Advertisement
E-Paper

‘স্যার, সেতু করে দিন’

আপনার মতো অফিসার হতে গেলে কীভাবে প্রস্তুতি নেব আমরা?’শুক্রবার রাত ৯টা।খয়রাশোলের ছোড়া গ্রামের নাট্যশালার মঞ্চে তখন হাজির জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। আর তাঁর দিকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন গ্রামেরই সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রী সমাপ্তি ঘোষ।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৩
গ্রামের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। —নিজস্ব চিত্র

গ্রামের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। —নিজস্ব চিত্র

‘আপনার মতো অফিসার হতে গেলে কীভাবে প্রস্তুতি নেব আমরা?’

শুক্রবার রাত ৯টা।

খয়রাশোলের ছোড়া গ্রামের নাট্যশালার মঞ্চে তখন হাজির জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। আর তাঁর দিকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন গ্রামেরই সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রী সমাপ্তি ঘোষ।

পরামর্শ দিতে দেরি করেননি জেলাশাসক। সমাপ্তির উদ্দেশে বলে উঠলেন, ‘‘সব চেয়ে জরুরি হল, কী হতে চাও— তা প্রথমে ঠিক করা। সেই অনুযায়ী কঠোর পরিশ্রম করলে লক্ষ্যে পৌঁছনো অসম্ভব নয়। আমিও তোমাদের মতোই গ্রাম থেকে উঠে এসেছি। অসুবিধা হলে সিউড়ি এসো।’’ এর পরে জেলাশাসকের দিকে একে একে নানা প্রশ্ন ধেয়ে এল নিবেদিতা মণ্ডল, মন্দিরা ঘোষ, সুদেবী মণ্ডলদের কাছ থেকেও। পড়ুয়াদের প্রতিটি প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন জেলাশাসক। এই সুযোগেরই যেন অপেক্ষা করছিলেন গ্রামের পড়ুয়ারা। এ বার আর প্রশ্ন নয়, সমবেত ভাবে একটিই দাবি তুললেন সমাপ্তিরা— গ্রামের গা দিয়ে বয়ে যাওয়া শাল নদীর উপর সেতু চাই!

‘‘স্যার, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল-পঞ্চায়েত সবই নদীর ওপাড়ে। বর্ষায় খুব কষ্ট হয় আমাদের। নদীর উপরে কি একটা সেতু করে দেওয়া যায় না?’’—এক যোগে পড়ুয়াদের আবেদন উড়ে এল জেলাশাসকের দিকে। সমর্থন করলেন গ্রামবাসীও। সব দেখে খুনে পড়ুয়াদের ফেলে দিতে পারেননি তিনি। জেলাপরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে আলোচনা করে সাত দিনের মধ্যে গ্রামে ইঞ্জিনিয়রদের পাঠানোর আশ্বাস দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হাততালি দিয়ে উঠল সমবেত জনতা।

ঘটনা হল, শুক্রবার রাতে ওই গ্রামে ঢোকার সময় নদীর উপর দিয়ে আসার সময় কষ্টের একটা আভাস জেলাশাসক নিজেও পেয়েছিলেন। নদীর বালিতে আটকে গিয়েছিল তাঁর এসইউভি। গ্রামের বাসিন্দারাই সেই গাড়িটি ঠেলে তুলে দেন।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার গড়ে নির্মল গ্রাম হওয়ার লক্ষ্যে একশো শতাংশ এগিয়ে রয়েছে এই ছোড়া গ্রাম। সেখানেই সচেতনতা কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা নিজে খতিয়ে দেখতে রাতে গ্রামে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের ওই শীর্ষ কর্তা। সঙ্গী ছিলেন জেলা পরিষদের ডেপুটি সেক্রেটারি কৌশিক সিংহ, খয়রাশোলের বিডিও তারকনাথ চন্দ্র, যুগ্ম বিডিও অভিষেক মিশ্র। আধিকারিকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিল গ্রামও। ক্যুইজ, শৌচাগার ব্যবহারের উপকারিতা বিষয়ক নাটক, গান দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানের পরে জেলশাসক চেয়েছিলেন গ্রামের পড়ুয়াদের সঙ্গে এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তা বলতে। তাঁদের সমস্যার কথা জানাই ছিল মূল লক্ষ্য। জেলাশাসকের সেই ইচ্ছেই যে এমন সুযোগ এনে দেবে, তা কে জানত!

স্বভাবতই খুশি পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসী, সকলেই। গ্রামবাসী উজ্জ্বল ঘোষ, শুক্লা চক্রবর্তীরা বলছেন, ‘‘গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের বাস। পঞ্চায়েত, ব্লক, স্কুল, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র সবই যে নদীর ওপাড়ে। প্রতি বর্ষায় দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। নদীতে জল থাকলে অন্তত পনেরো কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়।’’ তাই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের খাতিরে দীর্ঘ দিন ধরেই খয়রাশোলের রূপসপুর গ্রাম পঞ্চয়েতের অন্তর্গত এই গ্রামের বাসিন্দারা শাল নদীর উপরে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা সন্ধ্যা ঘোষ, মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলদের ক্ষোভ, ‘‘এ ব্যাপারে ব্লক ও জেলা প্রশাসনে আবেদন করে করে ক্লান্ত। আগেও প্রতিশ্রতি মিলেছে। কিন্তু কবে হবে সেতু, তার স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।’’ এ বার খোদ জেলাশাসকের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে ভরসা পাচ্ছেন প্রত্যেকেই।

গ্রামবাসীর দাবি যে ন্যায্য, তা মানছেন জেলাশাসক নিজেও। তিনি বলছেন, ‘‘সেতু হলে চোখের সামনে উন্নয়ন দেখা যাবে। সেতু যাতে হয়, আমি অবশ্যই সেটা দেখব। কিন্তু তার আগেই নিজেদের বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার গড়ে যে মানবিক উন্নয়ন ওঁরা ঘাটিয়েছেন, সেটা আরও বড়।’’ গ্রামের পড়ুয়াদের সচেতনতা দেখেও নিজের মুগ্ধতা গোপন করেননি তিনি।

DM Bridge Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy