Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

চাপে দলবদল, দাবি বিজেপির

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, বিজেপির সংগঠন সেখানে তেমন মজবুত না থাকলেও শাসকদলের নেতাদের একাংশের ‘দুর্নীতি’, মানুষের পাশে না থাকার অভিযোগের পাশাপাশি মেরুকরণের হাওয়াতেও ভোট বেড়েছিল বিজেপির।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০০:০৯
Share: Save:

দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে কাউন্সিলরদের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন দেখেছে হালিশহর, কাঁচরাপাড়া। শুক্রবার তার পুনরাবৃত্তি হল সিউড়ি ২ ব্লকের কোমা পঞ্চায়েতে।

ঘাসফুল থেকে পদ্ম, ফের সবুজে ফেরার পিছনে ভয় দেখিয়ে দলে টানার অভিযোগও এক রয়েছে।

দিন পাঁচেক আগে যখন কোমা পঞ্চায়েতের পাঁচ তৃণমূল সদস্য বিজেপিতে যোগ দেন, তখন সন্ত্রাসের অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের দিকে তুলেছিল শাসকদল। শুক্রবার তাঁদের চার জন ফের ঘাসফুল শিবিরে ফেরত আসার পরে শাসকদলের বিরুদ্ধে চাপ ও সন্ত্রাসের পাল্টা অভিযোগ তুলল বিজেপি।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, চাপ বা ভয় দেখানোর অভিযোগ সবটাই হয়তো মিথ্যা নয়। তবে তার বাইরেও কিছু কারণ থাকতে পারে। সে জন্যেই দলবদল করেও দোলাচলে থাকছেন নির্বাচিত সদস্যরা। কাজটা কি ঠিক হল, সেই প্রশ্নও তাঁদের মনে ঘোরাফেরা করতে পারে।

কোমার ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটেছে বলে মত অনেকের। তাঁদের ব্যাখ্যা, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরঙ্কুশ ভাবে সিউড়ি ২ ব্লকের ‘নিয়ন্ত্রণ’ শাসকদলের হাতেই ছিল। দমদমা, পুরন্দরপুর, কেন্দুয়া, কোমা, বনশঙ্কা, অবিনাশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্তও বিরোধী বলে কিছু ছিল না। ৫২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থীও দিতে পারেনি বিরোধীরা। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে পুরন্দরপুর ও কোমা এলাকায় ‘লিড’ দেয় বিজেপি। কোমায় গেরুয়া শিবিরের ‘লিড’ ছিল সব চেয়ে বেশি।

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, বিজেপির সংগঠন সেখানে তেমন মজবুত না থাকলেও শাসকদলের নেতাদের একাংশের ‘দুর্নীতি’, মানুষের পাশে না থাকার অভিযোগের পাশাপাশি মেরুকরণের হাওয়াতেও ভোট বেড়েছিল বিজেপির। তবে অন্য এলাকার মতো কোমায় শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকট না থাকলেও, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসতেই এলাকাবাসীর অনেকে বিজেপির ছত্রছায়ায় আসেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচ পঞ্চায়েত সদস্যের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পিছনে বিরোধী শক্তিবৃদ্ধির অঙ্কও জড়িয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের মত।

কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকতে না পারার পিছনে ‘চাপের’ পাশাপাশি ভিন্ন সমীকরণ কাজ করেছে বলেও রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোমা পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্না বাগদির বাপের বাড়ি সিউড়ি ১ ব্লকে। কয়েক দিন সেখানেই ছিলেন তিনি। কোনও চাপের কথা উড়িয়ে তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, দলবদল কেন করলেন, তা নিয়ে তাঁকে বোঝানো হয়। নিজেদের শক্তি-প্রদর্শনে এলাকায় মিছিল করে শাসক। যোগাযোগ করা হয় সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অন্য সদস্যদের সঙ্গেও। ঝর্ণাদেবী অবশ্য এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, দলে ফেরত আসার অন্য কারণও রয়েছে। তা হল আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটা। রাজ্য জুড়ে জনমানসে ক্ষোভ, নেতাদের আক্রান্ত হওয়া, কাটমানি বিতর্ক নিয়ে পিছু হটেনি শাসকদল। শাসকদলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘বিজেপির আদর্শে নয়, দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের প্রতি ক্ষোভের জন্যই মুখ ফিরিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সরকার পাশে রয়েছে, সেই বিশ্বাস ফেরত পেতে শুরু করেছে মানুষ। প্রত্যাবর্তনের অন্যতম কারণ সেটাও।’’

তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘যে বা যাঁরা দলে থেকে দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের রেয়াত নয়— এটাই দলের সিদ্ধান্ত।’’ তিনি জানান, প্রধান, উপপ্রধান সহ গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের সদস্য ও নেতাদের ধরলে জেলায় সেই সংখ্যা প্রায় হাজারচারেক। দেখা হচ্ছে, দুর্নীতির অভিযোগ তাঁদের মধ্যে কত জনের বিরুদ্ধে উঠছে, কোথায় উঠছে। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন শীর্ষনেতৃত্ব।’’

যদিও কোমা-প্রসঙ্গে বিজেপির এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘দু-এক জন চাপে পড়ে ফিরে গেলে কী হবে, যে পচন রোগ তৃণমূলে ধরেছে তাতে কোনও ওষুধই কাজ করবে না। কয়েক মাস অপেক্ষা করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE