জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি না প্রশাসনিক নজরদারি? না কি দুই-ই?
কারণ যাই হোক, ফাইনাল পরীক্ষার প্রথম অর্ধে এ জেলায় কার্যত বোতলবন্দিই থাকল শব্দদানব। শনিবার কালীপুজোর সারারাতে জেলাজুড়ে অন্তত এমন ছবিই উঠে এসেছে। তবে, আসল পরীক্ষা রবিবার। দীপাবলির রাতে এই জেলায় একই ছবি রাখা যায় কিনা, কঠিন পরীক্ষায় পুলিশ-প্রশাসন।
ঘটনা হল, কলকাতা, শহরতলি বা রাজ্যের অন্যান্য জায়গার যে ভাবে একটানা বৃষ্টির মতো শব্দবাজির উপদ্রপ হয়, এ জেলার ছবিটা তেমন ছিল না। তবে কালীপুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে যে যথেষ্ট পরিমাণে শব্দ বাজি ফাটানো হয়, তা কারও অজানা নয়। সেই ছবিটাই যেন এ বার অনেকটা বদলেছে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ‘‘বিক্ষিপ্ত ভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজি ফাটানোর শব্দ কানে এলেও তা কখনই সহ্যের সীমা ছাড়ায়নি।’’ তেমনই ইঙ্গিত মিলছে পুলিশের তথ্যেও। জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমারের দাবি, ‘‘শব্দবাজি নিয়ে একটি অভিযোগও পুলিশের কাছে আসেনি। কেউ গ্রেফতারও হয়নি। তবে, পুজোর আগে থেকেই নিয়মিত প্রচার এবং নিষিদ্ধ শব্দবাজি ধরতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। ভারী মাত্রায় শব্দবাজি উদ্ধারও হয়েছে।’’
তা বলে কি বাজি ফাটেনি? জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দাবি, অবশ্যই ফেটেছে। তবে, তার সিংহভাগই আতসবাজি। যা আলোর উৎসবকে আরও আলোকিত করেছে। তার জন্য যেমন প্রশাসনিক নজরদারি রয়েছে (যার জেরে বাজারে এ বার শব্দবাজি মজুত হয়েছে অনেক কম)। অন্য দিকে, সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত শব্দবাজি বিরোধী লোখালিখি ও প্রচারের ফলেও অনেক বেশি সচেতনতা এসেছে মানুষের মধ্যে। অনেক মা-বাবাই তাঁদের ছেলেমেয়েদের শব্দবাজি কিনে দিতে চাননি বলে মত বাসিন্দাদের অনেকের। সিউড়ির বধূ সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়, রামপুহাটের শুক্লা মণ্ডল, বোলপুরের নন্দিনী চক্রবর্তীরা বলছেন, ‘‘শব্দবাজিতে অন্যের অসুবিধা রয়েছে, নিজের সন্তানদের বিপদ রয়েছে, দূষণও হয়। তা হলে কেন ছেলেমেয়েকে শব্দবাজি কিনে দেব? আর সত্যি কথা বলতে, শব্দে আমাদের নিজেদেরই তো কষ্ট হয়।’’
গত বার তো বটেই, এমনকী দুর্গাপুজোর সময়ও শব্দবাজি লুকিয়ে চুরিয়ে বিক্রি করেছেন দুবরাজপুরের এক বাজি ব্যবসায়ীর উপলব্ধি, ‘‘পুলিশের ঝামেলা তো রয়েইছে। তা ছাড়া গ্রামের দিকে কিছু তরুণ ছেলে শব্দবাজি চাইলেও শহরে আতসবাজির চাহিদাই বেশি। শব্দবাজি যে নিষিদ্ধ, তা নিয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন মানুষ।’’ একমত রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাসও। সুপ্রিয়বাবু বলছেন, ‘‘অবশ্যই জনসচেতনতা বেড়েছে। কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির ধুম কমার এটাই বড় কারণ।’’
বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তা, এলাকার মানুষের দাবি, সিউড়ি, বোলপুর রামুপুরহাট, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া থেকে লাভপুর, কীর্ণাহার, ইলামবাজার— কালীপুজোর রাতে বিচ্ছিন্ন ভাবে অল্প কিছু শব্দবাজি ফেটেছে। বাজি ফেটেছে তারপীঠ মন্দিরের কাছেও। কিন্তু রাত ১০টা নাগাদ অমাবস্যা লাগার পরে যখন কালীপুজো শুরু হয়, তখন বাজির শব্দ প্রায় ছিল না বললেই চলে।’’
সিউড়িতে বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ কালীমন্দির রয়েছে। যেগুলির মধ্যে সোনাতোড়পাড়া রবীন্দ্রপল্লি, মৌমাছি কালী মন্দিরগুলিতে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই পুজো দিতে ভিড়। এ দিক ও দিক যা বাজি ফেটেছে, তার মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তুবড়ি, চরকি, রংমশাল, ফলঝুরি ইত্যাদি বাজিই বেশি ফেটেছে। একই ছবি ছিল দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বর, লোবায়, রামপুরহাটের একাধিক গ্রাম, লাভপুর দোনাইপুর, মহেশপুর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দিরগুলিতে। তবে, অনেকে মনে করছেন, কালীপুজোর দিন অনেকের উপোস থাকে। এ দিন এতটা সময় না থাকায় বাজি ততটা ফাটেনি। যা রবিবার দীপাবলির রাতে ফাটতে পারে। কালীপুজো ও দীপাবলি একদিনে পড়লে বাজি ফাটানোর ধূম অনেক বেশি নজরে পড়ে। এ বার সেটা হয়নি। তবে, শব্দবাজির প্রতি সমর্থন রয়েছে এমন এক যুবককে শব্দবাজি কেন ফাটাচ্ছেন, প্রশ্ন করতেই তাঁর উত্তর, ‘‘উৎসবে একটু আধটু শব্দ না হলে কী আর উৎসব মানায়? বেশ কিছু জায়গায় এখনও শব্দবাজি মেলে।’’ স্থায়ী দোকান থেকে বাজি বিক্রি করেন, জেলার এমন ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘পুলিশের ঝামেলা এড়াতে আমরা এ বার চকলেট বা দোদমার মতো বাজি বিক্রি করছি না। যেটুকু বিক্রি হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় অস্থায়ী দোকান থেকে। যাঁরা শব্দবাজি খুঁজছেন, তাঁরা সেখান থেকেই বাজি কিনছেন।’’
বাজি ফাটানো হয় কালী বিসর্জনেও। তার একটা আভাস পাওয়া গেল দুবরাজপুরের লোবা ও বাবুপুর কালী বিসর্জনে। যথেষ্ট পরিমাণে ফাটানো হল শব্দবাজি। যদিও প্রতিমা জলে পড়তেই সব থেমে গিয়েছে। তাই সব থেকে বড় পরীক্ষা রবিবার রাতেই। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ‘‘এ দিনও ভাল ভাবেই পেরোবে। আমরা কড়া নজর রাখছি।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy