Advertisement
E-Paper

জেলার আট প্রাথমিকে পাঠ শুরু অলচিকিতে

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বীরভূম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই অনুমোদন মিলেছে। জেলার আদিবাসী প্রধান এলাকার স্কুলগুলিতে মাতৃভাষায় শিক্ষা পাক আদিবাসী শিশুরা, পড়ানো হোক অলচিকি লিপিতে— এটা চেয়েছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৬

জঙ্গলমহলের আদিবাসী প্রধান এলাকা, যেখানে সাঁওতালি সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি সেখানে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল আগেই। এ বার সেই তালিকায় জুড়ে গেল বীরভূমও। জানুয়ারি মাসের প্রথম ভাগে জেলার আটটি নির্বাচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলির প্রি-প্রাইমারি ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য অলচিকি লিপিতে ছাপা বই পৌঁছে গিয়েছে। পড়ানো শুরু হয়েছে।

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বীরভূম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই অনুমোদন মিলেছে। জেলার আদিবাসী প্রধান এলাকার স্কুলগুলিতে মাতৃভাষায় শিক্ষা পাক আদিবাসী শিশুরা, পড়ানো হোক অলচিকি লিপিতে— এটা চেয়েছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) সঙ্ঘমিত্র মাঁকুড় বলছেন, ‘‘আদিবাসী প্রধান এলাকায় থাকা কোন কোন স্কুলে তাঁদের সন্তানদের সাঁওতালি মাধ্যমে পড়াতে চান অভিভাবকেরা, বা কোথায় অলচিকি লিপিতে পড়ানোর জন্য শিক্ষক সহ অন্য পরিকাঠানো রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলাশাসক। সেই তথ্য জেলা প্রশাসনকে পাঠানো হয়।’’

প্রশাসন জানাচ্ছে, যাচাই করার পরে যে স্কুলগুলির নাম উঠে এসেছিল তার মধ্যে প্রথম দফায় আটটি স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ানোর অনুমোদন মেলে। সেই তালিকায় রয়েছে মহম্মদবাজারের তিনটি স্কুল, সাঁইথিয়ার দুটি, ইলামবাজারের দু’টি ও খয়রাশোলের একটি স্কুল। সেখানে পড়ুয়াদের ৯৫ শতাংশের বেশি পড়ুয়া আদিবাসী।

কেন এমন উদ্যোগ? জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলছেন, ‘‘জেলায় এসে আদিবাসী প্রধান এলাকায় গিয়ে দেখেছি, মাতৃভাষা ছেড়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলে এসে আদিবাসী পড়ুয়াদের বুঝতে সমস্যা হয়। তা ছাড়া স্থানীয় দাবিও ছিল।’’

জঙ্গলমহলে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন নিয়ে বাম আমল থেকেই বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১১ সালে এ রাজ্যে সাঁওতালিকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলমহলের আদিবাসী প্রধান এলাকাগুলিতে সাঁওতালি সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি। তার পরেও সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ আছে। যার ফলে সাঁওতালি পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা বাড়ছে বলেও দাবি করে আসছে আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলি।

তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগে জঙ্গলমহলের বাছাই করা কিছু প্রাথমিক স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল। রাজ্যে পালা-বদলের পরে জঙ্গলমহলের আদিবাসী প্রধান এলাকার কয়েক’শো বাংলা মাধ্যম স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যম চালু করার উদ্যোগ হয়। জঙ্গলমহলের অন্যত্র সেটা চালু হলেও বীরভূমে অলচিকি লিপিতে পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল না। কিছু দিন আগে জেলাশাসকের কার্যালয়ে আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সেখানেও মূল দাবি ছিল, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর সর্বত্র সাঁওতালি মাধ্যম ও অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের।

এত দিন যে জেলার একটি স্কুলেও সেই সুবিধা ছিল না, সেখানে প্রথম দফায় আটটি স্কুলে এই ব্যবস্থা চালু করাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে আদিবাসী সংগঠন। সংগঠনের নেতা নিত্যানন্দ হেমব্রম বলছেন, ‘‘সাধুবাদ জানাই এই উদ্যোগকে।’’ একই কথা বলছেন আদিবাসী গাঁওতার শিক্ষক নেতা সুনীল সরেনও।

মহম্মদবাজারের উসকা সাঁওতাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পিন্টু মুর্মু, মহম্মদবাজারের বা সাঁইথিয়া বাংড়া আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা (অলচিকি লিপি) দেবিকা চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ সন্দেহ নেই। আমাদের স্কুলগুলিতে যে সব পড়ুয়া রয়েছে, তাদের একটা বড় অংশ প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। স্কুলে এসে ওদের বাংলা বুঝতে সমস্যা ছিল। সেটা দূর হবে।’’

অনুমোদন প্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকদের কথায়, ‘‘অলচিকি লিপিতে প্রাথমিকে পঠনপাঠন শুরু হলেও আপার প্রাইমারি বা উচ্চ বিদ্যালয়ে সেই পরিকাঠামো গড়ে উঠেনি।’’ স্কুল শেষ করে পড়ুয়ারা যদি সমস্যায় পড়ে, তা নিয়েও ভাবিত অভিভাবকেরা। জেলাশাসক বলছেন, ‘‘উদ্বেগের কারণ নেই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, শিক্ষা দফতরের অনুমতিতে

প্রাথমিকে যখন সাঁওতালি মাধ্যমে পঠন শুরু হল, সেই পড়ুয়াদের কথা ভেবে আগামী দিনে রাজ্য শিক্ষা দফতর উচ্চ বিদ্যালয়েও সেই পরিকাঠামো গড়ে তুলবে।’’

Ol Chiki Language Primary School Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy