমকুমার বালা ওই গ্রামগুলিতে যান। তিনি বলেন, “প্রায় একশোটি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

প্রবল বৃষ্টিতে এ দিনও জলমগ্ন থেকেছে বাঁকুড়া শহরের বেশ কিছু এলাকা। পলাশতলা এলাকায় জল জমে যাওয়ায় ঘর-বন্দি বহু পরিবার। আশ্রমপাড়া এলাকাও জলমগ্ন। শালি নদীর জল ঢুকে পড়েছে সোনামুখী শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকায়। সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই এলাকায় দু’টি ত্রাণ শিবিরে ৫০টি পরিবারকে রাখা হয়েছে।’’

অন্যদিকে, দামোদর নদে জল ক্রমশ বাড়তে থাকায় মানাচরগুলি নিয়ে চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে প্রশাসনের। বড়মানা এলাকায় জল ঢোকা শুরু হয়েছে।

জেলাশাসক জানান, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে সন্ধ্যার মধ্যেই বড়মানার বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে তুলে আনা হচ্ছে। জল নিকাশী নালা না থাকায় বড়জোড়ার সারদাপল্লি ও বনশ্রীপল্লি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়িতেও জল ঢুকেছে। বড়জোড়া পঞ্চায়েতের সদস্য অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জল একটু বাড়লেই দামোদর নদ সংলগ্ন মেটালা, ন’পাড়া, মাধবপুর, কানাই, মানাই, রাউতোড়ার মতো গ্রামগুলি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলাশাসকের আশ্বাস, “দামোদর নদ সংলগ্ন গ্রামগুলির পরিস্থিতির উপরে ব্লক প্রশাসন নজর রাখছে।”

কংসাবতী জলাধার থেকে জল ছাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানানো হয়েছে। এ দিন দুপুর পর্যন্ত মুকুটমণিপুরের জলস্তর ছিল ৪২৬ ফুট। ৪৩০ ফুট ছাপিয়ে গেলে জল ছাড়ার চিন্তাভাবনা তাঁরা করবেন।

এ দিন সকালে রানিগঞ্জ-বাঁকুড়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মেজিয়ার তারাপুর এলাকায় রাস্তার একাংশে ধস নামে। জাতীয় সড়ক বিভাগ দ্রুত রাস্তা সংস্কার করায় পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ওন্দার রতনপুরের মাদারবনি এলাকায় ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের উপর একটি কালভার্ট ধসে যায়। এতে দিনভর দক্ষিণ বাঁকুড়ার সঙ্গে সংযোগকারী ওই রাস্তার উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ঘুর পথে যাতায়াত করতে হয়েছে যাত্রীদের।

বিষ্ণুপুরের বিড়াই নদীর কজওয়ে থেকে জল না নামায় সোনামুখী-বিষ্ণুপুর রাস্তায় যানবাহন বন্ধ। সোনামুখীর শালি নদীর কজওয়ে প্লাবিত হওয়ায় সোনামুখী থেকে বড়জোড়া ও দুর্গাপুরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বাঁকুড়ার সতীঘাট এলাকায় গন্ধেশ্বরী নদীর কজওয়ে জলের তলা। বাঁকুড়া বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নিম্নচাপের জেরে গত কয়েক দিন ধরেই যাত্রী কম। তাছাড়া রাস্তাঘাটের পরিস্থিতির জন্য অনেক এলাকাতেই যানবাহন চলাচল হচ্ছে না।

Flood Heavy Rain Relief Camp বন্যা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy