Advertisement
E-Paper

শ্বশুরবাড়িতে তুলকালাম ‘জামাইয়ের’

ক’দিন বাদেই জামাইষষ্ঠী। তার আগে ‘স্ত্রী-র অধিকার’ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ধুন্ধুমার বাঁধিয়ে বসলেন শ্রীমান ‘জামাই’!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০১:২৯

ক’দিন বাদেই জামাইষষ্ঠী। তার আগে ‘স্ত্রী-র অধিকার’ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ধুন্ধুমার বাঁধিয়ে বসলেন শ্রীমান ‘জামাই’!

সটান শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে, হাতের শিরা কেটে, গ্যাসের পাইপ খুলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে টানা দুই ঘণ্টা ব্যতিব্যস্ত করে রাখলেন সকলকে। বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওই যুবককে বের করতে নাজেহাল হল পুলিশ ও দমকল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই তরুণী এসে তাঁর সঙ্গেই থাকার আশ্বাস দিলে নিরস্ত্র হয় সে।

ঘটনাটি ঠিক কী?

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই যুবকের দাবি, আদ্রার ইঞ্জিনিয়ারিং ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পাশে রেল আবাসনের বাসিন্দা বছর আঠারোর ওই তরুণী তাঁর স্ত্রী। মাস ছয়েক আগে বিবাহ পর্ব সেরে দু’জনে পাড়ি জমান গুজরাটের রাজকোটে। স্থানীয় কারখানায় কাজ জুটিয়ে নিয়েছিল যুবক। বাড়ি ভাড়া করে শুরু হয় সংসারও।

এ দিকে মেয়ে বাড়ি থেকে নিঁখোজ হওয়ার পরেই ওই তরুণীর বাবা আদ্রা থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ পৌঁছে যায় রাজকোটে। গুজরাট পুলিশের সাহায্যে সেখান থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ওই তরুণীকে নিয়ে আসে আদ্রা পুলিশ। তবে ওই যুবককে রাজকোটের বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

গোল বাধে তার পরেই।

বুধবার সকালে পুলিশ ওই তরুণীকে হাজির করায় রঘুনাথপুর আদালতে। পুলিশের সঙ্গেই আদালতে গিয়েছিলেন তরুণীর বাবা, মা। ওই পরিবারটি যখন আদালতে, তখন অন্য নাটক শুরু হয় রেল আবাসনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে দশটা নাগাদ ওই বাড়িতে সটান হাজির হন ‘জামাই’। বাড়িতে তখন ছিলেন তরুণীর বোন ও দুই আত্মীয়। তাঁদের কাছে ‘স্ত্রী-র’ খবর জানতে চায় যুবক। বাবা, মা-সহ কেউ বাড়িতে নেই শুনে বাকিদের ধমকে বাড়ি থেকে বের করে একটি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় সে।

খবর পেয়ে আদ্রার থানার ওসি পঙ্কজ সিংহ-সহ পুলিশ কর্মীরা পৌঁছে যান ওই রেল আবাসনে। পৌঁছে যান কাশীপুরের সিআই সত্যব্রত চক্রবর্তী, রঘুনাথপুরের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকে দেখতে পেয়ে ‘স্ত্রীকে’ তার কাছে এনে দেওয়ার দাবি তোলে যুবক। বাবা বাছা করে তাকে ভুলিয়ে বাইরে বের করার চেষ্টা করে পুলিশ।

কিন্তু, ভবি ভোলবার নয়।

‘স্ত্রীকে’ এখনই তার কাছে এনে না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দিতে শুরু করে যুবক। নিছক হুমকি দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি সে। পুলিশকে দেখিয়ে দেখিয়ে জানলা দিয়ে হাত বের করে ব্লেড দিয়ে হাতের শিরা কেটে দেয়! আবাসনের নীচে তখন ভিড় জমিয়েছেন বহু বাসিন্দা। বেগতিক দেখে এ বার পুলিশ দোতলায় উঠে দরজা ভেঙে যুবককে বের করার চেষ্টা শুরু করে। পুলিশকে উপরে উঠতে দেখেই আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয় বছর পঁচিশের ওই যুবক। তখন খবর যায় দমকলে। কিছু পরে দমকল আসালে পুলিশ ফের উপরে ওঠার চেষ্টা করে।

পুলিশ উপরে ওঠার তোড়জোড় করছে দেখে যুবক এ বার গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ খুলে দেশলাই জ্বালিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা শুরু করে। জানলা দিয়ে গ্যাসের কাটা পাইপও দেখায় সে। সে সব দেখে বাধ্য হয়েই ঘরের দরজা ভাঙা থেকে নিরস্ত হয় পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবক বারেবারেই বলছিল তরুণীকে তাঁর সামনে হাজির করতে হবে। নইলে সে যে কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। ঝুঁকি না নিয়ে শেষ পর্যন্ত তরুণীকে বাড়িতে আসতে বলে পুলিশ। তরুণী এসে তাঁর সঙ্গেই থাকবে, আশ্বাস দিলে রণেভঙ্গ দেয় যুবক। দরজা খুলে বেরোতেই ওই যুবককে নিয়ে রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে ছোটে পুলিশ।

যবনিকা পাত হয় ঘণ্টা দু’য়েকের টানটান নাটকের।

পুলিশের গাড়িতে চাপার সময়েও তরুণীর হাত ছাড়েনি যুবক। কেন এমন কাণ্ড? বছর পঁচিশের ওই যুবকের কথায়, ‘‘স্ত্রী-র বাবার বাড়ির লোকজন বিয়ে মানবেন না বলেই গুজরাটে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ গিয়ে ওকে আমার কাছ থেকে নিয়ে চলে এসেছে। অনেক কষ্ট করে ওকে আবার ফিরে পেলাম। আর কাছছাড়া করছি না।” বিয়ের কথা স্বীকার করেছে তরুণীও। একইসঙ্গে সে স্বীকার করছে, ‘‘আমার জন্যে ও এমনটা করতে পারে ভাবিনি।’’

রঘুনাথপুরের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই যুবক তরুণীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ হয়েছে।.এ দিকে ওই তরুণী প্রাপ্তবয়স্ক।’’ এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা ঠিক করতে সব দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আপাতত যুবককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিজিৎবাবু।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy