Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সাত দিনেই গ্রাম পাল্টেছে কলেজ

নর্দমার দুর্গন্ধ আর আগাছার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ওঁরা। তার পরেও তা পরিস্কার করার দায়িত্ব নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। গ্রামের এই পরিচিত দৃশ্যটাই বদলে দিয়েছে অন্তরা, জাকিররা। ‘জাতীয় সেবা প্রকল্পে’ সাত দিনে সব কিছু সাফাই করে নানুরের কড্ডা গ্রামের চেহারাটাই আমূলে বদলে দিয়েছেন স্থানীয় খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস মহাবিদ্যালয়ের ওই ছাত্রছাত্রীরা।

গ্রাম সাফাইয়ে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

গ্রাম সাফাইয়ে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০২:০১
Share: Save:

নর্দমার দুর্গন্ধ আর আগাছার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ওঁরা। তার পরেও তা পরিস্কার করার দায়িত্ব নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি।

গ্রামের এই পরিচিত দৃশ্যটাই বদলে দিয়েছে অন্তরা, জাকিররা। ‘জাতীয় সেবা প্রকল্পে’ সাত দিনে সব কিছু সাফাই করে নানুরের কড্ডা গ্রামের চেহারাটাই আমূলে বদলে দিয়েছেন স্থানীয় খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস মহাবিদ্যালয়ের ওই ছাত্রছাত্রীরা। আর তার পরেই ভুল ভেঙেছে সেখানকার বাসিন্দাদের। ভবিষ্যতে গ্রামের পুকুর, নালা, আগাছা পরিস্কারে নিজেরাই এগিয়ে আসবেন বলে ঠিক করেছেন লক্ষণ সূত্রধর, রুনু লোহাররা।

গ্রামের জন্য কিছু করার ক্ষেত্রে এগিয়ে না আসার চেনা ছবিটাই বদলে দিয়েছেন খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস মহাবিদ্যালয়ের ১০৫ জন পড়ুয়া। সোমবারই ছিল ওই গ্রামে তাঁদের ‘জাতীয় সেবা প্রকল্প’ কর্মকাণ্ডের শেষ দিন। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে তাই কার্যত গোটা গ্রামই ভেঙে পড়েছিল। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে তাঁদের সামনে তুলে ধরেন, গ্রাম পরিস্কার রাখার গুরুত্ব। নিছক গালভরা বুলি কপচানো নয়, গত সাত দিন ধরে তাঁরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফাওড়া-কোদাল ধরে পরিস্কার করেছেন নর্দমা, টিউবওয়েলের চারপাশ। এমনকী, গামছা পরে পুকুরে নেমে পরিস্কার করেছেন আগাছাও। আর বিকেলে গ্রামবাসীদের জড়ো করে বুঝিয়েছেন, নির্মল পরিবেশের উপকারিতা। একদা হাত গুটিয়ে থাকা বাসিন্দারাও তাতে সামিল হয়েছেন।

অবশ্য প্রথম কয়েক দিন গ্রামবাসীরা দূর থেকে মজা দেখার মতোই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভেবেছিলেন হয়তো লোক দেখানোর মতো কোনও রাজনৈতিক ফিকির রয়েছে। কিন্তু, সেই ধারণা বদলে দিয়েছেন পড়ুয়ারাই। ধীরেন মেটে, রুনু লোহাররা বলেন, “ভেবেছিলাম হয়তো ওঁদের কোনও বিশেষ মতলব রয়েছে। কিন্তু, অচিরেই ওঁদের কাজ দেখে আর কথা শুনে সেই ভুল ভেঙেছে।” আবার লক্ষণ সূত্রধর, তৃষ্ণা মণ্ডলরা জানাচ্ছেন, পড়ুয়ারা তাঁদের চিন্তাধারাটাই বদলে দিয়েছেন। “আগে আমরা ভাবতাম অন্যরা মাথা না ঘামালে আমাদেরই বা কিসের গরজ! এখন বুঝেছি, এলাকা দূষিত হলে সবার ক্ষতি। তাই ভবিষ্যতে সকলে মিলে পালা করে পরিস্কারের দায়িত্ব নেব।” বলছেন কড্ডাবাসীরা। একসঙ্গে কাজ করলে সব বাধা পেরনো যায়, পড়ুয়াদের থেকে এই পাঠই নিয়েছেন তাঁঁরা।

ওই কর্মকাণ্ডে হাজির ছিলেন স্থানীয় নওয়ানগর-কড্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান মনিজা বেগম। নিজেদের কাজ নিজেরা করার ক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের উদ্বুদ্ধ করার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তিনি। যাঁরা ওই কাজে নিজেদের উজার করে দিয়েছিল, সেই পড়ুয়াদের মধ্যে মহম্মদ মহবুদ্দিন, জাকির হোসেন, অন্তরা মণ্ডল, ঝিলিক খাতুনরা অবশ্য বলছেন, “প্রশংসার জন্য নয়, গ্রামবাসীদের আমরা অনুপ্রাণিত করতে পেরেছি বলেই ভাল লাগছে।” ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই শিক্ষক আতাউর রহমান এবং ইন্দ্রজিত্‌ মণ্ডলরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে প্রতি বছরই ওই প্রকল্পে এলাকার একটি করে প্রত্যন্ত গ্রামকে বেছে নিয়ে এই কাজ করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ নুরশাদ আলি বলেন, “বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষেরা যখন জানান, ‘স্যার শিবিরের পর থেকে আমাদের ছবিটা বদলে গিয়েছে’, তখন মনে হয় আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE