Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মামলার প্রস্তুতি ছাত্রীর বাবার

আরটিআই করিয়ে মিলল সাদা খাতা

সোমবার বর্ধমানে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের জোনাল অফিসে ডেকে পাঠিয়ে যে খাতা দেওয়া হয়, তাতে সত্যিই মাথা ঠিক রাখা দায়। পরিবারের দাবি, নিজেদের মান বাঁচাতে উত্তরপত্র বদলে দিতে হয়েছে কাউন্সিলকে।

ক্ষোভ: আমিনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ: আমিনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

টেস্টে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর পেলেও হতবাক করেছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। তিনটি বিষয়েই যে শূন্য! একটিতে মাত্র এক। রিভিউ করিয়েও ফল বাড়েনি। প্রতিকার পেতে বাধ্য হয়েই আরটিআই করিয়েছিল সিউড়ি ইটাগাড়িয়া স্কুলের ছাত্রী আমিনা খাতুন। কিন্তু, সম্প্রতি সেই ফল জানার পরে আমিনার যন্ত্রণা, ক্ষোভ বরং বেড়ে গিয়েছে।

সিউড়ি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরপাড়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রীর কথায়, ‘‘আরটিআই করে নম্বর তো বাড়েইনি। উল্টে প্রাপ্ত খাতাগুলির প্রতিলিপির মধ্যে বাংলা ছাড়া সব ক’টি খাতার উত্তরপত্র একেবারে ফাঁকা।’’ আরও একটি গুরুতর অভিযোগ করেছে আমিনা। তার কথায়, ‘‘যে ফাঁকা খাতা আমায় দেওয়া হয়েছে, তার নাম, রোল নম্বরের হাতের লেখাটুকুও আমার নয়।’’ এই ‘প্রতারণার’ বিরুদ্ধে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছাত্রীর বাবা আহাসিন আলি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সিউড়ির ফকিরপাড়ায় বসবাস করেন সর্বশিক্ষা মিশনে কর্মরত আহাসিন। বড় মেয়ে আমিনা পড়ে ইটাগড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, বাংলায় ৬৩, সংস্কৃতে ১, বাকি তিনটি বিষয় ইংরাজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান— সব ক’টিতেই শূন্য পয়েছে আমিনা। তারপর থেকেই ভেঙে পড়েছে ছাত্রীটি। বাবা আহাসিন, মা হাসিনারা বলছেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় যে মেয়ে ২৪৭ নম্বর পেল, সে কী করে বোর্ডের পরীক্ষায় ৬৪ পায়? তা-ও তিনটি বিষয়ে শূন্য?’’

আরটিআইয়ের ফল জেনে তাঁরা বলছেন, ‘‘এত দিন নিশ্চিত ছিলাম, কোনও কারণে হয়তো ভুল রেজাল্ট এসেছে। এখন তো মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ স্কুল সূত্রের খবর, আমিনা টেস্টে বাংলায় ৫৮, ইংরেজিতে ৬৯, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৫৩, ইতিহাস ৩৫, সংস্কৃতে ৩২ নম্বর পায়। কিন্তু, বোর্ডের পরীক্ষার ফল জেনে আমিনার বাবাই মনমরা মেয়েকে রিভিউ করাতে বলেন। এরপর প্রতিটি বিষয়ে ৬০ টাকা করে জমা দিয়ে অনলাইন রিভিউ করানো হয়। কিন্তু, রিভিউয়ের ফল আসে ‘নো চেঞ্জ’ বলে। তারপর প্রতি বিষয়ে ৫০০ টাকা করে ফি দিয়ে আরটিআই করানো হয়।

সোমবার বর্ধমানে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের জোনাল অফিসে ডেকে পাঠিয়ে যে খাতা দেওয়া হয়, তাতে সত্যিই মাথা ঠিক রাখা দায়। পরিবারের দাবি, নিজেদের মান বাঁচাতে উত্তরপত্র বদলে দিতে হয়েছে কাউন্সিলকে। প্রতিবাদ করলে জোনাল কার্যালয়ে মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ।

আমিনার স্কুলের প্রধান শিক্ষক একারামূল হক বলছেন, ‘‘টেস্টে ওই ছাত্রী বাংলা, ইংরাজি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভাল নম্বর পেয়েছিল। প্রত্যাশিত নম্বর পায়নি কেবল ইতিহাস ও সংস্কৃতে। সেই ছাত্রী সাদা খাতা জমা দিয়ে শূন্য পাবে এটা আমাদেরও বিশ্বাস হচ্ছে না।’’ টাকা পয়সা জোগাড় করে সামনের সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন আমিনার বাবা। আহাসিন আলির কথায়, ‘‘মেয়ের সঙ্গে এই অন্যায় সহ্য করব না।’’

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস অবশ্য বলছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ তো জানানো হয়নি। ওরা তো আমাদের কাছে আসবে। তবে তো তদন্ত করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE