E-Paper

ক্যামেরায় বন্দি বাঘ, পাহাড় ঘিরে অভিযান

শুক্রবার ভাড়ারিয়া পাহাড়ের অদূরে যমুনাগোড়া ও নেকড়া গ্রামের কাছে বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছিল। দিনভর জঙ্গলে তল্লাশি চললেও বাঘের হদিস পাননি বনকর্মীরা।

প্রশান্ত পাল  , রথীন্দ্রনাথ মাহাতো 

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এত দিন তার ঝলক পেতে চেষ্টার কসুর করেনি বন দফতর। টোপ দিয়ে খাঁচা পাতা থেকে জঙ্গলে জায়গায় জায়গায় ফাঁদ ক্যামেরা বসানো, বাদ যায়নি কিছু। শেষমেশ ক্যামেরাবন্দি হল পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে থাকা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বন দফতর জানাচ্ছে, শুক্রবার রাত ৩.২৪ মিনিট নাগাদ একটি ফাঁদ ক্যামেরায় ধরা পড়ে ছবিটি। মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) এস কুলন্দাইভেল বলেন, “গত রবিবার বাঘটি বান্দোয়ানের জঙ্গলে ঢোকে। তার পরে বিভিন্ন জায়গায় তার পায়ের ছাপ মিললেও ছবি মিলছিল না।” বাঘটিকে ধরার জন্য সব রকম চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার ভাড়ারিয়া পাহাড়ের অদূরে যমুনাগোড়া ও নেকড়া গ্রামের কাছে বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছিল। দিনভর জঙ্গলে তল্লাশি চললেও বাঘের হদিস পাননি বনকর্মীরা। ওই জঙ্গলে বাঘকে আটকে রাখতে রাহামদা থেকে কেন্দাপাড়া পর্যন্ত কম-বেশি চার কিলোমিটার জুড়ে জাল লাগানো হয়। তবে রাতের দিকে বনকর্তারা খবর পান, নেকড়ার দিক থেকে বান্দোয়ান-রানিবাঁধ সড়ক পার হয়ে বাঘটি মানবাজার ২ ব্লকের হাতিরামগোড়ার দিকে গিয়েছে। ওই রাস্তা ধরে মোটরবাইকে গ্রামে ফেরার সময়ে জানিঝোর গ্রামের এক বাসিন্দা বাঘটিকে রাস্তা পেরোতে দেখেন বলেও দাবি।

বাঘ ঢোকার খবর পেয়ে এলাকার গ্রামগুলিতে রাতেই সতর্কবার্তা প্রচার শুরু হয়। ওই এলাকার জয়পুর গ্রামে মকর সংক্রান্তির মেলা চলছিল। মেলাতেও চলে প্রচার। যদিও হাতিরামগোড়া ও লাগোয়া জামিরা জঙ্গলে বাঘের খোঁজ পাননি বনকর্মীরা। অভিযানে ছিলেন মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) ও ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) পূরবী মাহাতোও। এক বনকর্মীর কথায়, “রাস্তার ও পারে বান্দোয়ানের দিকে ঘন জঙ্গল থাকলেও এ দিকে জনপদ বেশি রয়েছে। লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়লে বিপত্তির আশঙ্কা রয়েছে।”

তল্লাশির মাঝে রাত প্রায় ১২টা নাগাদ বোরো থেকে বিক্রমডির রাস্তায় একটি টহলদারি গাড়ির নজরে পড়ে বাঘটি রাস্তা পার হচ্ছে। বাঘের অভিমুখ নেকড়ার দিকে থাকায় বনকর্মীরা নিশ্চিত হন যে, বাঘটি হয়তো ফের বান্দোয়ানের জঙ্গলে ফিরছে। শনিবার ভোরে ফের বাঘের খোঁজে তল্লাশি চলার মাঝে ফাঁদ ক্যামেরায় বাঘের ছবি ধরা পড়ার বিষয়টি নজরে আসে বনকর্মীদের।

বাঘের সন্ধানে এ দিন বিকেলে ভাড়ারিয়া পাহাড়কে ঘিরে চারটি দলে ভাগ হয়ে শুরু হয় অভিযান। দলে হুলাপার্টি, বনকর্মী ও ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ায় দক্ষ গানারের সঙ্গে ছিলেন গ্রামের বাসিন্দারাও। বিকেল ৩টে থেকে প্রায় ৪টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত অভিযান চলে। যদিও বাঘের দেখা মেলেনি। তবে পাহড়ের এক পাশে পায়ের ছাপ দেখতে পায় একটি দল। অভিযানে থাকা এক কর্মীর কথায়, “ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়েই বাঘকে বাগে আনতে হবে। অন্য পথ নেই। তার জন্য বাঘের কাছাকাছি যাওয়া দরকার।” বাঘের নাগাল পেতে এ দিন জঙ্গলে ‘ইনফ্রারেড ড্রোন ক্যামেরা’ও ওড়ানো হয়। ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) বলেন, “এত দিনে বাঘের ছবি পাওয়া গেল। এ বার বাঘকে ধরতে হবে। দেখি কত দিনে বাঘের নাগাল মেলে।” এ দিনও জ্যান্ত ছাগলের টোপ দিয়ে পাঁচটি খাঁচা পাতা হয়েছে। খাঁচার চারপাশে ছড়ানো হয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে আনা বাঘিনির মূত্র।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tiger Banduan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy